Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

করোনা সঙ্কটে বিশ্ব বাণিজ্যে যেভাবে পরিবর্তন আসবে

ইকোনমিস্ট | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

বিশ্বের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অনেক সময় অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। প্রতিটি সমস্যাই আলাদা হলেও উদ্যোক্তা এবং সংস্থাগুলো প্রত্যেকবারই তার সাথে মানিয়ে নিয়ে সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছে। তবে, বর্তমান সঙ্কটটি ব্যবসায়ীদের জন্য হতাশার। দেশগুলোতে চলমান লকডাউনের কারণে বিশ্বের জিডিপির ৫০ শতাংশেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, আগের মন্দার তুলনায় অনেক বেশি মারাত্মকভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পতন হচ্ছে।
লকডাউনগুলি থেকে বেরিয়ে আসার পথ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। নিয়মিত গ্রাহকদের হারানো, অনিশ্চয়তার কারণে উৎপাদন দক্ষতা কমে যাওয়া ও নতুন স্বাস্থ্য বিধিমালার কারণে প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে উঠেছে। দীর্ঘকাল ধরে ব্যবসা করে আসা সংস্থালোকে সঙ্কট পরবর্তী সময়ের নতুন পরিবেশে দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং এর প্রতিক্রিয়া তিনটি প্রবণতা ত্বরান্বিত করবে। সেগুলো হচ্ছে- আরও কার্যকর নতুন প্রযুক্তির গ্রহণ, মুক্ত বাণিজ্যের জন্য বৈশি^ক সাপ্লাই চেইনলো থেকে অনিবার্য পশ্চাদপসরণ এবং সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের উত্থান।

গত মন্দার সময়ে বড় আমেরিকান সংস্থাগুলোর বিক্রি দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। সবচেয়ে খারাপ চতুর্থাংশে মিডিয়ান ড্রপ ছিল বাৎসরিক ১৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা এক তৃতীয়াংশ কমেছে; আমেরিকার রেলপথ দিয়ে গাড়ি ও যন্ত্রাংশের চালান ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অনেক সংস্থার কাছে প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য কেবল তিন থেকে ছয় মাসের পর্যাপ্ত রসদ এবং নগদ থাকে। ফলস্বরূপ তারা কর্মীদের ছাটাই বা ছুটি দিতে শুরু করেছে। গত ২৮ মার্চ ১ কোটি আমেরিকান বেকারত্ব ভাতার জন্য আবেদন করেছিলেন। ইউরোপে প্রায় ১০ লাখ সংস্থা নিষ্ক্রিয় কর্মীদের বেতনের জন্য রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দাবি করেছে। লভ্যাংশ এবং বিনিয়োগ কমানো হচ্ছে। কারখানা বন্ধ এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে বিশে^র অনেক প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ইতালির লকডাউনের কারণে পনির থেকে জেট-টারবাইন সব উপাদানেরই বৈশ্বিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। হংকংয়ের সরকার বলেছে যে, বহুজাতিক সংস্থাগুলোর আদেশ বাতিল এবং বিল আটকে যাওয়ার কারণে দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যায় পড়েছে।

গত দুটি মন্দায়, বিশ্বব্যাপী প্রায় দশ শতাংশ মূলধন ভিত্তিক সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলো এখনও টিকে আছে তারাও তাদের শিল্প, মূলধন এবং সরকারী সাহায্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অনেক প্রযুক্তি সংস্থার চাহিদা বাড়লেও ছোট সংস্থাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমেরিকাতে ৫৪ শতাংশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে বা আগামী দশ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পুঁজিবাজারে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে। ছোট সংস্থাগুলোর জন্য মার্কিন সরকারের ৩৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্যাকেজের মাত্র ১.৫ শতাংশ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। ব্রিটেনেও এই প্রক্রিয়া ধীরভাবে চলছে। ব্যাংকগুলোও জটিল নিয়ম-কানুন এবং অসংখ্য লোনের আবেদন নিয়ে ধুঁকছে।

এই সঙ্কটগুলোর কারণে তিনটি প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। প্রথমত, নতুন প্রযুক্তিগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি। বিশ্ব্যাপি ই-বাণিজ্য, ডিজিটাল পেমেন্ট এবং রিমোট ওয়ার্কিংয়ের চাহিদা বাড়ছে। জিন-এডিটিং প্রযুক্তি সহ আরও নতুন চিকিৎসা উদ্ভাবন বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপী সরবরাহের চেইনগুলোর পরিবর্তন হবে, বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এগুলো আরও দ্রুততর হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্থানে থাকা কারখানাগুলো গুটিয়ে নিয়ে উচ্চতর স্বয়ংক্রিয় কারখানা ব্যবহার করে উৎপাদনে ঝুঁকে পড়বে, ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চাকরীর সুযোগ কমে যাবে। এই বছর সীমান্তে ব্যবসা বিনিয়োগ ৩০-৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে। বৈশি^ক সংস্থাগুলোর লাভ কমলেও আরও স্থিতিশীল হয়ে উঠবে। তৃতীয়টি হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদী আমদানি-রফতানি কম সুনিশ্চিত এবং আরও অবাঞ্ছিত হয়ে যাবে।

বর্তমানে বড় শিল্পপতিরা পারস্পরিক সহযোগিতা ও রাজনীতিবিদদের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। ভোটার, ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত কারণ এটি আরও বেশি কলুষতা, কম প্রতিযোগিতা এবং ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সৃষ্টি করছে। সমস্ত সঙ্কটের মতোই কোভিড -১৯ বিপর্যয় কেটে যাবে এবং সময়ের সাথে সাথে ব্যবসায়ে শক্তির এক নতুন তরঙ্গ উন্মুক্ত হবে। তবে এগুলো সরকারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা না পেলে এবং সংঘবদ্ধ চক্রের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেই সবার জন্য ভাল হবে।



 

Show all comments
  • Mr Rayman ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
    বাংলাদেশে করোনা নাই , তাই পরিবর্তনের কারন নাই
    Total Reply(0) Reply
  • Shantanu Chowdhury ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    এর পর শুরু হবে পৃথিবী জুড়ে দুর্ভিক্ষ। খাদ্যের হাহাকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Sumaya Sumaya ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    হে আল্লাহ জানিনা আমরা বেচে থাকব নাকি মরে জাবো
    Total Reply(0) Reply
  • M Fazlur Rahman ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    সবাই সতর্ক আর সচেতন থাকলে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে করোনা মহামারী হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mostak Ahmad ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত । সহীহ বুখারীঃ ২৮৩০ (সহীহ)
    Total Reply(0) Reply
  • Nure Azam ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    এই করোনাভাইরাসে বিশ্বের ৫০% অপরাধ কমে যাচ্ছে, ৪৫% বায়ুদূষণ কমছে, মানুষের শরীর আগের চেয়ে অনেক অনেক জীবাণুমুক্ত হচ্ছে, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অনেক ভালো দিক আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Tamzid Bin Zakir ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    করোনাভাইরাসে বিশ্ব বদলে যাবে যেমন হতে পারে বিশ্বের সব মানুষ কোন না কোন র্ধম পালন করে আবার অনেকে আছে কোন র্ধম পালন করো না।মানুষ তার নিজের র্ধমের নিয়ম কানুন মানতে শুরো করবে। এক সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শাসন কর্জ চলতো র্ধমীয় আইন দ্বারা । সেটি আবার পিরো আসতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Junaeid King Shaheen ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    আবার পৃথিবীকে আগের রূপে দেখতে পাবো। ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha Jafree ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    সবচেয়ে ভালো যা হতে পারে, তা হলো বৈশ্বিক মহামারির আতঙ্ক সমাজকে বাধ্য করবে ভোগের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টিকে মেনে নিতে। ভবিষ্যৎ সংক্রামক রোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের রক্ষার স্বার্থেই যৌক্তিক মূল্য হিসেবে তাকে এটি মেনে নিতে হবে। দশকের পর দশক ধরে আমরা আমাদের সীমাহীন ক্ষুধাকে পরিতৃপ্ত করতে পৃথিবীর বুকে শিল্প-স্থাপনার অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ ঘটিয়েছি। বন্য প্রাণীদের বাধ্য করেছি নিজেদের গুটিয়ে নিতে। এই সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে বন্য প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সংযোগ বেড়েছে। আর এভাবেই সার্স-কোভ-২, ইবোলা, জিকার মতো বন্য প্রাণীর দেহে থাকা শত শত অণুজীব মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে, যারা মহামারির কারণ হয়ে উঠছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Syed Alam ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারি করপোরেশনগুলোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে তারা বিদ্যমান বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার বিপরীতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কার্যকারিতার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা খণ্ডিত সরবরাহ ব্যবস্থার বদলে আরও বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নতুন এই ব্যবস্থায় মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পেলেও এই রূপান্তর অবশ্য ভোক্তা ও করপোরেশন উভয়েরই ব্যয় বাড়াবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kausar Ahmed Chowdhury ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    করোনাভাইরাস যে পৃথিবীকে স্থায়ীভাবে বদলে দেবে, তার কিছু নমুনা ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, যা হয়তো আরও বেগবান হবে। যেমন এখনই কোনো কোনো প্রবেশপথের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কণ্ঠস্বর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মহামারি পড়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা শুরু করেছেন মহামারির পূর্বাভাস, চিকিৎসা ও এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে বিস্তর গবেষণা। ইতিহাস অবশ্য আরেকটি বিষয়েও শিক্ষা নিতে বলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • H.M Siddique ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:২১ এএম says : 0
    অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বব্যাপি বেকারত্ব মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ