পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর শ্যামলীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে গত বুধবার চিকিৎসা নিতে যান এক বৃদ্ধ। ওই বৃদ্ধের কভিড-১৯-এর উপসর্গ থাকলেও তা গোপন করেন তিনি। সন্দেহ হওয়ায় ওই বৃদ্ধের নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয়। বৃদ্ধের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নমুনা সংগ্রহ করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। মঙ্গলবার জানা যায়, তাদের মধ্যে একজনের কভিড-১৯ পজিটিভ। ততক্ষণে ওই স্বাস্থ্যকর্মী চলে গেছেন তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফোন করে তাকে ডেকে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এর আগেই পরিবারের অন্য সদস্য এবং প্রতিবেশীদের অনেকের সংস্পর্শে এসেছেন ওই স্বাস্থ্যকর্মী।
এভাবে রোগীর কভিড-১৯-এর উপসর্গ আড়াল করে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতায় আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আগে যারা তাদের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন, ঝুঁকিতে পড়ছেন অন্য সেসব রোগীও। এ রোগীদের মাধ্যমে সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়ছে তাদের পরিবার ও সংস্পর্শে আসা অন্যরাও। এভাবেই উপসর্গ আড়াল করে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা পর্যায়ক্রমে হয়ে উঠছে সামাজিক সংক্রমণের উৎস।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৯ স্বাস্থ্যকর্মী এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। গত কয়েক দিনে তাদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন কয়েক শ' রোগী। অন্যান্যভাবে সংস্পর্শে এসেছে আরো কয়েকশ মানুষ। বিশেষ করে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, ওই সব ব্যক্তির এখন সংক্রমণ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে সরকার। ওই সব হাসপাতালে রোগটির সংক্রমণ প্রতিরোধ করার মতো পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এর বাইরে অন্যসব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে তেমন কোনো সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়নি। কারণ এসব হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা নেয়ারও কথা নয়। কিন্তু এর পরও অনেক রোগীই কভিড-১৯-এর উপসর্গ আড়াল করে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি আড়াল করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত সুরক্ষা উপকরণ ছাড়া এসব রোগীর সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হচ্ছেন। সংক্রমণের বিষয়টি বুঝে ওঠার আগেই আরো অনেক রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে তাদের। ফলে ওই সব রোগীও সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছেন।
অন্যদিকে রোগী ও তার স্বজনরা দায়ী করছেন কভিড-১৯ চিকিৎসার প্রক্রিয়াকে। সম্প্রতি উপসর্গ গোপন করে চিকিৎসা নেয়া এক রোগীর ছেলে জানান, তার বাবার জ্বর, সর্দির সঙ্গে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। একটা পর্যায়ে তাদের নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। এরপর তারা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতলে যান, কিন্তু সেখান থেকে তাদের আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন করে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে আসতে বলা হয়। বাড়ি ফিরে বেশ কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন তারা। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য কারণ জানাতে না পারায় হটলাইন নম্বর থেকে তাদের চিকিৎসার কোনো পরামর্শ না দিয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর মধ্যেই তার বাবার শ্বাসকষ্ট তীব্র হতে থাকে। দ্রুত তাকে আইসিইউতে নেয়ার জন্য উপসর্গ আড়াল করে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতলে নেয়া হয়। দুদিন পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বাবার কভিড-১৯-এর উপসর্গ রয়েছে বলে সেখান থেকে চিকিৎসা দেয়া বন্ধ করে দেয়।
এখন পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে দুই শতাধিক চিকিৎসার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে ১০২ জন নার্স কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের সেবা নিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন সাধারণ রোগীরাও। এমনকি শিশু হাসপাতালেও কভিড-১৯-এর উপসর্গ গোপন করা এক রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন একজন নার্স। তার নমুনা পরীক্ষার আগেই আরো অন্তত অর্ধশত রোগীর সেবা দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় ওই সব রোগীরও নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংক্রমণের ব্যাপকতা এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাপকভাবে হুমকির মুখে পতিত হবে বলে ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে সেবাদাতাদের কার্যকর সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সমানসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সমন্বয়ে তিনটি টিম করতে বলা হয়েছে। তবে ৫০ বছরের বেশি বয়সী চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ও গর্ভবতী অবস্থায় সেবাদাতাদের এ টিমের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক টিমের সদস্যরা টানা ১০ দিন চিকিৎসাসেবা দেয়ার পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে চলে যাবেন। এ সময় তারা হোটেলে অবস্থান করবেন। কোয়ারেন্টিন শেষে চাইলে তারা ছয়দিন পরিবারের সঙ্গে সময় দিয়ে ফের ডিউটিতে যুক্ত হবেন। এ সময় অন্য আরেকটি টিম টানা ১০ দিন কাজ করবে। এ প্রক্রিয়ায় সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের গাইডলাইন আছে। একইভাবে হাসপাতাল কীভাবে পরিচালিত হবে তারও গাইডলাইন আছে। গাইডলাইনগুলো লক্ষ করলে এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। আর এ বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তারও গাইডলাইন আছে। অর্থাৎ কতজন চিকিৎসক রিজার্ভ থাকবেন, কতজন ডিউটি করবেন, তা বলা আছে। অবশ্যই সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসকরা সম্মুখসারিতে আছেন। তাদের যথাযথ সুরক্ষিত থাকতে হবে। তা না হলে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।