পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাড়ছে করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে সরকারি চালসহ পণ্যসামগ্রী চুরির ঘটনাও। করোনার এই ক্রান্তিকালে চাল চুরির ঘটনায় বিব্রত খোদ সরকারও। এ কারণে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কার্যক্রমের সামগ্রী এবং ত্রাণের চাল চুরির বিষয়ে সরকার এখন কঠোর অবস্থানে। ত্রাণ সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ৬৪ জন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনার পরপরই মামলা করছে, তদন্তে নামছে। তদুপরি চাল চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ত্বরিত বিচার এবং শাস্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আইনজ্ঞ এবং বিচার সংশ্লিষ্টরা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পদ্ধতিগত তদন্ত এবং বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতার বাস্তবতা থেকেই তাদের এ সংশয়।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগ শনাক্ত হয়। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। পরপরই শুরু হয় অঘোষিত ‘লকডাউন’। এর ফলে স্থবির হয়ে যায় সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা। কর্মহীন হয়ে পড়েন দেশের কয়েক কোটি মানুষ। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার নানা উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় ন্যায্য মূল্যে টিসিবি’র নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিতরণ, ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে দুস্থদের মাঝে পণ্য সামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল এবং সরাসরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ।
এসব বিতরণ প্রক্রিয়ায় সরকার নিয়োজিত ডিলার এবং জনপ্রতিনিধিদের ওপর নির্ভর করে। এর ফলে বিভিন্ন জেলায় চাল চুরির অভিযোগ ওঠে। জনপ্রতিনিধিদের ভিটা খুঁড়ে সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়। ডিলারের বাসায় খাটের নিচ থেকে টিসিবির সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। ভিজিডি কার্ড বিতরণে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। তবে অভিযোগের পরপরই ব্যবস্থা নিতে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। সরকার দলীয় বেশ কয়েকজনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে লঘু শাস্তি দেয়। চাল চুরির সঙ্গে জড়িত সরকারদলীয় ব্যক্তিদের দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারও করা হয়। জনপ্রতিনিধি, নিযুক্ত ডিলারদের ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী’ সংজ্ঞায় ফেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবারের তথ্য অনুযায়ী ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদের ৩ চেয়ারম্যানসহ ১২ জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা স্বরূপ দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্ন জেলায় ৭টি মামলা করেছে। আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও বলেছেন, এমন সময়ে চাল চুরির ঘটনা অবাক করছে। সরকার রীতিমত বিব্রত। তবে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কঠিন অবস্থান নিয়েছেন। তবে শুধুমাত্র বরখাস্তই কৃত অপরাধের যথোপযুক্ত শাস্তি নয় বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। প্রযোজ্য ধারায় মামলা করে সেই মামলা তদন্ত করা। তদন্ত প্রতিবেদন বিচারার্থে আদালতে দাখিল এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করাটাই যথোপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়া বলে মনে করেন তারা। আর সেটি করতে গেলে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় সময় সাপেক্ষ বিষয় বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে সাবেক সিনিয়র জেলা জজ মো. মাইদুল ইসলাম ‘ইনকিলাব’কে বলেন, দেশের আদালতগুলোতে এখন ৩৭ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন। সরকারি সামগ্রী চুরি এবং দুর্নীতির ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে দুদক মামলা করছে মূলত: ৩টি ধারায়। এগুলো হচ্ছে ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ড বিতরণে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় প্রয়োগ করা হচ্ছে ১৬১ ধারা। সরকারি সামগ্রী আত্মসাতের অভিযোগে দেয়া মামলায় প্রয়োগ হচ্ছে ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা। ধারাগুলোর শাস্তি ব্যাপক। ১০ বছর কারাদন্ড থেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারে এসব ধারায়।
জনপ্রতিনিধি, সরকার নিযুক্ত ডিলাররা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এসব ধারার আওতায় বিচারের আওতায় আসবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া। এসব ধারার মামলাগুলো তদন্ত পর্যায়েই কেটে যায় বছরের পর বছর।
যদিও ধরাও হয় যে, দুদক বিশেষ বিবেচনায় করোনা কালের সরকারি সামগ্রী চুরির ঘটনায় মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত গতিতেই সম্পন্ন করবে তথাপি দ্বিতীয় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় বিচারিক প্রক্রিয়া। মামলার আমলযোগ্যতা, চার্জ গঠন শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট করে শেষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। সহসাই এসব মামলার বিচার সম্পন্ন হয় না।
এছাড়া বিচারিক আদালতে দুদকের মামলার শাস্তির হার খুব একটা সুখকর নয়। ৮ থেকে ৯ শতাংশ মামলায় অপরাধীদের শাস্তি হয়। বাকি ৯২ শতাংশ মামলায়ই আসামিরা খালাস পেয়ে যান। এ ছাড়া পুরনো লাখো মামলার ভিড়ে চাপা পড়ে থাকে নতুন চুরি-ডাকাতির এসব মামলা। এসব বাস্তবতার কারণেই সহসাই চাল চোরদের বিচার হবে- এমনটি আশা করা যায় না।
এদিকে বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতার এ বাস্তবতার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, দুদক যেসব মামলার তদন্ত করছে সেটি দুদকের মামলার বিচারের মতোই হবে। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতাও রয়েছে। এ কারণে সহসাই চাল চোরদের বিচার হবে- এটি নিশ্চিত করে বলা যায় না।
তবে সরকার চাইলে একটি পন্থা অনুসরণ করতে পারে। সেটি হচ্ছে, বিদ্যমান সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের ২৪, ২৫ ও ২৬ ধারায় বিচারের প্রসঙ্গ রয়েছে। ২৫(১) ধারায় সরকারি আদেশ অমান্য করলে সর্বোচ্চ ৩ মাসের সাজা সম্বলিত একটি বিধান রয়েছে। যা মোবাইল কোর্ট কার্যকর করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাজার পরিমাণটা কম। আইনে উল্লিখিত উপদেষ্টা কমিটি সুপারিশ করে এখানে কঠোর কিছু ধারা যুক্ত করে নিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।