পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
করোনাভাইরাসের কারণে যেসব পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে সেগুলোতে লে-অফ বা সাময়িক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বিধান অনুযায়ী লে-অফ ঘোষণা করলে শ্রমিকরা বেতনের অর্ধেক পাবে, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শকের কাছে এই দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ।
সংগঠনটির সভাপতি ড. রুবানা হকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তাদের ক্রয়াদেশের বাতিলসহ চলমান অর্ডারের উৎপাদন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া ক্রেতারা উৎপাদিত পণ্য শিপমেন্ট না করা এবং মজুদকৃত ফেব্রিক্স না কাটার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। করোনার কারণে মার্চে চতুর্থ সপ্তাহে যখন কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়, তখন কারখানা মালিকের ধারণা ছিল স্বল্প সময়ের মধ্যে কারখানা খুলে দেয়া যাবে। তাই মালিকরা কেউ শ্রম আইনের কোনো ধরনের ধারা উল্লেখ না করে বন্ধ ঘোষণা করেন। আবার কেউ আইনের ১২ এবং ১৬ ধারার বিধান উল্লেখ করে বন্ধ ঘোষণা দেন। যদিও এ ধরনের পরিস্থিতিতে ১২ এবং ১৬ ধারার বিধান ছাড়া বন্ধের কোনো বিধান নেই।
ইতিমধ্যে অধিকাংশ কারখানা মার্চ মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। এপ্রিল মাসের মজুরি হিসাবকালে সরকার ঘোষিত পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের আবেদন করতে গিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যে সব কারখানা কোনো ধরনের ধারা উল্লেখ না করে এবং যে সব আইনের ১২ এবং ১৭ ধারার বিধান উল্লেখ করে ঘোষণা দিয়েছে, সেসব কারখানাকে লে-অফ হিসেবে গণ্য করে আপনার দপ্তর থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
এদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো আরেক বিবৃতিতে বিজিএমইএ জানায়, গত ২৬ মার্চ হতে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানাসমূহ বন্ধ রাখার বিষয়ে বিভ্রান্তির কথা উল্লেখ দায়ভার চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন স্থগিত ও কারখানা বন্ধ নিয়ে তিনটি শ্রমিক সংগঠনের দাবিকে অসত্য, বিভ্রান্তি ও উস্কানিমূলক উল্লেখ করে বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও পপ্রতবাদ জানিয়েছে বিজিএমইএ।
বিবৃতিতে বিজিএমইএ জানায়, করোনাভাইরাস মহামারিতে ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারাখানায় এমন ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে গত ১২ই এপ্রিল বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন (বিজিআইডব্লিউএফ), বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ) এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) দাবি করে। এর প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ’র সচিব কমডোর মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক (অব.) স্বাক্ষরিত চিঠিতে এর প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিজিএমইএ কোনো অবস্থাতেই বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদানের আইনগত কর্তৃত্ব রাখে না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি রপ্তানি কাজে নিয়োজিত কারখানা ও পিপিই তৈরির কারখানা ব্যতীত অন্যান্য সব কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে আহবান জানায় সংগঠনটি।
প্রধানমন্ত্রীর ২৫ মার্চের জাতীয় ভাষণে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির ঘোষণা দেন, যা পরে ১২ এপ্রিল ও ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। প্রয়োজনে ওষুধ শিল্প ও রফতানীমুখী শিল্প কারখানা, আন্তর্জাতিক ক্রয়াদেশ ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জরুরি অপরিহার্য পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প কলকারখানা চালু রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া আছে স্ববিরোধী মন্তব্য। এর মধ্যে রয়েছে- ৫ এপ্রিল কাজে যোগদান না করলে চাকরি চলে যাওয়া, বেতন স্থগিত বা বিলম্বে পরিশোধ করা, হঠ্যাৎ লে-অফ, শ্রমিকের মজুরি কর্তন, শ্রমিক ছাঁটাই ইত্যাদি। এসব বিষয়ের সঙ্গে বিজিএমইএ একমত নয় এবং কারখানা মালিকদের যেকোনো বেআইনি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।