Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চাল চুরির মামলায় গোদাগাড়ীর আ.লীগ নেতা কারাগারে

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২০, ৮:৫১ পিএম

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরির মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের নেতাকে রোববার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় তার বাড়ি থেকে ৬৭ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়।

এই নেতার নাম আলাল উদ্দিন ওরফে স্বপন। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের পরিবেশক। বাড়ি থেকে চাল উদ্ধারের পর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দিন তার নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

চাল উদ্ধার করার পর শনিবার রাতেই পুলিশ তাকে আটক করে গোদাগাড়ী থানায় নিয়ে যায়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম জানান, রাতেই তার নামে মামলা করা হয়। রোববার বেলা একটার দিকে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতা আলাল উদ্দিনের বাড়িতে অভিযানে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম সরকার ও গোদাগাড়ী থানার ওসি খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তারা অভিযান চালিয়ে আলাল উদ্দিন ও তার ভাইয়ের বাড়ি থেকে ৫০ কেজি ওজনের ৬৭ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করেন।

ইউএনও নাজমুল ইসলাম সরকার বলেন, কিছু বস্তায় সরাসরি সরকারি সিল দেওয়া ছিলো। বাকি চালগুলোর বস্তা পরিবর্তন করা হয়েছিল। মানুষের মধ্যে বিতরণ করার ইচ্ছা থাকলে তো আর বস্তা পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে না। এই নেতা ও পরিবেশক এলাকার ৫০০ কার্ডধারী মানুষের কাছে বিক্রি করার জন্য ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছিলেন। তার রেজিস্টারে দেখা গেছে, ৫০০ জনের মধ্যে ৪৯২ জনের কাছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হয়েছে। রেজিস্টারে কিছু ক্রেতার স্বাক্ষরের জায়গা ফাঁকা রয়েছে। আর কিছু স্বাক্ষর দেখেই বোঝা যাচ্ছে জাল।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরো জানান, অভিযান চালানোর খবর শুনে স্থানীয় বঞ্চিত লোকজন তার কাছে আসেন। তারা বলেন, তাদের কার্ড অনেক দিন আগেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের চাল দেওয়া হয় না। একজন বৃদ্ধ লোকও কাঁদতে কাঁদতে এসে একই অভিযোগ করেন। চাল চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আলাল উদ্দিন স্বপন তাদের সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করতেন বলেও তাদেরর অভিযোগ।

ইউএনও নাজমুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, একজন পরিবেশকের নিজস্ব গুদাম থাকতে হবে। গুদামের সামনে সাইনবোর্ড থাকতে হবে। তার এসবের কিছুই নেই। নিজ বাড়িতে সব নিজের মতো করে রেখেছিলেন। বাড়িতে ৩৫টি কার্ড পাওয়া গেছে, যাতে কোনো স্বাক্ষর নেই। আরও প্রায় ১০০টি ফাঁকা কার্ড পাওয়া গেছে, যা ক্রেতাদের দেওয়াই হয়নি। ইউএনও বলেন, তার বাড়িতে এ রকম সরকারি সিল দেওয়া অনেক বস্তা রয়েছে। এই নেতা একেকবার একেক রকম কথা বলছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, এর আগেও এই নেতা ন্যায্যমূল্যের চালের পরিবেশক ছিলেন।

পাকড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুর রাকিব সরকার বলেন, তিনি ওএমএসেরর চাল বিতরণ কমিটির সভাপতি। কিন্তু একবারও তাকে ডাকা হয়নি। আলাল উদ্দিন স্বপন নিজের মতো করে চাল বিক্রি দেখিয়ে আত্মসাত করেছিলেন।

তিনি বলেন, সকালেও আমি ওই গ্রামে গিয়েছিলাম। চালের জন্য গরীব মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। আমি নিজে ওই গ্রামের পাঁচজনকে ডেকে এনে বাজার থেকে চাল কিনে দিলাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ