Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লকডাউন মানছে না বেশির ভাগ মানুষ, ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনা পরিস্থিতি

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৫ এপ্রিল, ২০২০, ২:৪৬ পিএম | আপডেট : ২:৫১ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২০

করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউন বেশির ভাগ মানুষই মানছে না। ঘরে থাকার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সাধারণ মানুষ রাস্তাঘাট, বাজার ও পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানে ভিড় করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতার পরও পাড়া-মহল্লায় অলি গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিশোর যুবক থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ। রাজধানীসহ সারাদেশের গ্রাম পর্যন্ত এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এতে করে দেশে করোনা ঝুঁকি আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ২১৯জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১২৩১ জনে। দেশজুড়ে মানুষের এই অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধ করতে না পারলে, তাদেরকে ঘরে রাখতে না পারলে করোনা পরিস্থিতি ইতালি-আমেরিকার মতো ভয়াবহ রূপ নেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

রাজধানীতে করোনা ঝুঁকির প্রধান স্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে টিসিবি পণ্যের ট্রাক এবং কাঁচা বাজারগুলো। ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে টিসিবির ট্রাকের সামনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। করোনা ঝুঁকির সতর্কতা অমান্য করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ঝুঁকি বেড়েই চলছে। বাজারগুলোতে অধিক মাত্রায় দোকানিরা দোকান খোলার কারণে সেখানেও মানুষের ভিড় বেড়েছে।

বুধবার রাজধানীর পান্থপথ, কাওরান বাজার, ফুলবাড়িয়া, মৌচাক, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, মতিঝিল, শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সেখানে করোনা সতর্কতার কেউ কোনো তোয়াক্কা করছেনা।

করোনা সংক্রমণের অন্যতম স্থান নগরীর কাঁচাবাজারগুলো। কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজার, খিলগাঁও বাজারসহ সব বাজারেই একই অবস্থা। মাছের দোকান, সবজির দোকান, মুদি-মনোহারী দোকানের সামনে গায়ে গায়ে লেগে লোকজনকে বাজার করতে দেখা যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, অনেকেই মুখে মাস্ক পর্যন্ত পরেননি।

সারাদেশের গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পণ্য পরিবহনের গাড়িতে নানা কায়দায় যাত্রী বহন করা হচ্ছে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও থেমে নেই মানুষের চলাফেরা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই। বিভিন্ন ফেরি সার্ভিস চালু থাকায় মালবাহি ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে চড়ে এখনো অনেকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা চলে যাচ্ছে। শহর ছেড়ে অনেকে চলে যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে কারফিউ জারি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনা আক্রান্ত হওয়ার আগেই এর প্রতিকার করা উত্তম। প্রাথমিক পর্যায়ে করোনা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যদি আক্রান্তের সংখ্যা এভাবে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তাহলে আগামী এক সপ্তাহ পরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তখন আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ার আগেই মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে কঠোর হতে হবে। চীন, সিঙ্গাপুরসহ যেসেব দেশ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে, ঐ সব দেশে লকডাউন সবাই মেনেছে। লকডাউনে কেউ বাইরে বের হতে পারেনি, বা বের হতে দেওয়া হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলে, চীন, সিঙ্গাপুর এসব দেশ লকডাউনের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। লকডাউন বলতে যা বোঝায় তাই তারা করেছে। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক মানুষ লকডাউন পুরোপুরি মানছেন না। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে হলে সবাইকে অবশ্যই লকডাউন মানতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোণা সংক্রামণ রোধে প্রধান উপায় হলো লকডাউন বা ঘরে অবস্থান। এটা না করতে পারলে এই এপ্রিল মাসে পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। আর তা হলে কী পরিমাণ করোনায় আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে তা কেউ বলতে পারছে না। ইউরোপ থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ দেশে এসেছেন। এরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ইউরোপে করোনা ব্যাপক হারে দেখা দেওয়ার পর তারা ঐ সব দেশ থেকে বাংলাদেশে আসেন। তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা যায়নি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে হবে। ‘ঘরে থাকুন, নিজে সুস্থ থাকুন এবং দেশের মানুষকে সুস্থ রাখুন’ করোনা প্রার্দুভাব ঠেকানোর এটাই হলো মূল মন্ত্র। তাই লকডাউনকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণকে বুঝানো হয়েছে। এখন আর বুঝানোর সময় নেই। সবাইকে ঘরে রাখতে প্রয়োজনে এখন কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, সবারই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই সময় থাকতে এখনই কারফিউ বা অ্যাকশন যা প্রয়োজন তা-ই করতে হবে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ বলেন, করোনা রোগীদের সেবা দিতে এখনই স্বাস্থ্য বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে। মহামারি দেখা দিলে কী হবে? ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে কে কার চিকিৎসা করবে? তাই সময় থাকতে মানুষকে ঘরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, বিনা কারণে কেউ বাসা-বাড়ি থেকে বের হলে তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তার পরও লোকজন শিক্ষা নিচ্ছে না। তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ভয় কাজ করছে না। আমরা কঠোর হয়েছি। সামনের দিনগুলোতে আরো কঠোর হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ