Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরে জট কমান

রোজার নিত্যপণ্য দ্রুত সরবরাহের তাগিদ : ব্যবহারকারীদের সাথে সমন্বয় সভা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০২০, ৬:২৬ পিএম

জাতীয় স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমাতে হবে। বিশেষ করে খাদ্যশস্যসহ রোজায় দেশের জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী অতিদ্রুত ডেলিভারি, পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, বাজারজাত ব্যবস্থা এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। 

আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী (স্টেক হোল্ডারদের) এক উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় সভায় উপরোক্ত তাগিদ দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বন্দরে সৃষ্ট কন্টেইনার জট নিরসনের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জট পরিস্থিতি জটিল-
করোনা মহামারী সংক্রমণরোধে টানা ছুটি, শাটডাউন, লকডাউনের কারণে সারাদেশের সড়ক মহাসড়ক, নৌপথে পরিবহন ব্যবস্থা অচল এবং কল-কারখানা বন্ধ থাকায় দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে মালামাল ডেলিভারি পরিবহনে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বন্দর কার্যক্রম চালু রয়েছে সার্বক্ষণিক (২৪/৭)। এরফলে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেইনার একমুখী শুধুই খালাস হচ্ছে। ডেলিভারি পরিবহন অস্বাভাবিক কমে গেছে। রেলপথে নামেমাত্র যাচ্ছে কিছু পণ্য।
বন্দরের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস কন্টেইনারের (২০ ফুট সাইজের ইউনিট) বিপরীতে আজ পর্যন্ত বেড়ে গিয়ে জটে জমে আছে ৪৬ হাজার ৭শ’ কন্টেইনার। ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেইনার ডেলিভারি পরিবহনে ব্যবসায়ীদের জন্য এক শত ভাগ স্টোর রেন্ট মওকুফ ঘোষণার বিশেষ ছাড় দেন। তা সত্ত্বেও জটের উন্নতি হচ্ছে না। এ অবস্থায় বন্দরে সিডিউল অনুসারে যেসব জাহাজ আসার কথা সেগুলো ভিড়লেও আমদানি পণ্যের কন্টেইনার আর খালাস করতে পারবে কিনা সন্দেহ। তখন বন্দরে অচলাবস্থা তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে ৮টি কন্টেইনার জাহাজ জেটি-বার্থে খালাস কাজ করছে। বহির্নোঙরে খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রী খালাস করছে ১৩ টি জাহাজ। এরমধ্যে ৫টি জাহাজ খাদ্যশস্য বোঝাই। কন্টেইনার জটের কারণে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে না পারলে তখন সৃষ্টি হতে পারে জাহাজজট সমস্যা। এতে বন্দরে আগত প্রতিটি জাহাজকে বৈদেশিক মুদ্রায় দৈনিক ডেমারেজ বা লোকসান গুণতে হবে।
এদিকে ওই প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত গতকালের সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। বন্দর ব্যবহারকারীদের নিজ নিজ ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। বন্দরের কন্টেইনার কন্টেইনার জট সব রকম উপায়েই দ্রুত কমাতে হবে।
সভায় চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, করোনা বন্দরের জট কমাতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বন্দরের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবনা এসেছে তার বাস্তবায়ন হলে বন্দরজট কমবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্দর বন্ধ হলে দেশ বন্ধ হয়ে যাবে। আমদানি কন্টেইনার খালাস হচ্ছে, ডেলিভারি হচ্ছে না। আমরা সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। সবার সহযোগিতা পেলে চার দিনের মধ্যে ম্যানেজ করতে পারবো।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, পণ্য রফতানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বিলাসবহুল বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি ছাড়ে কিছুটা বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু চিকিৎসা ও সেবাখাতের পণ্যসামগ্রী, নিত্যপণ্য, ফল, শিল্প-কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, কৃষি উপকরণ ছাড়করণে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সেসব পণ্য ছাড়করণও হচ্ছে। কাস্টম হাউস সার্বক্ষণিক খোলা। ব্যাংক বিকেল ৩টা বা ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখলে আমদানিকারকদের সুবিধা হবে। বন্দরের জট কমাতে আমদানিকারকদের এগিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম বলেন, করোনার মতো বিশ্বদুর্যোগের বিষয়ে আমাদের কারও পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছিল না। ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার বাণিজ্য ও ৯২ শতাংশ কার্গো হ্যান্ডেল করে চট্টগ্রাম বন্দর। শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কাস্টমস, রেলওয়ে, অফডকসহ ২০ থেকে ২৫ ধরনের স্টেক হোল্ডার বা ব্যবহারকারী রয়েছে বন্দরের। এখন করোনা পরিস্থিতিতে ডেলিভারি কমে গেছে। কমলাপুর, পানগাঁও থেকে ডেলিভারি বাড়লে সেখানে বন্দর থেকে কন্টেইনার পাঠানো যাবে। বন্দর সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে। তাহলে জট নিরসন হবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, আমদানি রফতানির জন্য ব্যাংক ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। আমাদের পে-অর্ডার নিতে হয়। আমদানি কন্টেইনারের ডেলিভারি বাড়াতে হবে। রোজার জন্য আনীত ফলবাহী রিফার (ফ্রোজেন) কন্টেইনার দ্রুত ডেলিভারি নিতে হবে। বন্দরকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া যায় না।
বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, যে কোনো মূল্যে বন্দরের ডেলিভারি পরিবহন স্বাভাবিক করতে হবে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর সম্পাদক লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, সরকারি কর্মকর্তা যদি বন্দরে যাওয়া রিস্কি মনে করেন তাহলে ডেলিভারি কীভাবে হবে? ব্যাংক, শিপিং এজেন্ট বেশি সময় খোলা রাখতে হবে।
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমদ বলেন, বন্দরের কাজে নিয়োজিতদের চলাচলে সহযোগিতা করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। যে কোনো সমস্যা সমাধানে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে পারেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বন্দরের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর শফিউল বারী, বিকেএমইএর শওকত ওসমান, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, পরমাণু শক্তি কমিশনের ড. শাহাদাত হোসেন, উদ্ভিদ সঙ্ঘ-নিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল, বিএসটিআই পরিচালক মো. সেলিম রেজা, বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রামের নির্বাহী পরিচালক একেএম মহিউদ্দিন আজাদ প্রমুখ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এবং বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের চট্টগ্রামের প্রধানগণ সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ