Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝুঁকিতে ৯০ হাজার বন্দি

প্রায় ৪ হাজার বন্দির তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করোনায় আক্রান্ত কারারক্ষী ২ মাস হাসপাতালে বন্দিদের ডিউটিতে ছিলেন : অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন)

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫১ পিএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কারাবন্দিদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। অনেক দেশে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে বাংলাদেশে মুক্তি দেয়ার বিষয়টি এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। যদিও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৪ হাজারের অধিক বন্দি মুক্তির বিষয়ে কাজ করছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যে মুক্তি দেয়া যেতে পারে এ ধরনের প্রায় ৪ হাজার বন্দির তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ৬৮টি কারাগারের প্রায় ৯০ হাজার বন্দি। ধারণ ক্ষমতার থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে। ফলে দেশের স্পর্শকাতর এই স্থানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ১৯ মার্চ ‘ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি কারাগারে, বন্দিদের নিয়ে শঙ্কা’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়। তারপর থেকেই নড়েচড়ে বসে কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি তালিকা তৈরি ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন কারারক্ষী করোনা আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে জিঞ্জিরা ২০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক সাজাপ্রাপ্ত আসামি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার বয়স (৬০) বছর। তিনি ডায়ালাইসিসের রোগী। গতকাল বুধবার ঢামেক হাসপাতালের ডিউটিরত কারারক্ষী শেখ কামাল হোসেন এ তথ্য জানান।
এ নিয়ে বন্দি ও সাধারন কারারক্ষীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, যে কারারক্ষী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি গত দুই মাসের অধিক সময় ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে অসুস্থ বন্দিদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এ জন্য কারাগারের অন্যান্য বন্দি ও কারারক্ষীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত মার্চ মাসে করোনা আতঙ্কে কলম্বিয়ার বিভিন্ন কারাগারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে ২৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৩ জন। একই সময়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কলকাতার দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে করোনাভাইরাস আতঙ্কে কারা কর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বন্দিরা। এ সংঘর্ষে একজন নিহত ও আরও কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছেন বলে দেশটি একটি গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের বিন্তার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে দেশের ৬৮টি কারাগার থেকে দ্রুত নিদিষ্ট সংখ্যক বন্দির মুক্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সূত্র বলছে, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে যারা ২০ বছর সাজাভোগ ইতিমধ্যে শেষ করছেন তাদের মুক্তি দিতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এমন একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল কারা অধিদফতর। সেই তালিকা ধরেই কারাবন্দিদের মুক্তি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। ওই তালিকায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ মোট ১৪২০ জনের নাম রয়েছে। তবে এই তালিকাটি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে করা হয়নি।
যদিও কারা অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে ডিসেম্বরে যে তালিকা তারা পাঠিয়েছে সরকার চাইলে সেই তালিকা থেকে বন্দিদের বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তি দিতে পারে। এর আগে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক হাজারের বেশি যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত বন্দি মুক্তি পেয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি থাকা বৃদ্ধ, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ এই পাঁচটি শ্রেণির এক হাজার বন্দিকে তখন মুক্তি দেয়া হয়েছিল।
কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন) কর্নেল আবরার হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে গতকাল জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে একটি প্রস্তাব ও তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, যাদের মামলা এখনও বিচারাধীন, জামিনযোগ্য অপরাধ হলে এদের জামিন দেয়া যায় কি না। জামিনযোগ্য ছোট-খাটো অপরাধে যারা কারাগারে রয়েছেন, এরকম প্রায় চার হাজার হাজতির নাম প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন বন্দিদের আলাদা করে রাখা হচ্ছে ১৪ দিন। স্বজনদের সাথে সাক্ষাতও বন্ধ করা হয়েছে। ভবিষ্যত ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে বিভাগীয় শহরের কারাগারগুলোতে কোয়ারেন্টাইন প্রস্তুত করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্দি, কারারক্ষী বা বন্দিদের স্বজনদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা সর্বোচ্চ সর্তকতার মধ্যে দেশের ৬৮টি কারাগারে কাজ করছি। যে কয়েদি ও কারারক্ষীর করোনা ধরে পড়েছে তারা কারাগার থেকে অনেক বাইরে ছিলেন। কারারক্ষীর গত দু’মাস যাবত ঢামেক হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দিদের ডিউটিতে ছিলেন। আর কয়েদি গত ৩০ মার্চ থেকে ঢামেকে চিকিৎসাধীন। এ জন্য আমরা খুব একটা চিন্তিত নই, তবে সর্তক রয়েছি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র জানায়, দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি কারাবন্দি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। স্থান সঙ্কলান না থাকায় একসাথে গাদাগাদি করে থাকতে হয় বন্দিদের। বিকল্প পথ না থাকায় করোনা মহামারীর মধ্যে কারাগারে ভাইরাস সংক্রমের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। কোন বন্দি করোনা আক্রান্ত হলে অতিদ্রুত তা কারাগারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্যই বন্দিদের ভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য পাঁচটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বসানো হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। তাছাড়া দেশের প্রতিটি কারাগারে বন্দিদের তাপমাত্রা মাপার জন্য দেয়া হয়েছে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে কোনো বন্দি তার সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে, সেই বন্দির বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে, তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাকে মুক্তি দিতে পারে। এ জন্য প্রেসিডেন্টের কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। দেশের সব কারাগার থেকে বন্দির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বন্দিদের বয়স, সাজার ধরন, মেয়াদ, শারীরিক অবস্থা এবং কারাগারে তারা কোনো অপরাধ করেছেন কি না, তা বিবেচনায় নিয়ে নাম চ‚ড়ান্ত করা হয়। সেই তালিকা খতিয়ে দেখার জন্য (ভেটিং) আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে কোনো সময় বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ