Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

করোনা সংকট দক্ষিণাঞ্চলের চাষিদের সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে

লাখ লাখ টন তরমুজ মাঠেই পচে যাবার আশংকা

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২০, ৪:৫০ পিএম

করোনা প্রতিরোধে চলমান লাগাতর ছুটির কবলে দক্ষিণাঞ্চলের তরমুজ চাষিরা মারাত্মক বিপর্যয়ে বিনিয়োগ তুলতে পারছে না। ন্যায্য দাম না পাওয়া সহ নানা প্রতিবন্ধকতায় দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম অর্থকরী রসালো ফসল তরমুজ-এর আবাদ সাম্প্রতিককালে ক্রমশ হৃাস পাবার মধ্যে এবার ভাল ফলনের পরেও চাষীদের মাথায় হাত উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে পাইকারের অভাবে মাত্র ৫টা কেজি দরে তরমুজ বিক্রী করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা। ফলে মুনফা দুরের কথা উৎপাদন ব্যায় তুলে আনাই দরুহ হয়ে পড়ছে। বেশীরভাগ মাঠের কাছেই কোন পাইকারের দেখা নেই। পাইকারের বক্তব্য তারা তরমুজ কিনে কি করবেন ? করোনার কারনে পরিবহন সংকট সহ বাজারে ক্রেতার অভাবে আড়তে তরমুজ কিনছে না। আর ক্রেতা না থাকায় খুচরা বিক্রেতারাও আড়ত থেকে তরমুজ কেনায় তেমন অঅগ্রহ নেই।
অথচ অধীক ফলন, মিষ্টতায় পরিপূর্ণ ও উৎকৃষ্ট গুনের কারনে আধুনিক জাতের উচ্চ ফলনশীল তরমুজের জনপ্রিয়তা যথেষ্ঠ। বর্তমানে দেশে ইউরোপীয়, প্রাচ্য ও গ্রীষ্ম মন্ডলীয় ‘ সুইট ফেস্টিবল ও ফ্লোরিডা জয়েন্ট, টপইল্ড, গ্লোরী, কঙ্গো, চার্লসÑগ্রে, ইমিরিয়েল, জুবলী, সুপার ডেলিকেট ও সুপার বেবী’ নামের একাধীক উন্নত জাতের তরমুজের আবাদ হচ্ছে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের আবাদ সম্প্রসারনের পরিবর্তে ক্রমশ হৃাস পাচ্ছে। গত বছর দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় যেখানে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১৮ লাখ ৬৫ হাজার টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল। এবার সেখানে আবাদ ২৪ হাজার হেক্টরের কিছু বেশী। ফলে ফলন ভাল হলেও উৎপাদন ১২ লাখ টনের বেশী হচ্ছে না বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সূত্রের মতে, ২০১০-১১ সালে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের জেলাগুলোতে ১৮হাজার ৪২৯হেক্টর জমিতে প্রায় ৭ লাখ ৭৯ হাজার টন তরমুজ উৎপান হয়। যা ২০১১-১২তে ২১ হাজার ৫৩৩ হেক্টরে উন্নীত হয়। উৎপাদনও দাড়ায় প্রায় ১০লাখ টনের কাছাকাছি। ২০১২-১৩তে দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের আবাদ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বৃদ্ধি পেয়ে দাড়ায় ৩১ হাজার ৪২৪ হেক্টরে। উৎপাদনও ছিল প্রায় ১৩লাখ ৩৬হাজার ৭২৬টন। নানা প্রতিকুলতায় ২০১৩-১৪ বর্ষে আবাদ প্রায় ৩১ হাজার হেক্টরে হ্রাস পেলেও উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪০ টনেরও কিছু বেশী ছিল। ফলে আবাদ প্রায় ৫শ হেক্টর হ্রাস পেলেও উৎপাদন প্রায় ১৩ লাখ ৪০ হাজার টন অতিক্রম করে।
দেশের বেলে দো-আঁশ থেকে এটেল দো-আঁশ পর্যন্ত সব ধরনের মাটিতে তরমুজের ভাল আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। এমনকি নদ-নদীবহুল দক্ষিনাঞ্চলের নোনা পানিমূক্ত চরাঞ্চলের পলি মাটিতেও এ রসালো ফলের ভাল ফলন হচ্ছে। তরমুজ-এর গাছ বর্ষজীবী, দিবস দৈর্ঘ নিরপেক্ষ ও লতানো প্রকৃতির । ৫.৫ থেকে ৭.০ পিএইচ মাত্রার জমি এ ফসলের জন্য উপযোগী। তবে কোন অবস্থাতেই একই জমিতে পর পর ২-৩বছরের বেশী তরমুজ আবাদ না করার পরামর্শ কৃষিবীদদের। এতে রোগ বালাইয়ের আশংকা বৃদ্ধি পায়।
গত বছর শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই প্রায় ১৮ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হলে দু দফার অকাল অতি বর্ষনে ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা এলাকার ফসল বিপর্যয় ঘটে। অনেক তরমুজ চাষীয় সর্বশান্ত হয়ে পরেন। ফলে এবার আবাদ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হৃাস পেয়েছে বলে মনে করছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
কিন্তু আবহাওয়া অনুকুল সহ কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ভাল ফলন হলেও করোনার কারনে দর পতনে দক্ষিণাঞ্চলের তরমুজ চাষীদের নিরব কান্না শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। মাঠ পর্যায়ের ফরিয়াদের দাবী তারা ৫টা কেজি দরে তরমুজ কিনলেও মাঠে থেকে নৌকায় তুলতে ৩ টাকা এবং নৌকা ভাড়া বাবদ আরো ৫ টাকা খরচের পরে তা ১৫ টাকা কেজির বেশী বিক্রী করতে পারছেন না। আর পাইকাররা আড়তে তুলে তা বিক্রী করতে আরো টাকা খরচের পরে ২২-২৩ টাকাও প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রী করতে পারছে না। খুচরা বিক্রেতারা আড়ত থেকে তাদের দোকানে নিয়ে তুলতে আরো ২-৩ টাকা খরচের পরে ৩০টাকা কেজি দরেও তরমুজ বিক্রী করতে পারছেন না ক্রেতার অভাবে। ফলে এবার তরমুজ নিয়ে মাঠে চাষী থেকে খুচরা বিক্রতা পর্যন্ত কেউই সস্তিতে নেই। তবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির কবলে চাষিরাই। ফরিয়ার অভাবে অনেকতরমুজ এবার মাঠেই পচে যাবার শংকা ক্রমশযোরদার হচ্চে। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন দুটি প্রথমত ক্রেতার অভাব, দ্বিতীয়ত পরিবহন সংকট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ