Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা পরিস্থিতিতে পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে -প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২০, ১:২৫ পিএম

করোনা পরিস্থিতিতে মোকাবেলায় দেশের পাঁচ কোটি লোক খাদ্যসহায়তার আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে যাতে খাদ্য ঘাটতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখছে সরকার। বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আরো ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক কোটি পরিবার খাদ্য সহায়তা পাবে। এই এক কোটি পরিবারে পাঁচজন করে সদস্য হলে ৫ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে।
গতকাল শনিবার একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ সকল তথ্য তুলে ধরেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বল্পতম সময়ের এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অনেক সময় আমি নিজেও এসএমএস পাই, এসএমএস করে- ‘আপা আমার ঘরে খাবার নাই’। সাথে সাথে আমরা উদ্যোগ নেই। শুধু তাকে নয়, আশেপাশে কোথাও কেউ কষ্টে আছে কিনা, যারা হাত পাততে পারবেনা। ঘরে খাবার নেই, চাইতে পারছে না। তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার সেই ব্যবস্থাটাও করছি। মানুষের খাদ্যের অভাব যাতে না হয়, সে ব্যবস্থা সরকার করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংসদ নেতা বলেন, ঝড়-ঝঞ্ছা, দুর্যোগ আসবেই, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাহসের সঙ্গে আমাদের এসব মোকাবেলা করতে হবে। এই করোনা সঙ্কট ঠিক কতদিন চলবে তা বিশ্বের কারোর জানা নেই। বিশ্বের অনেকেই করোনার কারণে যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশে যাতে দুর্ভিক্ষ না হয়- সেজন্য ইতোমধ্যে আমরা তিন বছর মেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করছি। আমাদের দেশে খাদ্যের অভাব কোন অভাব নেই। এই সঙ্কটকালে মানুষের জীবন যাতে চলে এবং সবাই সুরক্ষিত থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের একটি মানুষও যেন খাদ্যের অভাবে কষ্ট না পায় সেজন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
কনোরা রোগী চিকিৎসার সকল খরচ সরকার বহন করবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের হাসপাতালগুলোকে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। অনেক বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলায় পৃথক আইসোলেশন হাসপাতাল খোলা হয়েছে।ভবিষ্যতের জন্যও ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলা হাসপাতালের উন্নত ধরনের চিকিৎসা যাতে পায়, সেই ব্যবস্থাটাও করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল ব্যবস্থাপনা আমরা নিচ্ছি। আমরা প্রত্যেকটা জায়গায় বিশেষ করে স্থলবন্দর, বিমানবন্দর, নৌবন্দরসহ সব জায়গায় করোনা পরীক্ষার জন্য থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফারেড থার্মোমিটারের মাধ্যমে স্কিনিং করা শুরু করেছি। এছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকল সেক্টরকে অন্তর্ভূক্ত করে একটা জাতীয় কমিটি করে দিয়েছি। করোন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংস্থা থেকে সহায়তা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউকেএইড, ইউএসএইডসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে।
করোনার নমুনা সংগ্রহে কীটের কোন সঙ্কট নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ৯২ হাজার পরীক্ষার কীট সংগ্রহ করেছি। তারমধ্যে থেকে ২০ হাজার কীট বিতরণ করা হয়েছে এবং ৭২ হাজারের মতো কীট এখনও মজুদ রয়েছে। কীট সংগ্রহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কাজেই করোনা পরীক্ষায় কীটের কোনো অভাব হওয়ার কোন লক্ষণ নেই। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হবে।
করোনার কারণে দেশের অর্থনীতির নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কতদিন এই অবস্থা চলবে, বিশ্বের কেউই তা বলতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, দেশের অর্থনীতি যাতে গতিশীল ও প্রাণসঞ্চার হয় এবং অর্থনীতির নেতিবাচক দিকগুলো যাতে মোকাবেলা করতে পারি সেজন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বড় শিল্প থেকে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প, গার্মেন্টস, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ, দিনমজুর সবার কথা বিবেচনা করে এসব প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একখন্ড জমিও যেন অনাবাদী না থাকে সেজন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয় সংসদ নেতা বলেন, আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাত্র শতকরা ৪ ভাগ সুদে কৃষি ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সার-বীজসহ সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে। যারা দিনমজুর তারা যেন ধান কাটতে যেতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে দেশের ছাত্ররাও দেশের এই সঙ্কটকালে ধান কাটার কাজে সহযোগিতা করতে পারে। আমরা যদি ধানগুলো কেটে সঠিকভাবে ঘরে তুলতে পারি তবে দেশে কোন খাদ্য সঙ্কট হবে না। সবাই যে যেভাবে পারেন কিছু ফসল উৎপাদন করুন, যাতে আমাদের খাদ্য সঙ্কট না হয়- বরং অন্য দেশকে আমরা এ সময় সহযোগিতা দিতে পারি।
সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন, অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না। নিজেরা সুরক্ষিত থাকুন, অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেশা যায় দেশের মানুষ একটু বেশিই সাহসী হয়ে গেছে। এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। অথচ অনেকে ঘরে না থেকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছেন, অনেকে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে সেসব জায়গাকে সংক্রমিত করছেন। আমরা ঘরে থাককে অনুরোধ করছি, কিন্তু দেখছি অনেকে অযথাই বাইরে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে- স্বাস্থ্যবিধি মানতেই চাইছে না। এটা সত্যিই দুঃখজনক। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, যে যেখান আছেন, সেখানেই থাকুন।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৯ এপ্রিল, ২০২০, ৮:২০ পিএম says : 0
    করোনা পরিস্থিতিতে মোকাবেলায় দেশের পাঁচ কোটি লোক খাদ্যসহায়তার আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে যাতে খাদ্য ঘাটতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখছে সরকার। বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আরো ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক কোটি পরিবার খাদ্য সহায়তা পাবে। এই এক কোটি পরিবারে পাঁচজন করে সদস্য হলে ৫ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে। আমরা আশাকরি প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশে খাদ্যাভাব হবে না এবং এই মহাবিপদ জনগণ কাটিয়ে উঠতে পারবে ইনশ’আল্লাহ। আল্লাহ্‌ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘজীবী ও সুস্বাস্থ দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১০ ডিসেম্বর, ২০২২
৫ নভেম্বর, ২০২২
২ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ