Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পোশাকে রুচি ও শালীনতা

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম : দেহ ও মানসিকতার ওপর পোশাকের প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। নিজে রুচিসম্মত পোশাক পরার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদেরও রুচিসম্মত ও আরামদায়ক পোশাক পরতে দিন।
মৌলিকভাবে পোশাকের তিনটি উদ্দেশ্য থাকে। যথা- ১. আব্রু ঢাকা, ২. রোগজীবাণু কিংবা ক্ষতিকর উপাদান থেকে শরীরকে রক্ষা করা, ৩. শরীরের সৌন্দর্য বিকশিত করা। পোশাকে যাতে এ তিনটি উদ্দেশ্য অর্জিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আঁটসাঁট পোশাক পরা উচিত নয়। স্বাস্থ্যগত কারণে পোশাক ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক হওয়া উচিত। আঁটসাঁট পোশাক স্বাস্থ্যের জন্য বেমানান ও ক্ষতিকর। এতে শরীরে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় এবং শরীর ও বাইরের আবহাওয়া একই ধরনের গরম হয়ে থাকে। ফলে শরীর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
রং ও আলো বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, সাদা পোশাক হলো ক্যান্সার থেকে প্রতিরক্ষার সর্বোত্তম ওষুধ। এমনকি বিশেষজ্ঞগণের মতে, সাদা পোশাক পরিধানকারী ব্যক্তি ঘামের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ও ছোতো রোগের ন্যায় মারাত্মক ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে পারে।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভদ্র ও মার্জিত পোশাক হলো সাদা পোশাক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যে কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের শালীন পোশাক হলো সাদা রঙের ফুল হাতার পোশাক। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ চর্ম, এলার্জি এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের সর্বদা সাদা পোশাক পরিধানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ক্রোমোপ্যাথি নীতি অনুযায়ী সাদা পোশাক মস্তিষ্ক, হৃদপি- ও চর্মের সংরক্ষক।
এ কারণেই বিশ্বজুড়ে ডাক্তারগণ তাদের পোশাকের ওপর সাদা রঙের অ্যাপ্রোন পরিধান করে থাকেন। প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাদা পোশাককে বেশি পছন্দ করতেন এবং তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাদা পোশাক পরিধান করতেন।
আমাদের দেশে সুতি, রেশমি, পলিয়েস্টার, উলেন, নাইলন নানা ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সুতি কাপড়ই বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। সুতি কাপড় সব মৌসুমেই পরা যায়। সেই সাথে গরমের দিনে সুতি কাপড় শরীরের ঘাম শুষে নেয়। সাদা কাপড় পরিধান করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। তিনি যেমন ছিলেন উম্মতের রূহানী চিকিৎসক, তেমনি ছিলেন শারীরিক চিকিৎসকও। নানা উপকারিতার প্রতি লক্ষ্য রেখেই তিনি সাদা পোশাকের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে সুতি পোশাকের কী কী উপকারিতা রয়েছে এবং অন্যান্য পোশাকে কী কী অপকারিতা রয়েছে তা জানা থাকলে সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। সুতি পোশাকের কয়েকটি উপকারিতা হলোÑ
১. কারো শরীরে যদি আগুন লেগে যায় তাহলে শরীরে সুতি পোশাক থাকলে তাতে ক্ষতি কম হয়।
২. সুতি পোশাক গরম সহিষ্ণু হয় আর উষ্ণ দেশসমূহে অন্য কোনো সুব্যবস্থাই নেই।
৩. চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, যে শরীরে সুতি পোশাক থাকবে সে শরীর চর্ম রোগে আক্রান্ত হবে না। কেননা পলিয়েস্টার কিংবা নায়লন সুতার পোশাক শরীরের সঙ্গে ঘর্ষণে তীব্র গরম হয়ে যায়। আর এর তাপ শরীরের তাপের সাথে মিশে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে চর্ম রোগের সৃষ্টি হয়।
৪. সুতি পোশাক দেহের তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। যা দ্বারা চর্ম রোগ ও মানসিক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৫. পলিয়েস্টার কাপড়ের পোশাক দুটি মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করে। একটি হলো মহিলাদের লিকোরিয়া আর অপরটি হলো পুরুষদের যৌন রোগ।
পোশাক পরার আগে অবশ্যই সেটি ঝেড়ে নেয়া উচিত। কারণ সংরক্ষিত পোশাকে কোনো বিষাক্ত পোকামাকড় থাকতে পারে। জামা কাপড় ডানদিক থেকে পরিধান করা সুন্নত ও ভদ্রতার পরিচায়ক। প্রথমে ডান আস্তিন, তারপর বাম আস্তিন গায়ে জড়াবেন।
অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ পোশাক থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ অশালীন ও অভদ্রোচিত পোশাক দিল-দেমাগে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। ইদানীং আমাদের সমাজে রুচিহীন পোশাকের ছড়াছড়ি চলছে। পোশাকের দ্বারা অনেকাংশে ছেলে নাকি মেয়ে তা চেনাই যায় না। পুরুষের প্যান্ট-শার্ট, জিন্সের প্যান্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট মেয়েরা কিংবা মেয়েদের চুড়ি, দুল, লম্বা জুটিওয়ালা চুল, ওড়না ছেলেরা অবলীলায় পরে বেড়ায়। আবার অনেকে এ পরিবর্তনকে তথাকথিত আধুনিক বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে। এসব বিজাতীয় সংস্কৃতি ও বিধর্মী কালচার। এহেন গর্হিত অনুকরণ থেকে প্রত্যেকের দূরে থাকা উচিত।
ষ লেখক : আলোচক, বাংলাদেশ বেতার; সাবেক অধ্যাপক, হাজীগঞ্জ মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পোশাকে রুচি ও শালীনতা

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন