Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সিলেট ত্রান বিতরনে বিবেচনায় নেই পরিস্থিতি

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ৪:০১ পিএম

সুজন-সুশাসন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের আওতায় বরাদ্দকৃত ত্রান বিতরনে তৃণমুলের মধ্যবিত্ত শ্রেনী বাদ পড়ছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতির মতোই তালিকাভূক্তরা সহায়তা নিচ্ছে বারবার। সংকটে পতিত মধ্যবিত্ত বা আতœমর্যাদাশীল ডে-লেবার শ্রেনীর মানুষকে আমলে নিচ্ছে না ওয়ার্ড সদস্যরা। সংকটে কাহিল সেই মানুষগুলোও লোকলজ্জা সহ আতœমর্যাদা হারানোর ভয়ে প্রকাশ্যে পেটের জ¦ালা তুলে ধরতে পারছে না। সে কারনে চাপা হাকাকার এখন তৃণমুলে বা গ্রামগঞ্জে। তিনি বলেন, বিশেষ টিম গঠন করে সেই লোকদের সহায়তায় নিশ্চিতে করতে হবে সরকারকে। সেই টিমে ভোটরাজনীতির মানসিকতায় আসক্ত জনপ্রতিনিধিদের বাইরে রাখতে হবে। গ্রাম্য মোড়লদের সরিয়ে দিতে হবে নতুবা একসময় মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষদের চলমান অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ঘায়েলে মেতে উঠবে তারা। নাগরিকদের সম্মান জানাতে হবে তার নিজস্ব পর্যায়ের মর্যাদায়। কল্যানকামী সরকারের এটাই সেবাধর্মী বৈশিষ্ট্য’। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ত্রান বিতরনে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী অংশগ্রহনের ঘোষনা কার্যত বাস্তব পরিণত হলে বিশেষ করে মধ্যেবিত্তের জন্য বিশেষ প্ওায়া হবে। বিতরনে তারা নামলে ফ্রেস তালিকা তারা তৈরী করবেন। চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড সদস্যদের নিজস্ব তালিকা

তাদের ভোটরাজনীতি নির্ভর। নতুনত্ব বা পরিস্থিতি বিবেচনায় তৈরী করা হয়নি। এই তালিকায় দুষ্ট মানসিকতায় তৈরী’। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে সঙ্কটে পড়াদের খাদ্য সহায়তা বিতরন নিয়ে অনিয়মের শেষ নেই। তৃণমুলে রয়েছে মারাত্বক ধান্ধাবাজি। ধান্ধাবাজির ঘটনাগুলো প্রকাশ হচ্ছে না। ভূক্তভোগীরা প্রকাশ করার সাহসও পাচ্ছে না, নিজস্ব সীমাবদ্ধতায়। করোনার আক্রমন ও ধারনা একেবারে নতুন হলেও খাদ্য বিতরন হচ্ছে পুরানো ধ্যান ধারনায়। সিলেট নগরীতে ‘খাদ্য ফান্ড’ গঠন করে নগরীর প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে এ সহায়তা প্রদানের কথা জানিয়েছে সিসিক। ৩১) মার্চ থেকে শুরু হয় খাদ্য বিতরন। তবে বিতরণ কার্যক্রমের শুরুতেই ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ ওঠেছে। কাউন্সিলররাও একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন। কাউন্সিলরা কেবল নিজ নিজ ভোটারদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোদ মেয়রকে আদেশ জারি করতে হয়- ভোটারভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ করা যাবে না। এমন নানা অভিযোগের কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছে দুর্দিনে মানুষকে সহায়তার এই শুভ উদ্যোগ। এদিকে, সরকারী বরাদ্দের ৪র্থ ধাপে সিলেটে আসে ২০০ টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা। সেই বরাদ্দ পৌছে যাবে উপজেলা হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে ওয়ার্ড সদস্যদের মাধ্যমে সংকট থাকা সাধারন মানুষের হাতে। কিন্তু বেশিরভাগ ওয়ার্ড সদস্যরা এ বিতরন নিয়ে ভোট রাজনীতি শুরু করেছেন। আগামী বছর সম্ভাব্য স্থানীয় ইউনিয়র পরিষদ নির্বাচন। সেকারনে টার্গেট করে নিজদের লোকদেও মধ্যে বিতরন করছেন বরাদ্দের চাল ও অর্থ। সরকার সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে ত্রান বিতরন করলে পুলিশকে যেন অবহিত করা হয়। সেই নির্দেশনাও আমলে নেয়া হচ্ছে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক ও সাংগঠনিক উদ্যোগে নিজস্বভাবেই বিতরন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে সামাজিক ও নিরাপদ দুরত্ব লংগন করছেন দেদারচ্ছে। এছাড়া অসহায়দের অধিকার তাচ্ছিল্যেও নজির দেখা যাচ্ছে। স্ব্ভাাবিক পরিস্থিতিতে সরকারী পূর্বেকার বরাদ্দের তালিকাভূক্তরা ঘুরে ফিরে সহায়তা ভাগিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু মধ্যভিত্তের লোকজন লোকলজ্জা ও আতœমর্যাদার কারনে অতি প্রয়োজন থাকা স্বত্ব্ওে মুখ ফুটে ত্রানের আ্ওয়তায় নিজদের অর্ন্তভূক্ত করতে পারছে না। সামাজিক মাধ্যমে নামক্ওায়াস্তে ত্রান বিরতন করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ফটোসেশনের দর্শনীয় ছবি। এতে অনেকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। কিন্তু এই শ্রেনীর সংকটাপন্ন মানুষ সেনাবাহিনী সহ পুলিশের অংশগ্রহনে ত্রান বন্টনের ঘোষনায় আশ^স্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এখনো ঘোষনার বাস্তবতায় চোখে পড়ছে না তাদের। সংকটে সহায়তার মতো তাদের সামাজিক ও আত্মমর্যাদার রক্ষায় বিশেষ খেয়াল রাখার কথা বলেছেন অনেকে। নাম প্রকাশে সিলেটের এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, ‘ত্রানে বেশিরভাগ প্রতিনিধিরা আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে ভোট ব্যাংক গড়তে মরিয়া হয়ে উঠছেন। বঞ্চিতরা প্রতিবাদ করতে পারছেনা না চলমান পরিস্থিতির কারনে। মধ্যবিত্তরা লোকজলজ্জার ভয়ে শংকিত। গ্রাম গঞ্চে চাপা আর্তনাদ চলছে। এছাড়া জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচননে টাকার খেলায় মত্ত হয়ে উঠলেও এই সংকটে গা-ঢাকা দিয়ে সরকারী বরাদ্দ নিয়ে কেবল ব্যস্ত। এর বাইরে তাদের যেন কোন কাজ নেই। অথচ তারা ইচ্ছে করলে, উদ্যোক্তা হিসেবে স্থানীয় বিত্তশালীদের সহায়তায় সংকটাপন্ন মানুষের পাশে থাকতে পারতেন। একই সাথে সামাজিক ও নিরাপদ দুরত্ব রক্ষার প্র্যাকটিসে ভূমিকা রেখে আমজনতাকে সচেতন করতে পারতেন। সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, সিলেটে গেলাপগঞ্জ ২ জন ্ও বিশ^নাথ উপজেলার ১ জন লোক ত্রান বিতরনে পুলিশের সহায়তা নিয়েছেন। বাকীরা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভাবে ত্রান কার্য চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে করোনায় স্বাস্থ্য নির্দেশনা ব্যাহতের আশংকা থেকেই যাচ্ছে। আমরা আশা করছি ত্রান সংশ্লিষ্টরা পুলিশের সহায়তায় মনোযোগি হবেন, তাদের সচেতন মানসিকতা আমজনতাকে সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা রাখবে। পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে সহায়তা প্রদানে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ