Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিরোধীদলের তৎপরতা অপ্রতুল

সরকারি ত্রাণের চুরি থামছে না

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

সারাদেশে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। অসহায় গরিব মানুষ ত্রাণ না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে। কোথাও কোথাও রাস্তা অবরোধ করে মানুষ বসে থাকে ত্রাণের আশায়। সারাদিন রাস্তার পাশে বসে থেকে সন্ধ্যায় খালি হাতে বাড়ি ফিরছে ক্ষুধার্ত অসহায় গরিব মানুষ। কোন স্থানে যৎসামান্য ত্রাণ গেলেই তা নিয়ে শুরু হয় কাড়াকাড়ি। সরকারের বরাদ্দ করা ত্রাণ বেশিরভাগই চুরি হয়ে যাচ্ছে। গরিব অসহায় মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও গরিব দুখী মানষের পাশে নেই। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ত্রাণ না দিয়ে শুধু সরকারকে দোষারূপ করছে। ত্রাণের নামে তারা শুধু শুটিং করছে। লোক দেখানোর জন্য যৎসামান্য ত্রাণ বিতরণ করে তার ছবি তুলে মিডিয়ায় প্রচার করছে বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ঘরে বসে সরকারের সমালোচনা করছে। এই দুর্যোগের সময় তারা মানুষের পাশে নেই। সরকারের সমালোচনা না করে বিএনপিকে ত্রাণ নিয়ে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি আহ্বান জানান।

তবে সরকারের এ অভিযোগ বিএনপি মানতে নারাজ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী বলেন, তথ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্য উদুর পিন্ডি বদর ঘাড়ে চাপানোর মতো। সরকারের বরাদ্দ দেয়া ত্রাণ তো দলের লোকেরা চুরি করে নিচ্ছে। অসহায় গরিব মানুষের হক তার লটেপুটে নিচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি যারা বিশ্বাস করে তারা এটা কোনোদিন করবে না। আজকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমাদের নেতা-কর্মীরা এই দুর্যোগের মধ্যেও যতটুকু তাদের সামর্থ- তা নিয়ে তারা সামগ্রিকভাবে কাজ করছে। আমরা শত নির্যাতনের মধ্যেও মানুষের পক্ষে, মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড-স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী সারাদেশে বিতরণ করছেন।
ত্রাণ বিতরণ নিয়ে এভাবেই সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পরের দোষারূপ চলছে। তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন বর্তমান এই মহাদুর্যোগের সময় লকডাউনের সুফল পেতে হলে গরিব মানষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেয়াটা জরুরি। এটা করতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এর পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমও খুব সামান্য বলে তারা মনে করেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, এই দুর্যোগের সময় সরকারের উচিত ছিল একটি সর্বদলীয় জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে ত্রাণ তৎপরতাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা। সিভিল প্রশাসনের সাথে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করলে চুরিসহ সকল অনিয়ম বন্ধ হয়ে যেত। সরকারের উচিত দ্রুত এ সব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আর বাম-ডান সকল ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাদের ত্রাণ তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করা।
এ বিষয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকার তার ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে ব্যর্থ হয়েছে। সারাদেশে ত্রাণ চুরির যে সব খবর মিডিয়াতে প্রকাশ হচ্ছে তাতে হারিলুট চলছে বলে মনে হয়। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নিতে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। শুধ মুখে মুখে সবাই বলছেন, ত্রাণ চুরির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাস্তবে তা এখনো দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগলোর ত্রাণ তৎপরতাও খুব একটা চোখে পড়ছে না। বিএনপি কিছু কিছু ত্রাণ দিচ্ছে কিন্তু তাদের অন্যান্য শরিকদলগুলোর কোনো ত্রাণ কার্যক্রম একেবারেই নেই। ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো শরিক দলেরই ত্রাণ কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। সরকারের বাইরে যে ১৪ দলীয় জোট আছে তাদেরও ত্রাণ কার্যক্রম নেই। এ ছাড়া সরকারের অন্যতম বৃহৎ শরিকদল জাতীয় পার্টিও নীরব। সব মিলিয়ে বিরোধীদলের ত্রাণ তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। তবে সব কিছুর পরও সরকারকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।
দেশের এই মহাদুর্যোগে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অসহায় গরিব মানুষের পাশে নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম মিত্র দল জাতীয় পার্টি। এ দলের বেশ কয়েকজন সরকারের মন্ত্রী সভায় ছিলেন। করোনা মহামারীর এই দুর্যোগকালে অসহায় গরিব মানুষের পাশে নেই তারা। এ দলের ত্রাণ তৎপরতা খুবই অপ্রতুল নয় বলে অনেকে মনে করেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদ। এ দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু দীর্ঘদিন এ জোট সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। তবে বর্তমানে এই দুর্যোগের সময় তার দলের ত্রাণ তৎপরতা চোখেই পড়ছে না। এ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তাদেরকেও এখন অসহায় মানুষের পাশে দেখা যাচ্ছে না। অন্যান্য বামপন্থী দলগুলোর কিছু কিছু তৎপরতা চোখে পড়লেও তা খুবই অপ্রতুল।
এ বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ইনকিলাবকে বলেন, গত ১১ মার্চ থেকে আমরা আমাদের সাধ্যতম ত্রাণ দিচ্ছি। আমাদের ছাত্র, যুব ইউনিট মাস্ক হ্যান্ড-স্যানিটাইজার বিতরণ করছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গোল চিহ্ন আঁকছে বিভিন্ন জায়গায়। সব মিলিয়ে আমাদের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে। তবে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারকেই সবচেয়ে বড় উদ্যোগ নিতে হবে। তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে জাতীয় ঐক্য গড়তে। সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করে যদি অগ্রসর হয়া যায় তাহলে সহজে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা যাবে।
রাজনৈতিক ময়দানের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির ত্রাণ তৎপরতা কিছু চোখে পড়লেও তাদের অন্যান্য শরিক দলগুলো একেবারেই নীরব। বিএনপি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নামে সারাদেশে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তবে এই দুর্যোগে তাদের এ তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত বলে অনেকে মনে করেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামি দীর্ঘদিন থেকেই নিরব রয়েছে। জাতির এই দুর্যোগে তারা অনেক নীরব রয়েছে। এ জোটের অন্য শরিকদল এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপাসহ অন্যান্য দলগুলোরও ত্রাণ তৎপরতা নেই বললেই চলে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদল, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিকল্প ধরা এ দলগুলোরও ত্রাণ কার্যক্রম চোখে পড়ে না। এর বাইরের যে সব ইসলামী দল রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কিছু ত্রাণ দিলেও তা খুবই সামান্য। এ ছাড়া খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিশসহ অন্যান্য দলের ত্রাণ তৎপরতাও নামমাত্র বলা চলে। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুস আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান পীর সাহেব চরমোনাই তাঁর নির্দেশে সারাদেশে জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রাম পর্যায়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আমরা অমুসলিমদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছি। আমরা ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সাংবাদিকসহ যারা ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন তাদের মধ্যে সাধ্যমত পিপিই বিতরণ করেছি। করোনায় মৃতদের দাফন-কাফন করতে চায় না অনেকে। আমরা জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করেছি। এ কমিটির লোকজন মৃত ব্যক্তির দাফন কাফনের ব্যবস্থা করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ