Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতি

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে দেশে ৪২৪ জন আক্রান্ত ও ২৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষার পরিধিও বাড়ানো হচ্ছে। গতকালও ১ হাজার ১৮৪টি নমুনা পরক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্সা করা হয়েছে ৭ হাজার ৩৫৯টি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম ও মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা সেবার পরিধি বাড়াতে কাজ করছেন। আর এর ধারাবাহিকতায় রাজধানীসহ সারাদেশে বেশকিছু হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবার জন্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী ও এর আশপাশের ১২টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে সাতটি সরকারি এবং পাঁচটি বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া গত বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা দিয়েছে তাদের ৬৯টি মেডিকেল ২৪ ঘন্টা রোগীদের সাধারণ সেবা প্রদান করবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে ছয়টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২৪টি ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) শয্যা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে। এদিকে এখন পর্যন্ত ঢাকার ভেতরে নয়টি ও ঢাকার বাইরে আটটি প্রতিষ্ঠান করোনার নমুনা পরীক্ষা করছে। এছাড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

সূত্র মতে, করোনা সংক্রমণের বিষয়টি সামনে রেখে স্বাস্থ্য বিভাগ সারাদেশে চিকিৎসা পরিধি বিস্তৃত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত ৩০ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এ-সংক্রান্ত একটি তালিকাও তৈরি করা হয়। আটটি বিভাগের তালিকায় থাকা হাসপাতালগুলো হলো- ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতাল, বাবুবাজারের মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুর লালকুঠি হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এই ছয়টি হাসপাতালে এক হাজার ৪০০ শয্যা রয়েছে। একই সঙ্গে আইসিইউ শয্যা আছে মাত্র ৫৬টি। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা এবং কাঁচপুরের সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ১৫০ সাধারণ শয্যা এবং ১১টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ফেনী, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চাঁদপুর, নোয়াখালী প্রভৃতি এলাকায় সর্বমোট ৮২৮ শয্যার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে।
একই সঙ্গে ময়মনসিংহে ৮৫০ শয্যার প্রস্তাব করা হয়েছে। বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী মিলে ৫৪১ শয্যার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় মোট এক হাজার ২০০ শয্যার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বিভাগে পাঁচটি আইসিইউ শয্যারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

খুলনার ১৫০ শয্যার ডায়াবেটিক হাসপাতাল এবং পাঁচ শয্যার আইসিইউ প্রস্তুাব করা হয়েছে। রংপুর কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, গাইবান্ধা মিলে ৭৮৭ শয্যার প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আট বিভাগে চার হাজার ৩৭৬ সাধারণ শয্যা এবং ৩১ আইসিইউ শয্যার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে সারাদেশে ৬৪ জেলার সকল উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে-৪৭০টি প্রতিষ্ঠান এবং এর মাধ্যমে তাৎক্ষনিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের সেবা প্রদান করা যাবে ২৪ হাজার ৪৯২ জনকে।

করোনার নমুনা পরীক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ঢাকার মধ্যে আর্মড ফোর্সেস ইন্সটিটিউট অব প্যাথলজি, বিএসএমএমইউ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, আইসিডিডিআরবি, আইদেশী, আইপিএইচ, আইইডিসিআর এবং ন্যাশনাল ইন্সিটিউট অফ ল্যাবরেটরী মেডিসিন।
ঢাকার বাইরে চট্রগ্রামের বিআইটিআইডি, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ এবং শের-এ-বাংলা মেডিকেল কলেজ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচাক প্রফেসর ডা. সানিয়া তাহমিনা ঝোরা জানিয়েছেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের সক্ষমতা বেড়েছে। সারাদেশের ৬৪ জেলার সকল উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে কোয়ারেন্টাইনের সেবা প্রদান করা যাবে ২৪ হাজার ৪৯২ জনকে। তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মজুত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) রয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭২টি। যখনই যেখানে পিপিইর প্রয়োজন হচ্ছে, আমরা পাঠাচ্ছি। সানিয়া তাহমিনা বলেন, আইসোলেশনের যে সংকট ছিল, তা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি বাড়ানোর জন্য। এই মুহুর্তে আমাদের প্রস্তুত আছে ঢাকা মহানগরীতে ১৫৫০, সারাদেশে ৭ হাজার ৬৯৩টি আইসোলেশন। পাশাপাশি বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেট এবং দিয়াবাড়িতে ৪টি বহুতল ভবনে আইসোলেশন হাসপাতাল তৈরি হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমাদের চেষ্টার কোন ত্রæটি নেই। এখন সবাইকে সবার দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে পাচ্ছি করোনা চিকিৎসার সরঞ্জামাদি নিচ্ছি। বাইরে থেকে চাহিদা মাফিক পাওয়া কষ্ট হচ্ছে। কারণ পুরো বিশ্বই বিপাকে। তারপরও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে উল্লেখ করেন আবুল কালাম আজাদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ