পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারী করোনার প্রভাবে টালমাটাল বিশ্ব। ইউরোপ, আমেরিকার অর্থনীতিতে ধ্বস নামার উপক্রম। ইতোমধ্যে ফ্রান্স, জার্মানী মন্দায় পড়েছে। চীন সম্প্রতি অর্থনৈতিক দুরবস্থার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে বিশ্লেষকদের আশঙ্কার চেয়েও খারাপ চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৯৮৯ সালে জিডিপির প্রান্তিক তথ্য প্রকাশ শুরুর পর প্রথম ধসের মধ্যে পড়ল বিশ্বের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। ভারতের অর্থনৈতিক কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। পাশের ওই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমবে বলে আভাস দিয়েছে। করোনা প্রভাবজনিত সংকট মোকাবেলায় পথ খুঁজছে বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ফেডারেল রিজার্ভ বলছে, কিছু দিন আগেও বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার দিকে মোড় নিচ্ছে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল; কিন্তু এখন এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমদানি-রফতানি এমনকি প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে ইতোমধ্যে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। আর করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই এবার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমবে।
তবে গত ৩ এপ্রিল করোনার পরিস্থিতির মধ্যেও একটি সুখবর দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবি বলেছে, চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রবৃদ্ধি কমে গেলেও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। তবে বিশ্বব্যাংক গতকাল করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বাংলাদেশ কোন পরিস্থিতির মুখে পড়বে তার পূর্বাভাস দিয়েছে। বৈশ্বিক এই ঋণদান সংস্থার প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) চলতি অর্থবছরে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সংস্থাটির পূর্বাভাসে শুধু এ বছরই নয়, আগামী অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়াবে ১ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সঙ্গে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে একটু ঘুরে দাঁড়ালেও তা ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বা ৪ শতাংশের নিচেই থাকবে। এ পূর্বাভাস এমন এক সময়ে আসলো যখন বাংলাদেশ ১০ বছরেরও বেশি সময় টানা ৭ শতাংশের প্রবৃদ্ধির কোটা ছাড়িয়ে ৮ শতাংশের ঘর টপকে দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করে। বিশ্বব্যাংক ওয়াশিংটন সদরদপ্তর থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের ওপর এ প্রাক্কলন প্রকাশ করেছে। এতে এ তথ্য উঠে আসে। তবে সংস্থাটির ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস’ প্রতিবেদনের প্রাক্কলন অনুযায়ী, করোনার ধাক্কায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সাতটি দেশের অর্থনীতিতে বড় রকমের ধস নামতে পারে। এর মধ্যে পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের জিডিপি বাড়বে না বরং সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ইনকিলাবকে বলেন, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে এটা ঠিক। আগামী বছরেরটা নির্ভর করবে সরকারের রিকভারি ও করোনার প্রভাবের ওপর। এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২/৩ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। পুরোবিশ্ব বিপর্যস্ত। বাংলাদেশও স্থবির। প্রবৃদ্ধি হবে কিভাবে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগের বছরের প্রবৃদ্ধিইতো অর্জন করতে পারছিনা। নতুন করে প্রবৃদ্ধি হবে কিভাবে। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের বিষয়ে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক বলেন, কঠিন পরিস্থিতিতে পরে গেছি। কত তারাতারি এ থেকে উত্তোরণ হবে সেটা করোনার উপর নির্ভর করবে।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্বব্যাংক সবকিছু বিবেচনা করে সঠিকই বলেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বা সঙ্কট বিশ্বের ইতেহাসে কখনো তৈরি হয়নি। এটা চাহিদা ও যোগানোর ধাক্কা। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা লকডাউন না বললেও এক অর্থে লকডাউনের মধ্যে আছি। উৎপাদনের চাকা বন্ধ। আমাদের বড় আয় রপ্তানি। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্ব অচল। তাদের উপর নির্ভর করছে আমাদের রপআতনি ভাগ্য। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ফ্রান্স, জার্মানী মন্দার মধ্যে পড়েছে। আমেরিকাও নেতিবাচক অর্থনীতির পথে। চাহিদা অনুযায়ী যোগান না হওয়ায় পতনের মুখে বিশ্ব। যার প্রভাব দেশের রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, আমদানি ও বিনিয়োগের উপর পড়বে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই মুখ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, বর্তমান অবস্থা ২ মাস থাকে তাহলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হবে। আর এটা যদি ৪ মাস থাকে তাহলে ২ শতাংশ হবে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরণে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি ভেক্সিন ও সরাসরি ট্রিটমেন্ট না থাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে পরীক্ষা বাড়ানো, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করে চিকিৎসা ও আক্রান্তদের আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থার কথা বলেন। পাশাপাশি যারা দরিদ্রতার ঝুঁকিতে আছেন তাদের বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য আরও বাড়ানো। বিশেষ করে গরিব টার্গেট করে এই সাহায্যের পরিধি বাড়াতে হবে।
বিশ্বব্যাংক এক বিবৃতিতে বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্রমবর্ধমান মানবিক ক্ষতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিণতির মধ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের জনগণ, বিশেষ করে দরিদ্রতম ও হতদরিদ্র মানুষকে রক্ষা করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে দক্ষিণ এশিয়ায় আটটি দেশের প্রতিটি দেশ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দেওয়া, বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে আরও বেশি চাপের কারণে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি।
এই দ্রুত পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত অবস্থা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস উপস্থাপন করা হয়েছে, ২০২০ সালে আঞ্চলিক বৃদ্ধি ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে, যা চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। একই সঙ্গে গত ৪০ বছরে মধ্যে এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স হবে। যদিও ৬ মাস আগে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, এবার দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এখন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস নামিয়ে আনল বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে চলতি অর্থবছরে (নিজ নিজ দেশের) চারটি দেশের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে যাবে। দেশগুলো হলো আফগানিস্তান (মাইনাস ৫ দশমিক ৯ থেকে মাইনাস ৩ দশমিক ৮ শতাংশ), মালদ্বীপ (মাইনাস ১৩ শতাংশ থেকে মাইনাস সাড়ে ৮ শতাংশ), পাকিস্তান (মাইনাস ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে মাইনাস ১ দশমিক ৩ শতাংশ) ও শ্রীলঙ্কা (মাইনাস ৩ শতাংশ থেকে মাইনাস দশমিক ৫ শতাংশ)। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া নেপালে ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ভুটানে ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোর জন্য অগ্রাধিকার হলো ভাইরাসটি ছড়ানো আটকে দেওয়া এবং তাদের লোকদের রক্ষা করা। বিশেষত, দরিদ্রতম যারা স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য আরও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টভিগ শ্যাফার এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, কোভিড -১৯ সংকট এই জরুরি বার্তা দিচ্ছে যে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিগুলোকে সংকট শেষ হওয়ার পর ‘জাম্প স্টার্ট’ শুরু করতে হবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে এ যাবৎ কালের অর্জন বিফল হতে পারে।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, এই মহামারির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হবে। বিশেষ করে, পোশাক খাতে তৈরি পণ্যের জন্য জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাস, বেকারত্ব সৃষ্টি ও দারিদ্র্যকে আরও গভীর করে তুলবে।
শহুরে দরিদ্ররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে অতিরিক্ত দরিদ্রের সংখ্যা বেশি হবে। জাতীয় শাটডাউন ব্যক্তিগত ব্যবহারকে প্রভাবিত করবে। মাঝারি মেয়াদে প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার হওয়ার আশা করা হলেও, কোভিড-১৯ এর অভ্যন্তরীণ প্রাদুর্ভাব ও আর্থিক খাতের দুর্বলতা থেকে ক্ষতির ঝুঁকি রয়েই যাবে।
মহামারির প্রভাবের পরিমাণ সংকটের সময়কাল ও গৃহীত প্রশমন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করবে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন। বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্যের দিক-নির্দেশনা, উদ্দীপনা প্যাকেজ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত কাজ করেছে। সরকারকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করার জন্য, এ মাসের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাংক ‘কোভিড -১৯’ প্রাদুর্ভাব শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে ১০ কোটি ডলার অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে। একই সঙ্গেআমরা মহামারি মোকাবেলায় ও পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের প্রতিক্রিয়া জানতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ সচিব রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।