পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ। করোনা প্রকোপ ঠেকাতে কোটি কোটি মানুষ সামাজিক দূরত্ব (সঙ্গো নিরোধ) রক্ষা করছেন। গার্মেন্টসে চাকরি করেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। করোনাভাইরাসের প্রকোপে কয়েক লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের আত্মঘাতী আচরণে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া রূপসা থেকে পাথুরিয়ার কোটি কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে। দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে নতুন আতঙ্কের নাম যেন হয়ে গেছে গার্মেন্টস শ্রমিক। গোটা বিশ্ব কাঁপছে করোনা ভয়ে। সারাবিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানী, ডাক্তার, গবেষকদের পরামর্শ ছোঁয়াচে রোগ করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব (সঙ্গো নিরোধ) বজায় রাখা অপরিহার্য। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন থেকে শুরু করে ভারত, পাকিস্তান পর্যন্ত করোনা প্রকোপ থেকে বাঁচতে নাগরিকদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় বাধ্য করেছে। বাংলাদেশের সরকারও একের পর এক ঘোষণায় সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি করে ঘরে বসে থেকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার প্রচারণা চালাচ্ছে। পরিবহন শ্রমিক, কারখানার শ্রমিক, ঘাটের মাঝি থেকে শুরু করে প্রায় সব পেশার মানুষ এমনকি নিম্ন আয়ের রিকশাওয়ালা-বস্তিবাসী পর্যন্ত ঘরে বসে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছেন। ব্যতিক্রম শুধু গার্মেন্টস কর্মীরা! গার্মেন্টস কর্মীদের বড় একটা অংশ ছুটি পেয়েই ঈদের মতো গাদাগাদি করে ঘরে ফেরা, একই কায়দায় কর্মস্থলে আসা-ফিরে যাওয়া, আবার কেউ কেউ বেতনের দাবিতে আন্দোলনের নামে জোটবদ্ধ হয়ে সামাজিক দূরত্ব ভেঙে ফেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে- গার্মেন্টস শ্রমিকদের ১৭ কোটি মানুষের জীবন বিপণœ করে তোলার অধিকার কে দিয়েছে? ৮০ ভাগ কৃষকের দেশে গুঁটিকয়েক গার্মেন্টস শ্রমিকের সরকারের নির্দেশনা অমান্যের আস্ফালনের রহস্য কি?
দেশে করোনাভাইরাসে ইতোমধ্যেই মারা গেছেন ৩৯ জন। গতকালও মারা গেছেন ৫ জন। মোট আক্রান্ত ৮০৩ জন। রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার মিরপুর ও সাভার এলাকা। এই তিনটি এলাকাই গার্মেন্টস শ্রমিক বেশি। সরকারি সংস্থাটির তথ্য মতে, বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়লেও এই ভাইরাস সারাদেশে ছড়িয়েছে মূলত গার্মেন্টস শ্রমিকরা।
তারা ছুটিতে দলবেঁধে গ্রামে গিয়ে ঘরবন্দি না থেকে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশে গেছেন। এতে করে এখন পর্যন্ত দেশের ৩৮টি জেলায় করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা বিভাগের ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ২৩, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ীত, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীত, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, শরিয়তপুর; চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, কক্সবাজার; সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ; রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁ, রংপুর, লালমনিরহাট; ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা; বরিশাল বিভাগের বরগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী এবং খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এসব জেলার প্রত্যেকটিতেই গার্মেন্টস কর্মীরা ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, লকডাউন আরো জোরালো করতে হবে। লকডাউন মানুষ পুরোপুরি মেনে চলছে না। বাইরে বাজারে মানুষ ঘোরাফেরা করছে। আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। এখন কেউ নিয়ম না মানলে বেশি সংক্রমিত হবে।
সামাজিক দূরত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকরা গত ১২ এপ্রিলও ঢাকার সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে দলবেঁধে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। বেতন-ভাতার দাবিতে তাদের এই আন্দোলন। চিকিৎসকদের মতে একজন থেকে আরেক জনের দূরত্ব যখন ৩ মিটার বাধ্যতামূলক তখন তারা গা ঘেঁষাঘেষি করে রাস্তায় বসে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে। অথচ গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য প্রথম প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য সেক্টরের প্রণোদনা ঘোষণার আগেই গার্মেন্টস কর্মীদের তিন মাসের বেতন নিশ্চিত করতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দেয়া হয়। গতকালও তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে এখন পর্যন্ত ৩১৫ কোটি মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এতে ক্রয়াদেশ বাতিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ২২ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক। তবে বিজিএমইএ’র আহ্বানে সাড়া দিয়ে কর্মীদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯১৭টি কারখানা। এ পর্যন্ত ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ শ্রমিক বেতন পেয়েছেন। আগামী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে বেতন পরিশোধের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।
দেশের রেমিট্যান্সের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছেন বিদেশে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকরা। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে থাকেন। এর ৮০ শতাংশই কঠোর পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠান। বিশ্বের দেশে দেশে কর্মরত ওই প্রবাসীরা করোনা প্রকোপে ঘরে বসে রয়েছেন। এদের মধ্যে লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিক ইতোমধ্যে কাজ হারিয়েছেন। প্রবাসী ওই শ্রমিকরা ঘরে বসে থাকায় কাজ করতে পারছেন না। সউদী আরবসহ মাধ্যপ্রাচ্যের ১৯ দেশ, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশগুলোতে লাখ লাখ প্রবাসী এবং প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ জমানো টাকা খরচ করছেন, কেউ ওই দেশগুলোর সরকারের দেয়া অর্থ ব্যয়ে খাওয়া দাওয়া করছেন। কিন্তু তারা ঘরবন্দি। কোথাও দলবেঁধে আন্দোলন, কোথাও সামাজিক দূরত্ব ভেঙ্গে রাস্তা নেমে প্রতিবাদ করে সাধারন মানুষকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে ফেলেননি। কিন্তু বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বড় অংশ সামাজিক দূরত্ব ভেঙে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ গার্মেন্টস কর্মীদের চেয়ে দেশের অর্থনীতিতে বেশি ভূমিকা রাখছেন কৃষক ও কল-কারখানার শ্রমিকরা। তারা ঘরে বসে রয়েছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।
কৃষকরা তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না করোনায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। রিকশাচালক, পরিবহন শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, নৌকার মাঝি, রেল স্টেশন-বাস টার্মিনাল- ঘাটের মুটেমজুর কাজ না থাকায় বেকার হয়ে বিপন্ন জীবন যাপন করছেন। এদের চেয়ে অনেক ভালো এবং স্বচ্ছল অবস্থায় রয়েছেন গার্মেন্টস কর্মীরা। গার্মেন্টেসে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তারপরও সরকারের সুজনরে গার্মেন্টস শ্রমিকরাই। সবার আগে তাদের বেতন দেয়ার জন্য প্রণোদনা ঘোষণার পাশাপাশি ১৬ এপ্রিলের মধ্যে বেতন দেয়ার সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
করোনায় দেশের সব শ্রেণির পেশাদারি মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ডাক্তাররা হাসপাতালে ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন, নার্সরা কাজ করছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা রক্ষায় বাধ্য করছেন। তাদের কেউ কি করোনার ভয়াবহতায় বেতন-ভাতার দাবিতে লকডাউন ভাঙছেন? তাদের কেউ কি গাদাগাদি করে বাসে-ট্রাকে যাতায়াত করে করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছেন?
শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব করোনায় আক্রান্ত। পরাশক্তির আমেরিকা, চীন থেকে শুরু করে প্রভাবশালী প্রায় সব দেশেই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। করোনায় আমেরিকার এক কোটি ৬০ লাখ কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অবস্থাও অভিন্ন। বিশ্বব্যাংক গবেষণা করে ভবিষ্যত অর্থনীতির পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ৩ শতাংশের বেশি হবে না। অথচ আগামী অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
করোনা দেশের পোলট্রি শিল্প, চামড়া শিল্প, পাটশিল্প, বিভিন্ন কুটিরসহ সব শিল্পকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। বিজিএমইএ জানিয়েছে করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে এখন পর্যন্ত ৩১৫ কোটি মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এক হাজার ১৩৪টি কারখানার ৯৭ কোটি ৫২ লাখ পিস তৈরি পোশাক। তারপরও সংগঠনটির সভাপতি ড. রুমানা হক কিছু ক্ষতি হলেও সব শ্রমিককে বেতন দেয়ার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেয়ার কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এতো কিছুর পরও কিছু গার্মেন্টস শ্রমিকের রাজপথ বন্ধ করে জড়ো হয়ে মিছিল করে করেনাভাইরাসকে আমন্ত্রণ জানানো, বাস-ট্রাকে গাদাগাদি করে ভ্রমণ করে গ্রামে ফিরে হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে প্রকাশে ঘুরে মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার মতো অঘটন ঘটাচ্ছে।
ডাক্তাররা বলছেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা সারাদেশের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় করোনাও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রবাসীদের মতো গার্মেন্ট শ্রমিকদের কোয়ারেন্টিনে নেয়া গেলে করোনার বিস্তার ঠেকানো যেত। অথচ এখনো গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেপরোয়া। ভারতের লেখক নিরোধ সি চৌধুরী ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ নামে বই লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। করোনার প্রকোপের মধ্যে গার্মেন্টস কর্মীদের অপকর্ম দেখে এখন বাংলাদেশের লেখকদের যে কেউ ‘আত্মঘাতী গার্মেন্টস কর্মী’ বই লিখতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।