পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং ইরশাদ করেন:
لَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا১৭.
বাংলা অনুবাদ: ‘আর জমিনে বড়াই করে চলো না; তুমি তো কখনোই জমিনকে ফাটল ধরাতে পারবে না। এবং উচ্চতায় কখনো পাহাড় সমান পৌঁছাতে পারবে না।’ (সুরা : বনী ইসরাইল, ১৭:৩৭)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষ খুবই দুর্বল। সে ততটুকুই করতে পারে যতটুকু করার তাওফিক বা সক্ষমতা, সামর্থটুকু আল্লাহ তায়ালা দিয়ে থাকেন। তাহলে কেন মানুষের এত অহঙ্কার! কেনই বা বেপরোয়াপনা! দম্ভ আস্ফালন!
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, হযরত মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে আমারই পোশাক। গর্ব-অহঙ্কার হচ্ছে আমারই চাদর। তাই যে ব্যক্তি এ দুইয়ের কোনোটি নিয়ে টানাটানি করবে, তাকে আমি কঠোর শাস্তি দেবো’ (সহিহ মুসলিম)। এখানে বলা প্রয়োজন, আল্লাহ তায়ালার কথাগুলো যখন বান্দাহর নিকট হাদীস শরীফের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে, সেগুলো হাদীসে কুদছি হিসেবে সবিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।
হাদীসে এসেছে- ‘অহঙ্কার হচ্ছে- সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে চুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা’। (সহিহ মুসলিম)।
অহঙ্কারের প্রকাশ, ভাবভঙ্গি বা প্রতিফলন যেভাবে ঘটে:
১) কথাবার্তা-চালচলনের মাধ্যমে-
মানুষের কথাবার্তা, আচার-আচরণের মধ্যে অহঙ্কার প্রকাশ পায়। যখন কেউ নিজেকে তার কথাবার্তা-চালচলনে স্মার্টনেসের জন্য মনে মনে নিজেরই তারিফ করে, নিজের মধ্যে গর্ববোধ করে এবং নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা বা উত্তম মনে করে তখন সে অহঙ্কারই করলো।
জ্ঞানী নবী হযরত লোকমান (আ.) তার ছেলেকে বহুমূল্যবান কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। সেগুলো আল্লাহ তায়ালা কোরআনে উল্লেখ করেছেন এভাবে- অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না। পৃথিবঅতে গর্বভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কোন দাম্ভিক অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। জমিনে চলার সময় তুমি মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো। এবং কন্ঠস্বর নিচু করো, নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর’। (সুরা লুকমান ৩১:১৮-১৯।
২) ঠাট্টা বিদ্রুপ, চোগলখোরি, গীবত করা-
অন্যকে নিয়ে উপহাস করা, তিরস্কার করা, অন্যের গীবত করা প্রভৃতি বিষয়ের মধ্যে মানুষের অহঙ্কারের প্রকাশ ঘটে। যখন কেউ অপর ব্যক্তিকে নিয়ে সমালোচনা করে তখন সে বোঝায় যে, সে নিজে এসব দোষ থেকে মুক্ত। তখন নিজেকে বড় করে এবং অন্যকে ছোট করলো।
৩) দরিদ্র অসহায়দের সাথে মেলামেশা না করা-
রাসুলে করীমের (সা.) যুগে মক্কার কুরাইশদের অনেকেই এই কারণে ইসলাম গ্রহণ করেনি যে, এরফলে তাদেরকে সামাজিকভাবে নিচুস্তরের লোকদের সাথে উঠাবসা করতে হবে। তাদের কর্তৃত্ব, প্রাধান্য আর বড়ত্ব তখন থাকবে না। তারা অন্যদের সমান হয়ে যাবে। সা‘দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আমরা ছয় ব্যক্তি রাসুলের (সা.) মজলিশে উপস্থিত ছিলাম। তখন মুশরিকরা রাসুলকে (সা.) বলল, তাদের দূরে সরিয়ে দাও যাতে তারা আমাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার না করে। তারপর আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করলেন- ‘আর তুমি তাড়িয়ে দিয়ো না তাদেরকে, যারা নিজ রবকে সকাল-সন্ধ্যায় ডাকে, তারা তার সন্তুষ্টি চায়। তাদেও কোন হিসাব তোমার উপর নেই এবং তোমার কোন হিসাবও তাদের উপর নেই। া তাদেরকে তাড়িয়ে দিলে তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরআল আন‘আম, ৬:৫১)
৪. ভুলের উপর অটল থাকা-
অহঙ্কারী ব্যক্তি নিজের মতের উপর অটল থাকে। তাতে যদি ভুল থাকে এবং অন্যকেউ যদি সংশোধন করে দেয়, তবুও সে নিজেকে শোধরায় না। সে মনে করে সে যাই করছে তাই সঠিক। এমনকি সুস্পষ্ট প্রমাণকেও সে অস্বীকার করে নিজের দাম্ভিকতার কারণে।
৫) অন্যের নিকট থেকে সম্মান ও সালাম কামনা করে। কিন্তু অন্যকে নিজে সালাম কিংবা শ্রদ্ধা সম্মান দেথায় না।
অহংকারের পরিণাম-
বিভিন্ন কারণে দুর্বল ঈমানের মানুষের মধ্যে অহঙ্কার প্রবেশ করাটা অস্বাভাবিক নয়। যেমন, কারও অঢেল সম্পদ আছে। সেই অবস্থায় সে দরিদ্রদের ছোট চোখে দেখে। তাদেরকে নিচু শ্রেণির মানুষ, ছোটলোক মনে করে। আবার কারও যদি বিদ্যার ভাণ্ডার থাকে সে অশিক্ষিতদেরকে ছোট চোখে দেখে। অহঙ্কার ঢুকে পড়া স্বাভাবিক হলেও এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ।
এর ভয়াবহতা সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার মনে একটি অণু পরিমাণও অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম)।
হারিসা ইবনু ওহাব খুযায়ী (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) বলেন-, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতীদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? (তারা হলেন): ঐ সকল লোক যারা অসহায় এবং যাদের হীন মনে করা হয়। তারা যদি আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বসে, তাহলে তা তিনি নিশ্চয়ই পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা হলো: রুঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক।’ (সহিহ বুখারী)।
অতএব কোনো অবস্থাতেই মানুষের অহঙ্কার করা শোভা পায় না। তা অযৌক্তিক বটে। কেননা মানুষ যা কিছু অহঙ্কার করবে বা করে তার সবই আল্লাহ তায়ালার দান। সবকিছু তাঁরই। তাই অহঙ্কার একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই করতে পারেন। যে ব্যক্তি অহঙ্কারের অনুপযুক্ত হয়েও অহঙ্কার করে সে মূলত আল্লাহর সাথে প্রতিযোগিতা করার অপচেষ্টা করে। আর এর পরিণতি খুবই মারাত্মক।
আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) ও আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘শক্তি তাঁর (আল্লাহর) কাপড়, গর্ব তাঁর চাদর, যে কেউ এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার (আল্লাহর) সাথে প্রতিযোগিতা করতে চায়, আমি (আল্লাহ) তাকে শাস্তি প্রদান করব’। (সহিহ মুসলিম)।
অতএব অহঙ্কার মানুষের জন্য নিন্দনীয়। অগ্রহণযোগ্যও। কিন্তু যার অহঙ্কার করার কিছুই নেই তারপরও সে যদি অহঙ্কার করে তবে তা খুবই আশ্চর্যজনক ও অত্যধিক গুরুতর অপরাধ। এমন ব্যক্তির ক্ষমা পাওয়ার আশা ক্ষীণ। কেননা হাদীসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না; বরং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হলো বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী বাদশা আর অহঙ্কারী দরিদ্র।’ (মুসলিম)।
কাজেই একজন মানুষের জন্য জাহান্নামের শাস্তি অপেক্ষা ভয়াবহ আর কী হতে পারে। সুস্পষ্টভাবে হাদীসে উল্লেখ এসেছে, অহঙ্কারীর স্থান জাহান্নামে। এমনকি তার মধ্যে যদি অনু পরিমাণ অহঙ্কার থেকে থাকে। পরকালের শাস্তি ছাড়াও অহঙ্কারীর জন্য দুনিয়াতেও অনেক শাস্তি রয়েছে। অহঙ্কারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ব্যর্থ করবেন। তাকে মানুষের চোখে ছোট, হেয় প্রতিপন্ন ও নিকৃষ্ট করে দেবেন। যদিও সে চাইবে সবার দৃষ্টিতে বড় হতে।
অহঙ্কারের চিকিৎসা-
অহঙ্কার অন্তরের একটি ব্যাধি। শারীরিক ব্যধি যেমন আমাদের জন্য ক্ষতিকর, অন্তরের ব্যাধি তারচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কেননা এটি মানুষকে চূড়ান্ত বিপর্যয় তথা আল্লাহ তায়ালার সাথে কুফরী করার মতো মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। তার শারীরিক ব্যাধির মতো অন্তরের ব্যাধিরও চিকিৎসা প্রয়োজন।
১. আল্লাহ তায়ালা প্রকৃত মালিক-
মানুষকে স্মরণ রাখতে হবে যে, তার যেসব নিয়ামত আছে সেগুলোর একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ তায়ালা দয়াকরে তাকে কিছু নিয়ামত দিয়েছেন। আর তিনি যখন ইচ্ছা তা নিয়েও নিতে পারেন। কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রিযিক সম্প্রসারিত করেন এবং যাকে চান সঙ্কুুচিত রিযিক দান করেন। কিন্তু এরা দুনিয়ার জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র।’ (সূরা রা’দ: ২৬)। তাই এমন অবস্থায় ব্যক্তির জন্য অহঙ্কার তো দূরের কথা তার উচিৎ আল্লাহ তায়ালার দানের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত থাকা।
২. সমৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ-
আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত প্রতিটি নিয়ামতই ব্যক্তির জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। তিনি এই জীবন-মৃত্যুসহ সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। কোরআনে এসেছে, ‘তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম।’ (সূরা মূলক- ৬৭:২)।
তাই পার্থিব কোনো কিছু নিয়েই অতিরিক্ত খুশি হওয়া উচিৎ নয়। আবার পার্থিব কোনো ক্ষতির জন্যও খুব বেশি দুঃখিত হওয়া উচিৎ নয়। কোরআনে এসেছে, ‘যাতে তোমরা আফসোস না কর তার উপর যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং েেতামরা উৎফুল্ল না হও, তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন। আর আল্লাহ তায়ালা কোন উদ্ধত ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।’ (আল হাদীদ, ৫৭:২৩)।
আল্লাহ তায়ালা যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন তার উচিৎ এগুলোকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করা। হারাম পথে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকা। যাকে সৌন্দর্য দান করেছেন তার উচিৎ কৃতজ্ঞচিত্ত হওয়া। এর দ্বারা অন্যদের ফিতনায় আক্রান্ত করার ব্যাপারে সতর্ক থাকা। আর যে এগুলো নিয়ে অহঙ্কার করল সে তার পরীক্ষায় ব্যর্থ হলো। তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
৩) বিনয় অবলম্বন করা-
বিনয় অহঙ্কারের বিপরীত। কারও যদি অহঙ্কারের ভয় হয় তাহলে তার অবশ্যই উচিৎ বিনয় অবলম্বন করা। হযরত ওমর (রা.) একদা মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে লোক সকল! বিনয়ী হও। আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয় তিনি তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। সে নিজের কাছে ছোট মনে হলেও মানুষের চোখে সম্মানী হয়। আর যে ব্যক্তি অহঙ্কার করে আল্লহপাক তাকে হেয় করে দেন। সে মানুষের নজরে তুচ্ছ হয় তখন নিজের কাছে বড় মনে হয়। শেষে সে মানুষের কাছে কুকুর ও শুকুর অপেক্ষা ঘৃণিত হয়ে যায়। (মিশকাত)।
৪) দোয়া করা ও আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া-
দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়া যে কতোখানি কার্যকর তা মানুষের পক্ষে ধারণাই করা সম্ভব নয়। আমাদের উচিৎ এই হাতিয়ারটিকে কাজে লাগানো। নিজেদের ও অন্যদের জন্য দোয়া করা। অহঙ্কার থেকে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রাার্থনা করা। স্বয়ং মহানবী (সা.) আল্লাহর কাছে এর জন্য দোয়া করেছেন। যুবাইর ইবনে মুতয়েম হতে বর্ণিত- তিনি রাসুল (সা.)-কে একবার সালাত আদায় করতে দেখেন। তখন তিনি তাঁকে এই কথাগুলো বলতে শোনেন- ‘আল্লাহ তায়ালা সবকিছু হতে বড়, আল্লাহতায়ালা সব কিছু হতে বড়, আল্লাহ তায়ালা সব কিছু হতে বড়। আর সর্বাধিক প্রশংসা ও কেবল আল্লাহরই, সর্বাধিক প্রশংসা কেবল আল্লাহরই, সর্বাধিক প্রশংসা কেবল আল্লাহরই। আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আরও আশ্রয় চাচ্ছি তার অহঙ্কার, প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র থেকে।’ (ইবনে হিব্বান)
পরিশেষে গতকাল বুধবার বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক থেকে সাংবাদিক কাজী জেসিনের ‘করোনাভাইরাস: নতুন মহামারি কি পারবে নতুন, মানুষ-বান্ধব বিশ্বের জন্ম দিতে?’ শীর্ষক সংবাদ ভাষ্যের শেষের অংশটুকু দিয়ে এই লেখটার ইতি টানছি।
কাজী জেসিন সাংবাদিক, নিউ ইয়র্ক
‘... এখন পৃথিবী হিমশিম খাচ্ছে কোভিড-১৯ মোকাবেলায়। কেউ জানে না এর শেষ কোথায়। ঘরে বসে প্রতিটা মানুষ এক অজানা শত্র“কে মোকাবেলা করছে। আর যার হাতে পয়সা নেই, খাবার নেই, যে সরকারের কোনো সাহায্য পাবে না সে হয়তো করোনাতে না হলেও, না খেয়ে মারা যাবে। হয়তো তারও করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে।
পুরো পৃথিবী যেন এক হয়ে চিত্রায়িত করছে আলবেয়ার কাম্যুর উপন্যাস ‘দ্য প্লেগ’।
নভেল করোনাভাইরাস শুধুমাত্র এক জীবাণু নয়। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার মানুষে মানুষে বৈষম্য, ভোগবাদ, পরিবেশ বিনষ্টকারী, প্রকৃতি বিরুদ্ধ এক অসুখের নাম, কোভিড-১৯।
বর্তমান অবস্থাকে এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে। এই নভেল করোনাযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবী কেমন হবে কেউ জানে না। নতুন পৃথিবী কি প্রস্তুত হবে একটি জনবান্ধব, পরিবেশ-বান্ধব বৈশ্বিক পরিবেশ তৈরি করতে?
যতদিন বিশ্বব্যবস্থা মানুষের চেয়ে প্রকৃতির চেয়ে গুরুত্ব দেবে মুনাফা স্ফিতীকরণে, যতদিন ভোগবাদ গ্রাস করে রাখবে, ততদিন পৃথিবী এই জীবাণু থেকে মুক্তি পাবে না। শুধু নভেল করোনা মোকাবেলা নয়; টিকে থাকতে হলে নতুন পৃথিবীতে প্রয়োজন হবে শ্রমিক-বান্ধব, প্রকৃতি-বান্ধব সর্বোপরি মানুষ-বান্ধব এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা।
কিন্তু সেদিন কতদূর তা আমরা জানি না। মৃত্যুর সংবাদের মধ্যে বসে দিন গোনা দুরূহ কাজ।
*লেখক: উপ-সম্পাদক ও ব্যুরো প্রধান দৈনিক ইনকিলাব, চট্টগ্রাম ব্যুরো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।