Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লকডাউনে রাজধানীতে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেলা!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

শনির আখড়ার গোয়ালবাড়ি মোড়। শনিবার বেলা দুইটা। যাত্রাবাড়ী থানার একটি গাড়ি দক্ষিণ থেকে মূল সড়ক শনির আখড়ার দিকে আসছিল। পুলিশের গাড়ি থেকে সাইরেন বাজানোর শব্দ শুনে সড়কে থাকা মানুষগুলো নিমেষেই উধাও। চায়ের দোকানসহ অপ্রয়োজনে খোলা রাখা বিভিন্ন দোকানে দ্রুত শাটার নামানোর শব্দ। পুলিশ এসে দেখল মূল সড়কে কোনও মানুষ নেই। দোকানপাটও সব বন্ধ। সবাই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরে থাকার নির্দেশনা মানছে। পরেই আবার দেখা গেল মানুষ বের হয়েছে। এ যেন টিভির কার্টুন ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেলা। পুলিশ দেখে মানুষ রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছে, আবার আইনশৃংখলা বাহিনী সরে গেলেই কিছু অবিবেচক মানুষ রাস্তায় নামছে। রাজধানীর অনেক স্থানেই দেখা যাচ্ছে এমন চিত্র। অবশ্য কোথাও কোথাও দেখা গেছে পুলিশ মাইকিং করে দোকান বন্ধ করছে।
যাত্রাবাড়ীর ভেতরের গলিগুলোর চিত্র অভিন্ন। কিছু দোকান অর্ধেক খোলা, কোনোটা পুরোপুরি। রাস্তায় সব বয়সের মানুষদের চলাফেরা। সায়েদাবাদে রীতিমত ভিড়। কোথাও কোথাও জটলা করে চলছে আড্ডা। গা ঘেঁষে বা কাঁধে হাত রেখে হাটছেন অনেকে। যেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।
যারা অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় ঘুরছেন, তারা রীতিমতো যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে আবার যে যার মতো করে ঘুরছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে লকডাউনে এ যেন কার্টুন সিরিজ ‘টম অ্যান্ড জেরি’র মতো অবস্থা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খোঁজ নিয়ে এমন খবর পাওয়া গেছে।
বিনা কারণে বাইরে ঘোরাফেরা করা এসব মানুষের প্রয়োজনে বের হওয়া নাগরিকরা নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন না। বিশেষ করে কাঁচাবাজারগুলোতে যাওয়ার পথে মানুষের ভিড় ঠেলে ঢুকতে হয় তাদের। শনির আখড়ায় দেখা গেল কাঁচাবাজার খোলা। কিন্তু সেখানে কেউ দূরত্ব বজায় রাখছেন না। ঘেঁষাঘেষি করে বাজারে পণ্য কিনছেন। ৭ দিন পর বাজার করতে আসা একজন জানান, পথে সাধারণ মানুষের অযথা ঘুরাফেরা চোখে পড়ার মতো। তিনি বলেন, আমি বাসা থেকে বের হয়ে বাজার পর্যন্ত আসতে অন্তত কয়েকটা জটলা পেয়েছি। যারা বসে আড্ডা দিচ্ছে। কোথাও কোথাও দল বেঁধে ঘুরছে। পুলিশের গাড়ি দেখলে আড়ালে চলে যাচ্ছে। টম অ্যান্ড জেরির মতো আচরণ করছে। টমকে দেখে জেরি যেমন দৌড়ে পালায় বা লুকানোর চেষ্টা করে, পুলিশকে দেখেও অযথা ঘুরতে বের হওয়া মানুষগুলো এমন আচরণ করছে।
বস্তি এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষদের ঘরে রাখা অনেকটা চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্রমেই ঢাকায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুরুতে যে হারে মানুষ রাস্তায় বের হতো, এখন কিছুটা হলেও কমেছে। তবে নিম্ন আয়ের লোকজন যেসব এলাকায় বসবাস করে বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানুষদের ঘরে রাখতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। লালবাগ, চকবাজার শহীদনগর, কামালবাগ, ইসলামবাগ, কামরাঙ্গিরচর এলাকাগুলো অনেক ঘনবসতিপ‚র্ণ। এসব এলাকায় মানুষ সন্ধ্যার পর একটু বের হতে চায়। আড্ডা দিতে চায়। বর্তমান গরম পরিস্থিতির কারণেও কিছু মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে ঘরে রাখার চেষ্টা করছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি করোনাভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে। অতএব মানুষের উচিত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ