পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নদীতে চলছে না লঞ্চ-স্টিমার। ইঞ্জিনের ভট ভট বা ভোঁ ভোঁ কোনো শব্দ নেই। নদীর তীরের কলকারখানাও বন্ধ। পানিতে মিশছে না কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য। শান্ত নদীর বুকে শুধু মৃদু ঢেউয়ের কলকল ধ্বনি। এমন রূপ এখন ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীর।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশে সাধারণ ছুটির নামে চলছে অঘোষিত লকডাউন। জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ রয়েছে। এতে রাজধানীতে আগের চেয়ে বায়ু দূষণ যেমন কমেছে, সেই সাথে কমেছে নদী দূষণের মাত্রাও। এর ফলে বুড়িগঙ্গা নদী ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর সকল ছোট বড় কলকারখানা বন্ধ থাকায় বুড়িগঙ্গার পানিতে দূষিত বর্জ্য যাচ্ছে না। এ অবস্থা থাকলে বর্ষায় বুড়িগঙ্গা তার হারানো যৌবন ফিরে পেতে পারে। তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য রাখতে হলে বুড়িগঙ্গাকে এ রকম করে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। তার তার জন্য অবশ্যই সকল কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার পরিবেশসম্মত করতে হবে। এই লকডাউন থেকে এ বিষয়টি অবশ্যই উপলদ্ধি করতে হবে।
পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, দেশের নদীগুলোকে আমরা গলা টিপে মেরে ফেলছি। এই লকডাউনে এটা প্রমাণ হয়েছে যে কি পরিমাণ শিল্প বর্জ্য প্রতিদিন নদীতে মিশে নদীর জীবন কেড়ে নিচ্ছে। যদি নদী না বাঁচে তাহলে বিপন্ন হবে পরিবেশ, বিপন্ন হবে মানব জীবন। তাই ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই। আর তা করতে হলে সকল কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার অবশ্যই পরিবেশসম্মত আধুনিক করতে হবে।
বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকে দায়ী করা হতো। এই শিল্প সরিয়ে নেয়ার পরও বুড়িগঙ্গার দূষণ সেভাবে কমেনি। কারণ সদরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নদীর দুই পাশ থেকেই অনবরত ফেলা হচ্ছিল বিষাক্ত বর্জ্য। কলকারখানার বর্জ্যরে দূষণে বুড়িগঙ্গায় প্রাণের সঞ্চার হচ্ছিল না। কারখানা বর্জ্য ছাড়াও রাজধানীবাসীর পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালী বর্জ্যের দূষণেও ধুঁকছিল বুড়িগঙ্গা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী নদী দূষণের শতকরা ৮৮ ভাগ কারণ বর্জ্য। ট্যানারি স্থানান্তরিত হওয়ার পর এখনো প্রতিদিন শিল্প কারখানার ৩৫০০ ঘন মিটার এবং অন্যান্য থেকে ২৭০০ ঘনমিটার দূষিত তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় মেশে। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় নদীটি এসব দূষণ থেকে মুক্ত রয়েছে এবং ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।
প্রাণীবিজ্ঞানীদের মতে পানিতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য প্রতি লিটারে ৬ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন দরকার। আতিমাত্রার দূষণে বুড়িগঙ্গায় এর মাত্রা শূন্যে নেমে ছিল। ফলে বুড়িগঙ্গায় মাছ বা অন্য কোনো জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল না। তবে সম্প্রতি এক জরিপে বুড়িগঙ্গায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫ মিলি গ্রাম পাওয়া গেছে। এতে মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছি। ঢাকার ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরিত করা হলেও এখনো অনেক কলকারখানার বর্জ্য বুড়িগঙ্গাকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে। সদরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ছোট-বড় বিভিন্ন রকম কমপক্ষে তিন হাজার শিল্প কারখানা রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন ৩৫০০ ঘনলিটার বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশছে। এতে বুড়িগঙ্গা সেই আগের মতো মৃত থাকছে। এবার লকডাউনের ফলে কলকারখানা বন্ধ থাকায় নদীর দূষণ অনেক কমেছে। তাই নদী দূষণমুক্ত রাখতে হলে এসব কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার অবশ্যই পরিবেশসম্মত করতে হবে। তাহলে নদী তার প্রাণ ফিরে পাবে। তিনি বলেন, দূষণমুক্ত ছাড়াও নদীকে দখলমুক্তও করতে হবে।
বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে বলেছে নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই নদীকে বাঁচাতে হবে। আদালতের সেই নির্দেশের পরও এখনো নদী পুরোপুরি দখল ও দূষণমুক্ত হয়নি। সরকার বিভিন্ন সময় বুড়িগঙ্গা রক্ষায় প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও মাঝপথেই তা থেমে গেছে। কার্যকর সুফল আমরা পাইনি। ফলে প্রাণপ্রিয় বুড়িগঙ্গা মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ঢাকার জনগণকে বাঁচানোর স্বার্থে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করা খুবই জরুরি। এবার কলকারখানা বন্ধ থাকায় নদীর দূষণ কমেছে, নদীর প্রাণ ফিরে আসছে। তাই নদীকে রক্ষা করতে হলে শিল্প বর্জ্য বন্ধ করতে হবে। কলকারখানার বর্জ্য শোধনাগার অবশ্যই পরিবেশবান্ধব করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।