Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসকদের রাখতে অভিজাত হোটেল!

রুম বরাদ্দের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্স-টেকনোলজিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। বর্তমান মহামারী থেকে রক্ষা করতে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন রোগীর সেবায়। অথচ মানুষকে বাঁচানো প্রথম সারির এই যোদ্ধারাই স্বাস্থ্য খাতের সমন্বয়হীনতার শিকার। জীবন বাজি রেখে ভয়াবহ ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় দিনরাত নিয়োজিত থাকলেও প্রতিটি মুহুর্ত সংক্রমিত হওয়ার অজানা আতঙ্ক তাড়া করছে তাদের। দেশে তীব্র হয়ে ওঠা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার সম্মুখ যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকটের শেষ নেই। অপর্যাপ্ত পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) নিয়েই করোনাযুদ্ধে নামা স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিনিয়তই নতুন নতুন সংকটে পড়ছেন। স্বল্প জনবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে থাকা-খাওয়ার সংকট। এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে মানসিকভাবে নানা পীড়নের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকরা। যদিও এরমধ্যে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন একটি ভালো খবরও দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্সদের থাকার জন্য ঢাকায় ২০টি অভিজাত ও নিরাপদ হোটেলের নাম প্রস্তাব করে ৫৮০টি রুম চেয়েছে সরকার। অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যদিও কতদিনে এ ব্যবস্থা হবে তার উত্তর এখনো জানা যায়নি। এমনকি হোটেল মালিক ও হোটেলের নিয়ন্ত্রক সরকারের পর্যটন করপোরেশনও বিষয়টি জানেন না বলে সূত্র জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বর্তমান মহামারী করোনার সম্মুখ যোদ্ধাদের বিষয়ে যাতে কোন ধরনের গাফিলতি না হয় সেদিকে সরকারকে বিশেষ নজড় দেওয়ার কথা বলেছেন।
এসব হোটেলের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা রিজেন্সি, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, লা মেরিডিয়ান, রেডিসন বøু ওয়াটার গার্ডেন, রাজমণি ঈঁসা খা, হোটেল ৭১, হোটেল অবকাশ, হোটেল জাকারিয়া, হোটেল রেনেসাঁ, হোটেল মিলিনা, হোটেল গ্রান্ড প্রিন্স, হোটেল সাগরিকা, হোটেল শালিমার ইত্যাদি। এতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল এবং কমলাপুরের জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা থাকবেন।

এদিকে চিকিৎসক-নার্সদের জন্য হোটেল রুম বরাদ্দ করলেও হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং পর্যটন করপোরেশন বিষয়টি অবগত নয় বলে সূত্র জানিয়েছে। এমনকি হোটেল মালিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোন ধরনের যোগাযোগও করা হয়নি। উল্লেখিত হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো তারা ওই সব হোটেলে থাকার ব্যাপারে কোন কিছু জানতে পারেননি। বিভিন্ন মাধ্যমের সংবাদের জেনেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানান। তবে কবে থেকে এই হোটেলগুলো ডাক্তার-নার্সদের জন্য ব্যবহার করা যাবে এবং হোটেলগুলোর ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসপাতাল ডা. মো. আমিনুল হাসান মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান ইনকিলাবকে বলেন, চিকিৎসকদের থাকার জন্য প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আলোচনা চলছে। আগেই বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন (বিয়াম), জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) চিকিৎসকদের থাকার জন্য চিন্তা করেছে। করোনার আক্রান্তদের সেবা দেওয়া চিকিৎসকদের খুব ভালোভাবে রাখতে হবে। তাই সকল চিকিৎসককে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংকুলান করা যাবে না। তাই কিছু অভিজাত হোটেল নেওয়া হতে পারে। হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় এখনো আলোচনা সম্ভব হয়নি। তবে যেখানে সুযোগ হয় আলোচনার মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করা হবে।

সূত্র মতে, এর আগে দেশের করোনাভাইরাস চিকিৎসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র রাজধানীর কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবস্থান করছিলেন এমন একটি আবাসিক হোটেল থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে রাঁধুনিসহ অনেক স্টাফ পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও গটেছে। এতে ওখানে অবস্থানরত ৫৬ জন চিকিৎসককে খাবারের কষ্টে রীতিমত বিপাকে পড়তে হয়। একই সঙ্গে দিনভর করোনা রোগীদের সেবা করার পর একই হাসপাতালের নার্সদের ভাগ্যে জুটছে স্থানীয় একটি হোটেলের রান্না করা নিম্নমানের খাবার। এছাড়া বাজেট না থাকার অজুহাতে গত রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নার্সদের না খেয়েও কাটাতে হয়েছে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ