বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গভীর রাতে শৃগালের গর্জন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দমকা হাওয়াসহ পোকামাকড়ের আক্রমণের ভয় ইত্যাদি কারণে সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারছেন না কলাপাড়ার চাকামইয়া-শারীকখালী বর্ডারে আশ্রয় নেয়া শিরিনা আক্তার। প্রানঘাতী করোনার ছোবলে ধরাশায়ী যখন সারা বিশ্ব, তখন করোনার ইস্যু নিয়ে’ই চার মাস বয়সী এক কণ্যা শিশুর সাথে ঘটে গেলো জঘন্য এক নির্মম ঘটনা। গার্মেন্টস কর্মী মায়ের কোলে চড়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরায় ইউপি সদস্যের চাপিয়ে দেয়া অমানবিক সিন্ধান্তে নিজ পিত্রালয়ে যায়গা হয়নি শিশুটির।
গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার পর কাল বৈশাখি ঝড়ের মধ্যেই রাত কাটাতে হয়েছে নির্জন নদীর ধারে খোলা আকাশের নিচে একটি পরিত্যাক্ত জায়গায়। মশার কামড় আর পোকা মাকড়ের উপদ্রবে গাছের নিচে আর থাকতে চাইছে না ফুট ফুটে কণ্যা শিশু আফসানা। পাশ্ববর্তী তালতলী উপজেলার শারিকখালী ইউপির চাউলাপাড়া গ্রামে গত ১০ এপ্রিল ভোর রাতে নারায়নগঞ্জ ফতুল্লা থেকে স্বামী মামুনকে নিয়ে নিজ শশুরালয় এসে পৌছান গার্মেন্টস কর্মী শিরিনা আক্তার (২৫)। বাড়িতে পৌছানোর সাথে সাথে ওই ঘরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম আকন। শিশুটির কথা জানিয়ে শাশুরির হাতে রান্না করা গরম ভাত খেয়ে’ই বেড়িয়ে যাবেন বলেও অনেক অনুরোধ করা হলেও মন গলেনি পাষন্ড মেম্বারের। এর পরে চৌকিদারের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে দিয়ে গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয় পাশের কলাপাড়া উপজেলার শেষ সীমানায় চাকামইয়া ইউপির কাঁঠালপাড়া গ্রামের নদীর ধারে একটি পরিত্যাক্ত স্থানে। সেখানেই খোলা আকাশের নিচে শিুশুটিকে কোলে নিয়ে দিন শেষে এক রাত্রী যাপনের পর শাশুরিকে কষ্টের কথা ফোনে জানালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন শিশুটির দাদী। নদীর ধারে একটি গাছের নিচে তালপাতা কেটে কোনমতে একটু থাকার ব্যবস্থা করেন বৃদ্ধা শাশুরি। পরে শশুরের মাধ্যমে ওই থাকার যায়গায় মাটিতে বিছানোর জন্য একটি মাদুর ও রান্না করে খেতে হাড়ি পাতিলের ব্যবস্থা করেন শিরিনা। এখবর ওই মেম্বরের কানে পৌছালে গৃহবধুর শশুরের ঘরে ঠায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে গ্রামের বাহিরে পাঠানোর হুমকি প্রদান করেন মেম্বার নিজাম। কান্নাজড়িত কন্ঠে গত দশদিন ধরে মা মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া এমন অমানবিক ঘটনার বর্ননা দেন শিরিনা আক্তার। এসময় তিনি আরো বলেন, তার স্বামী মেম্বরের ভয়ে জেলেদের সাথে একটি মাছের ট্রলারে রাত্রীযাপন করছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিশুটির দাদী জানান, আমি আমার পুত্রবধু ও নাতনির সাথে এখানে থাকছি বলে আমাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছে মেম্বর নিজাম। শিরিনার অভিযোগ তার কোন ধরনের করোনা উপসর্গ না থাকা সত্বেও তাকে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে শুধু প্রভাশালী মেম্বরের ভয়ে। কেন তাকে নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়নি সরকারের কাছে এমন প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। এব্যাপারে ওই মেম্বরের সাথে একাধিক বার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. সেলিম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, করোনা সন্দেহে একটি শিশুকে তার মাকে নিয়ে গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা আমার জানা নেই । তাছাড়া কাউকে করোনা আক্রন্ত সন্দেহ হলে ওই মেম্বরের আমাকে জানানোর কথা। তার জন্য সরকারীভাবে চিকিৎসা দেয়া বা কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা আমরা অবশ্যই করবো। কিন্তু সেটা এভাবে নয়। তিনি আরো জানান, এই মূহুর্তে আমি ওই শিশুটির এবং তার মায়ের খোঁজ নিচ্ছি। এবং মেম্বরের বিষয়টিও দেখা হবে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যেহেতু কলাপাড়ার সীমানায় রয়েছে অবশ্যই তাদের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।