পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এখন তার কঠিন রূপ নিয়ে বিরাজমান। এর প্রথম আক্রমণ থেকে এখন পর্যন্ত পবিত্র মক্কা ও মদিনার দুই মসজিদ, বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের মসজিদ, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মসজিদ সীমিত আকারে ফরজ নামাজের জামাত ও জুমা চালু রেখে প্রায় বন্ধের মতোই। মহামারী দেখা দেয়ার সাথে সাথে ওমরা স্থগিত করা হয়। এ বছর বিগত ২২০, অন্য হিসাবে ১৫০ বছর পর সম্ভবত হজও মওকুফ থাকবে। যদিও ইতিহাসের নানা সময়ে হজ বন্ধ থাকার কথা পাওয়া যায়।
তবে স্মরণকালে সম্ভবত এবারই প্রথম হজ পুরোপুরি স্থগিত থাকতে পারে। রমজান সমাগত। মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগীর পূর্ণ মৌসুম এটি। সাধারণত মুসল্লির সংখ্যা রমজানে বৃদ্ধি পায়। জুমাগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হয়। তারাবিতে মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শরিক হয়। কুরআন খতম হয়। অনেকে তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইলে কুরআন খতম করেন। এবছর এই মহামারীর প্রধান প্রতিরক্ষা হচ্ছে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানবদেহে সংক্রমিত এ ভাইরাস হাঁচি-কাশি ও ড্রপলেট থেকে ছড়ায় বলে প্রমাণিত।
এ জন্য স্পর্শ থেকে সুরক্ষার জন্য বার বার সাবানে হাত ধোয়া সুরক্ষার নিয়ম। এসব প্রয়োগে ফল পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে লকডাউন এখন যে পর্যায়ে এসেছে যদি আরো দুই তিন সপ্তাহ তা ধরে রাখা যায়, তাহলে হিসাব মতো আমরা ভয়াবহতার একটি থাবা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হব ইন্শা আল্লাহ। কষ্ট করে হয়তো আমরা বড় বিপর্যয় ঠেকাতে পেরেছি, আরেকটু কষ্ট করলে আল্লাহর রহমতে বিপদ পাড়ি দিয়ে ফেলব।
আর মহামারীতে আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী এক জীবন্ত বাস্তবতা। অতএব, বিশ্বের বড় বড় শরীয়া বিশেষজ্ঞ, বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা জামাতে নামাজ, জুমা, ধর্মীয় সমাবেশ মওকুফ করে দিয়েছেন। অল্প মানুষ সতর্কভাবে জামাত পড়া বা একাকী নামাজ পড়া অনুমোদিত হয়েছে। ফরজ নামাজ যেখানে সমবেত হয়ে পড়া যাচ্ছে না, সেখানে সুন্নাত বা নফল পড়ার কোনো যৌক্তিকতা বা অনুমোদন থাকতে পারে না।
এই জন্য সউদী আরব, কুয়েত, কাতার, জর্দান, আরব আমিরাত, মিসর, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশ তারাবির নামাজ মসজিদে জামাত আকারে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে মহামারীর শুরু থেকে মসজিদগুলোতে কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে জামাত ও জুমা পালনের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু অধিকাংশ মসজিদে মুসল্লিরা এত বেপরোয়া ভিড় ও সমাগম করেছেন যা মহামারীর সময় করা মোটেও সঙ্গত নয়। যার ফলে, মসজিদ চালু রেখে একটি গ্রহণযোগ্য ও মাঝামাঝি পন্থা বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে বর্তমানে গৃহীত হয়েছে।
বিপদের দিনগুলোতে এটি নষ্ট করার কোনো যুক্তি নেই। কারণ, শর্ত কেউ পালন করবে না। যা ইমাম খতিব ও মসজিদের নিজস্ব লোকজন অভিযোগ করেছেন বলেই এবং নামাজীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনরূপ অশোভন আচরণ কখনই করতে চান না বলে বাংলাদেশে বর্তমান পদ্ধতি সরকার চালু করেছে। এর মধ্যে কোনোরূপ পরিবর্তন আনা যেতে পারে। তবে সময়ের আগে মুসল্লিদের অবাধ সমাগম অনুমোদন কিছুতেই ঠিক হবে না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে সমাজের অন্যান্য সেক্টরে যখন কিছু কিছু ছাড় দেয়া শুরু হবে তখন সূচনাতেই মসজিদে আগমনের পথ ইন শা আল্লাহ উন্মোচিত হবে বলে মুসল্লিদের বিশ্বাস।
পাকিস্তানের আলেমগণ যেসব শর্ত মেনে মসজিদে জামাতের জন্য মুসল্লিদের আসার অনুমতি দেয়ার আশা করেছেন সেসব শর্ত তাদের মুসল্লিরা কতটুকু মানতে পারবেন তা নিয়ে শতভাগ সন্দেহ রয়েছে। কিছু মসজিদে তারা জীবাণুনাশক স্বয়ংক্রিয় গেইটের ব্যবস্থা করেছেন, যা দুই পার্সেন্ট মসজিদের পক্ষে সংগ্রহ ও স্থাপন করা সম্ভব হতে পারে।
এক কাতার মাঝে ছেড়ে ছেড়ে এক মুসল্লি থেকে আরেক মুসল্লি তিন ফুট দূরে সরে দাঁড়িয়ে একেকটি মসজিদে আগ্রহী কতজনকে তারা স্থান করে দিতে পারবেন তা ভাবার বিষয়। তাছাড়া, অসুস্থরা বা রোগীর সেবায় নিয়োজিতরা মসজিদে আসবেন না। এ নিয়ম কোভিড-১৯ এর বেলা কীভাবে মানা সম্ভব, যখন প্রথম ১৪ দিন কেউ বুঝতেই পারে না যে, সে এ রোগে আক্রান্ত। যুব, তরুণ ও সুস্থ নামাজীরা কী করে বুঝবে যে, সে সুস্থ?
অবশ্য ইসলামে মহামারীতে এগিয়ে গিয়ে খুশিতে মৃত্যুবরণ করার কিছু ঘটনাও আছে। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটিও একটি পন্থা। তবে কোভিড-১৯ এর চরিত্র ভিন্ন রকম। এখানে নিজে এটিকে রহমত স্বরূপ ধরে নিয়ে জীবন দানের একতরফা সুযোগ নেই। এখানে নিজের পাশাপাশি অজানা আরো হাজারো মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার বিপুল আশঙ্কা বিদ্যমান। যা একজন মুমিনের জন্য বৈধ হতে পারে না।
চীনে একজন থেকে উনপঞ্চাশ হাজার জনের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা জানা গেছে। আর ইসলামে জীবন রক্ষার জন্য মহামারী অঞ্চলে প্রবেশ না করা এবং বাড়ি-ঘর, মসজিদ, কর্মস্থল ছেড়ে পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার আদর্শও রয়েছে। সুতরাং, যারা মাসআলা ও ফতওয়া নিয়ে গবেষণা করেন তাদের সকল মতের প্রতিই সমান শ্রদ্ধা রেখে অগ্রসর হতে হবে। মানুষকে সকল ফতওয়া ও মতামত অনুসরণের যে সুযোগ ইসলাম দিয়েছে তা অবারিত রাখতে হবে। সময় স্থান পাত্র ও পরিবেশ বিবেচনায় মানুষ যেন সহজ মাসআলা ও ফতওয়াটি বেছে নিতে পারেন। যেটি ইসলামে কাম্য।
আরেকটি প্রসঙ্গ আলোচনা করা উচিত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্র ও সরকারের সকল ইফতার আয়োজন এ বছর স্বল্প পরিসরে এনে সাধারণ মানুষকে সহায়তা করা অধিক সমীচীন বলে মনে করি। এতে সমাগম এড়ানো যেমন সম্ভব তেমনি সঙ্কটাপন্ন নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ব পালনেও এটি কার্যকর। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্কটকালীন নানা প্রণোদনা ও সহায়তা আরো প্রশংসনীয় এবং পূর্ণাঙ্গ হবে যদি তিনি দেশের সব মসজিদের সাথে যুক্ত কর্মশক্তিকে রমজান ও ঈদের উপহার হিসেবে স্বতন্ত্র একটি সহায়তার সিদ্ধান্ত নেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জরিপকৃত আড়াই লাখ মসজিদ এবং তালিকা বহিভর্‚ত, অনানুষ্ঠানিক মসজিদ কিংবা এরপর নির্মিত আরো প্রায় দুই লাখ মসজিদে কর্মরত অন্তত ১৫ লাখ জনশক্তি রমজানপূর্ব সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেলে পবিত্র রমজানব্যাপী দেশ ও জাতি অনেক রহমত, বরকত লাভের সুযোগ পাবে। প্রধানমন্ত্রীও বিশেষ দোয়া লাভ করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।