Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চাল চুরির মহোৎসব চলছে: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:২৩ পিএম

করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন দরিদ্র মানুষের জন্য সরকার যে পরিমাণ চাল বিতরণ করছে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এক্ষেত্রে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসাবে যোগ হয়েছে চাল চুরির মহোৎসব। গণমাধ্যমে প্রতিদিন যে পরিমাণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে তার চেয়েও চাল চোরের সংখ্যা বেশী। এমতাবস্থায় অবিলম্বে ত্রাণের চাল বিতরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে দ্রুততার সাথে পরিচালনার দাবি দলটির। তাতে হয়তো হতদরিদ্র, বেকার শ্রমিকরা উপকৃত হবে এবং জনগণের মধ্যে স্বস্তি আসবে। কেননা এখন রাজনীতি করার সময় নয়। বরং ভেদাভেদ ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সময়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ রোববার সকালে দলীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, অবিচার অনাচারের দুঃশাসনের জন্ম দেয়া হয়েছে আজ তার কুফল দেখতে পাচ্ছে সমগ্র জাতি। মরণঘাতী করোনাভাইরাস যখন প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজকে থমকে দিয়েছে তখন বাংলাদেশে চলছে দরিদ্র মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার মচ্ছব। তারা দেশের এতো উন্নয়ন করেছে, বিশেষ করে বিদ্যুতের উন্নয়নে দেশ নাকি আলোয় ঝলমল করছে। অথচ এই করোনা দুর্যোগে বিদ্যুতের অভাবে করোনার কীট উৎপাদন করতে পারছে না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। উপরন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে পত্রিকার পাতা জুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাল চুরির খবর প্রকাশিত হলেও এ পর্যন্ত কারো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির খবর আমরা পাইনি। যার কারণে এ লুটেরা গোষ্ঠী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের লাগাম এখনি টেনে ধরুন। না হলে জনগণ রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হবে। জাতির এই ক্রান্তিকালে যারা গরীবের হক মেরে খায় তারা দেশের শত্রু এবং মানবতার শত্রু। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন-করোনার চেয়েও আমরা বেশী শক্তিশালী। সেটিই প্রমাণিত হলো-করোনা রোগী শনাক্ত যতো ধরা পড়ছে তার চেয়েও বেশী ত্রাণের চাল চোর ধরা পড়ছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বাংলাদেশে। গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত দেশের ৩১ জেলায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। লকডাউনের কারণে সমগ্র দেশে কয়েক কোটি হতদরিদ্র এবং বেকার মানুষ অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে। করোনার বিস্তার রোধে সবাই ঘরবন্দি হয়ে থাকায় দিনমজুর, ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমিকসহ গরিব মানুষের একটি বড় অংশ কর্মহীন। রোজগার বন্ধ হয়ে পেটে ভাত জোগানোই মুশকিল। তাদের এই কষ্ট লাঘবের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পমূল্যে চাল এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতো বড় মহামারির মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজরা ত্রাণ ও স্বল্পমূল্যের চাল আত্মসাৎ করছে। সরকারী হিসাবে দেশের খাদ্য গুদাম গুলোতে ১৭.৫১ লাখ টন চাল মজুদ আছে। এই পরিমাণ চাল দিয়ে ৩/৪ কোটি মানুষকে ৬ মাস অনায়াসে খাওয়ানো সম্ভব। অথচ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় পড়ে থাকছে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় একটি হৃদয়বিদারক মর্মস্পর্শী ঘটনায় সবাই নির্বাক হয়ে গেছে, সেখানে আফরোজা খাতুন নামে এক শিশু ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।
রিজভী বলেন, যেখানে কে বাঁচবে কে বাঁচবে না-তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, যেখানে জীবন এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত সেখানে কী করে আওয়ামী লীগের লোকজন ত্রাণের মালামাল চুরি করে খায়? লোভ লালসা এদের লজ্জা-শরম, বিবেক-বোধ সব কিছু অন্ধ করে দিয়েছে। এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই ত্রাণের চাল চুরি। চাল চুরির ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই বেশি জড়িত। সারাদেশে গত ৯ দিনে অন্তত: ২ হাজার ২৬৪ বস্তা সরকারি ত্রাণের চাল চুরির খবর পাওয়া গেছে। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে- চট্টগ্রামে সরকারি চাল আত্মসাতের বড় ঘটনা ঘটছে। বুধবার থেকে পূর্ববর্তী এক সপ্তাহে একটি সিন্ডিকেট বস্তা পাল্টে খোলাবাজারে অন্তত: ২০ হাজার বস্তা সরকারী চাল বিক্রি করে দিয়েছে বলে জেনেছে পুলিশ।
তিনি ব্র্যাকের সাম্প্রতিক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দেশে চরম দারিদ্র্য অবস্থার আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে খাবার নেই। ২৯ শতাংশ মানুষের ঘরে আছে মাত্র ১ থেকে ৩ দিনের খাবার। দেশ ‘উত্তম’ আয়ের নাকি ‘মধ্যম’ আয়ের, দেশের অবস্থা এখন ‘মিরপুর’ নাকি ‘সিঙ্গাপুর’ এখন এইসব কাগুজে বিতর্কের সময় নয়। এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, প্রায় তিন কোটি মানুষের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া। অথচ এর পরিবর্তে জনগণ দেখছে ভিন্ন চিত্র। কথায় বলে ‘কারো ঘর পোড়ে, কেউ আলু পোড়া খায়..’। অনেকেরই হয়তো মনে আছে যে, স্বাধীনতাত্তোরকালেও একবার এমন সীমাহীন দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ-দুরাচারে পতিত হয়েছিল বাংলাদেশ। অনাহারী-বুভুক্ষ মানুষের সেই তীব্র যন্ত্রণা আর ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছিল কবি রফিক আজাদের কবিতায়। তিনি লিখেছিলেন, ‘গাছপালা, নদী-নালা, গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত..., উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী, আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ, ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো’।
রিজভী জানান, আমরা দলীয়ভাবেও সারাদেশে সাধ্যমতো জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এটাই আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশ। বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও তাদের সাধ্যমতো জনগণের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর মতো পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বসে নেই। আপনারা জানেন, শহীদ জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং ড্যাব এর উদ্যোগে গত শুক্রবার থেকে দেশের ৮৪টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে জন্য পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেছে। সাধ্যমতো এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কর্মসূচির প্রাক্কালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘ডাক্তার নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী’দের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ দলীয় কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থের উর্ধে উঠে এই মুহুর্ত থেকেই আমাদের প্রতিটি নাগরিককে একে অপরের সহায়তায় ভূমিকা রাখা এখন সময়ের দাবি’। সুতরাং আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এখন রাজনীতি করার সময় নয়। এখন দলীয় স্বার্থের উর্ধে উঠে মানুষের সহায়তায় হাত বাড়ানোর সময়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সময়মত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার মাশুল হিসাবে করোনা তৃতীয় ধাপ অতিক্রম করছে। বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেছেন, সব দেশকে অতিমাত্রায় সাবধান হতে হবে। তড়িঘড়ি করে লকডাউন প্রত্যাহার হলে করোনা পরিস্থিতির আরো ভয়াবহ পুনরুত্থান হবে। সুতরাং সরকারের একটি সমন্বিত কর্মপন্থা প্রয়োজন। সরকারকে সবার আগে ভাবতে হবে যে, কোটি কোটি রোজগারহীন মানুষের মুখে কিভাবে খাদ্যের যোগান দিবে? দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের রেশন সুবিধা কখন নিশ্চিত করবে? আগামী মাসে ধান কাটার মৌসুমে ধান কাটার লোকের যোগান কিভাবে দিবে। গতবছর যেহেতু ধান কাটার লোকের অভাবে কৃষকরা ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। এমনটা যেন এই দূর্যোগের বছরে আর না হয়, সেটা এখন থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভাইরাসটির ভয়াবহতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে সকল ভেদাভেদ ভুলে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ