Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাপে অনলাইন বাজার

চাহিদার শীর্ষে কাঁচা ও মুদি বাজার : ডেলিভারি দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছুই অচল। ঘরবন্দি গোটা দেশের মানুষ। করোনার সংক্রমণ এড়াতে দোকানপাট ও বাজারের জন্য বেঁধে দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময়। ফলে ঘরবন্দি সচেতন মানুষ সংক্রমণ এড়িয়ে চলতে বাজারের পরিবর্তে ই-কমার্সকেই বিকল্প হিসেবে বেঁছে নিয়েছে। ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার করে পেয়ে যাচ্ছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর অধিবাসীদের একটি বড় অংশই এখন ঝুঁকছেন অনলাইন বাজারে। ফলে এই মাধ্যমে গত কয়েকদিনে কেনাকাটা বেড়ে গেছে ৭গুণ। হঠাৎ করেই পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডেলিভারি দিতে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিগুলো। অধিক সংখ্যক অর্ডার এবং স্বল্প সংখ্যক ডেলিভারি কর্মী থাকায় সময়মতো গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছাতে পারছেনা তারা। এজন্য অর্ডারের তিন থেকে চার দিন পর পন্য হাতে পাচ্ছেন ক্রেতারা। এছাড়া একই সাথে বেশি সংখ্যক মানুষ ওয়েবসাইটিতে ভিজিট করার কারণে মাঝে মাঝে অনেকেই সাইটে প্রবেশও করতে পারছেন না।

ক্রেতাদের অভিযোগ, অনলাইন মার্কেটে পণ্য অর্ডার করার পর দুই-তিন দিন চলে গেলেও ডেলিভারি পাচ্ছি না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করলেও পাওয়া যাচ্ছে না কোন সদুত্তর। চালডালডটকমে মুদি পণ্যের অর্ডার করার পর নির্দিষ্ট সময়ে অর্ডার না পাওয়া তারেক রায়হান বলেন, তাদের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে ঢাকা শহরের যেকোন স্থানে এক ঘণ্টার মধ্যে পণ্য পৌঁছে দেয়া হবে। কিন্তু দুই দিন (গতকাল পর্যন্ত) অতিক্রম হলেও এখনো পণ্য হাতে পাননি। তাদের প্রতিষ্ঠানে ফোন দিলে কেউ রিসিভও করে না। ফলে খাদ্যদ্রব্য শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে আছেন তিনি। চালডালের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন আরও অনেকে।

মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ই-কমার্সে পোষাক-পরিচ্ছদ, প্রসাধনী পণ্যের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে করোনার প্রকোপ ও লকডাউন শুরু হওয়ার পর চাহিদার শীর্ষে ওঠে এসেছে খাদ্যদ্রব্য ও মুদি পণ্য। এ ক্ষেত্রে সবেচেয়ে চাপে আছে বাংলাদেশি অনলাইন মুদি এবং খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘চালডালডটকম’। চালডালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ বলেন, করোনাভাইরাসে প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমাদের অর্ডার বাড়তে থাকে। আগে যেখানে আমাদের প্রতিদিন অর্ডার আসতো তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার এখন সেটি ১৮ থেকে ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ডেলিভারি কর্মী সংখ্যা কম। প্রতিদিন এতো সংখ্যক ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য যেগুলো বাকি থাকছে তা পরবর্তী দিনে দেয়া হচ্ছে। এতে সময় কিছুটা বেশি লাগছে।

তিনি আরও জানান, আমরা ওয়েব সাইটে জানাচ্ছি যে, কেউ যেনো নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী প্রয়োজনের বেশি না কিনে, আবার নিজেরাও দেখছি এমনটা কেউ যেনো না করে। তিনি জানান, ডেলিভারির জন্য আরো বাড়তি জনবল, যানবাহন নেওয়া হয়েছে। ওয়েব সাইটে দেয়া এক ঘণ্টায় ডেলিভারি বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে জিয়া বলেন, একজন গ্রাহক যদি তিন দিনে ¯øট না পান তাহলে দেরি হবে।

চীনের আলিবাবা গ্রুপের মালিকানাধীন অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজডটকমডটবিডিতেও ক্রেতার চাপ বাড়ছে। দারাজ বাংলাদেশের হেড অব পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন শায়ন্তনি তিশা বলেন, আমাদের মূল কম্পানি আলিবাবা চীনে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিল, আমরা এখন সেগুলো বাংলাদেশেও নিচ্ছি। আমাদের পুরো ডেলিভারি টিমকে ওয়্যারহাউসে ঢোকানোর আগে তাপমাত্রা পরিমাপ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি সংক্রমণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পর একটি পণ্য ডেলিভারিতে পাঠানো হচ্ছে। ডেলিভারির আগে আবার সেটি সংক্রমণমুক্ত করে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অনলাইনে আগে আমাদের আড়াই লাখ মানুষ আসত, এখন সাড়ে তিন থেকে চার-সাড়ে চার লাখ মানুষ আসা শুরু করেছে। দেশের ভেতরে পণ্যভেদে তিন থেকে পাঁচ দিনে সরবরাহ করে থাকি।

সুপারশপ মীনা বাজারের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মীনাক্লিকে অর্ডার করে অনেকে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী শাহীন খান বলেন, ওয়েবসাইটে ভিজিটর বেড়ে গেছে অনেক। সক্ষমতার চেয়ে অর্ডার পড়ছে অনেক বেশি। আর লোকবলের সমস্যাও আছে। ২৫ তারিখ ছুটি ঘোষণার পর অনেকে চলে গেছে। আমরা এর মধ্যেই লোকবল সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি শিগগিরই এটা সমাধান হয়ে যাবে।

অনলাইন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম ‘অথবা ডটকম’ এর হেড অব অপারেশনস উল্লাস হক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্ডার আগের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ডেলিভারির ক্ষেত্রে আমরা কাস্টমারের কাছ থেকে সময় নিচ্ছি। এছাড়া কিছু করার নেই।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সূত্র জানায়, ই-কমার্স খাতে গত কয়েক বছরে প্রায় ২০ হাজার দেশীয় উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের ই-কমার্সের লেনদেন ছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে প্রতিবছর ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ। অনলাইন কেনাকাটায় উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘দারাজডটকম’, বিক্রয়ডটকম, চালডালডটকম, অথবাডটকম, প্রিয়শপ, আজকেরডিল, স্বপ্ন, মীনাক্লিক, ইভ্যালি, বাগডুম, পিকাবো ও রকমারি।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এখন আমাদের দেশে ই-কমার্সে কেনাকাটার বড় অংশই দুই ঈদের সময়ে হয়ে থাকে। এছাড়া বৈশাখে কিছুটা চাপ থাকে। তবে সাধারণ সময়ে প্রতিদিন ২০ হাজারের কিছু বেশি অর্ডার হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে এই চাপ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকাতে কিছুটা সমস্যাও হচ্ছে। #



 

Show all comments
  • Aminul ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ৮:০৯ পিএম says : 0
    বর্তমানে এই সংকটময় মুহূর্তে অনলাইন প্লাটফর্মগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে মানুষকে ঘরে বসেই পণ্য বা সেবা ক্রয় , বিক্রয়ে উৎসাহিত করবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ