Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনাও খেলাপিরা পাবে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

করোনাভাইরাস মহামারীতে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্পের জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল (সিএমএসএমই) করেছে সেই তহবিলের টাকাও খেলাপিরা পাবে না। এমনকি যে সব ঋণ খেলাপি বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেওয়া সুযোগ নিয়ে তিন বারের বেশি তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন, তারাও এই প্রণোদনার অর্থ পাবে না। সঙ্কটকালীন সময়ের জন্য ঘোষিত এই প্রণোদনার অর্থ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, তাতে এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, যে সব ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধু সে সব প্রতিষ্ঠান এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মহামারীতে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এরমধ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্পে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিতে ২০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়। ওই প্রণোদনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে টাকা জোগানোর জন্য। এ খাতের প্রণোদনা সংক্রান্ত যে নীতিমালা রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করেছে তাতেও ওই তহবিলের টাকা খেলাপিরা পাবে না। এমনকি যে সব ঋণ খেলাপি বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেওয়া সুযোগ নিয়ে তিন বারের বেশি তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন, তারাও এই প্রণোদনার অর্থ পাবে না।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্পে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল খাতের প্রণোদনা নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ দেবে। এক্ষেত্রেও সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে ঋণ গ্রহিতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে সুদের ৪ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।
ঋণের বণ্টন ও মেয়াদ : কোন তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ভিত্তিক সিএমএসএমই ঋণস্থিতির সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এক অর্থ বছরে এই প্যাকেজের আওতায় চলতি মলূ ধন হিসেবে ঋণ দিতে পারবে। যেহেতু প্যাকেজের আওতায় মোট তহবিলের পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে, সে কারণে প্রত্যেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ সীমার বিষয়ে এ সার্কুর্লার জারির তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্ট’কে অবহিত করবে। এর আওতায় সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করাসহ এর সুবিধা যাতে অধিক সংখ্যক উদ্যোক্তা পেতে পারেন এর সামঞ্জস্যতা বিধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনে উক্ত সীমা বৃদ্ধি/হ্রাস করতে পারবে। এই ঋণের সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে সিএমএসএমই খাতের উৎপাদন ও সেবা উপখাতকে প্রাধান্য দিতে হবে। তবে, ব্যবসা/ট্রেড ভিত্তিক মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। বার্ষিক মোট ঋণের ন্যূনতম ১৫ শতাংশ গ্রাম অঞ্চলে প্রদান করতে হবে। ৭০ শতাংশ কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে এবং অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ মাঝারি শিল্প খাতে প্রদান করতে হবে। মোট ঋণের কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে। এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে তিন বছর। কোনো একক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ এক বছর এ প্যাকেজের আওতায় সরকার হতে ভর্তুকি পাবেন।
ঋণ গ্রহীতার যোগ্যতা : শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগ (সিএমএসএমই)এ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। খেলাপি ঋণ গ্রহীতা এ সুবিধা পাবেন না। কোনো ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের কোন ঋণ মন্দ/ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত হওয়ার পর ইতোপূর্বে তিনবারের অধিক পুনঃতফসিলকৃত হলে এরূপ ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা পাবে না।
ঋণের সীমা ও মেয়াদ : ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ২০২০ সালের জানুয়ারি হতে পরবর্তী মাসসমূহের উৎপাদনের/বিক্রয়ের নিম্নমুখিতা যথাযথভাবে নিরূপন করে বিগত বছরের (এক/একাধিক) উৎপাদন/বিক্রি/টার্নওভারের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় চলতি মলূধনের পরিমাণ হিসাব করতে হবে।
উৎপাদন ও সেবা শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তারা যারা আগে ব্যাংক হতে চলতি মূলধন ঋণ গ্রহণ করেছেন সে সকল ঋণ গ্রহীতারা বিদ্যমান চলতি মূলধন ঋণের স্থিতির ৩০ শতাংশ বা সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরসহ বিগত তিন বছরের আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী গড় পরিচালন ব্যয়ের ৫০ শতাংশ, এ দুটির মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ চলতি মূলধন সুবিধা পাবেন।
ঋণের সুদ হার : এ ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুর্কি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করবে। ঋণের উপর সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে সুদ আরোপিত হলেও সরকার হতে প্রাপ্য ভর্তুর্কির সমপরিমাণ অর্থ ঋণগ্রহীতার দায় হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক প্রদেয় নির্ধারিত সুদ (৪ শতাংশ) নিয়মানুযায়ী যথাসময়ে পরিশোধিত না হলে সমুদয় আরোপিত সুদ/মনুাফা ঋণ গ্রহীতার দায় হিসেবে বিবেচিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ