Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে

সিঙ্গাপুর ২০ হাজার অভিবাসী শ্রমিক কোয়ারেন্টাইনে, শনাক্ত : ১৩,২৩,৪৭৭ মৃত : ৭৩,৬০২ সুস্থ : ২,৭৭,২৫৬

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

ইতালির কর্মকর্তারা রোববার বলেছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিদিন করোনভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজ করার বিষয় শিগগিরই তারা বিবেচনায় আনতে পারবেন। ১৯ মার্চ ৪২৭ জনের মুত্যু থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে সর্বশেষ গত রোববার ৫২৫ জনে নেমে আসে। শনিবার ৬৮১ থেকে রোববার মৃত্যু ২৩ শতাংশ হ্রাস পায়।
এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ গতকাল রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডমিটার্স-এর গণনায় সর্বমোট শনাক্ত ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৪৭৭ জন। মৃতের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৬০২ জন এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে পরিবারে ফিরেছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ২৫৬ জন। ওদিকে গতকাল উল্লেখযোগ্য সংখ্য মৃত্যু ঘটেছে ফ্রান্সে ৮৩৩, যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫৩, ইতালিতে ৬৩৬, স্পেনে ৫২৮, ব্রিটেনে ৪৩৯, বেলজিয়ামে ১৮৫, ইরানে ১৩৬, হল্যান্ডে ১০১, সুইডেনে ৭৬ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮ জন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় দেশ হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের গন্ডি পার হয়ে গেছে। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃতের মোট সংখ্যা ১০ হাজার ৩৬৯ আর শনাক্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৬০ জন। এদের অর্ধেকই নিউ ইয়র্কে বলে জানা গেছে। গতকাল উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল প্রায় প্রতিটি দেশেই আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে। স্পেন ও ইতালিতে শনাক্তের সংখ্যা ৪ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
ইতালির আইএসএস জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক সিলভিও ব্রুসাফেরো সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মোড় ঘুরে গেছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে’।
মাসব্যাপী জাতীয় লকডাউন শিথিল করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদি এই তথ্যগুলো নিশ্চিত হয়ে যায় (আগত দিনগুলিতে), তবে আমাদের দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করতে হবে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইটালির দ্বিতীয় ধাপের লড়াই আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে যাতে ইতোমধ্যেই ১৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সুবিধার্থে অর্থনৈতিক ত্যাগ স্বীকার করে বহু প্রজন্মের ইতালির বৃহত্তম সঙ্কট সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছয় কোটি জনসংখ্যার দেশটি প্রথম পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশ যারা ১২ মার্চ স্বেচ্ছায় প্রায় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি পদব্রজে জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করে।
কর্মকর্তারা দেশটির ২২টি অঞ্চলে হাসপাতালের সেবা নিতে আসা কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যায় রোববার প্রথম হ্রাসের কথা জানিয়েছেন। শনিবারের ২৯,০১০ থেকে নেমে এসে রোববার সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা কমে ২৮,৯৪৯-এ দাঁড়ায়। আশঙ্কাজনক রোগী ভর্তির সংখ্যা শনিবারের ৩৯৯৪ থেকে রোববার ৩৯৭৭ জনে নেমে আসে যা পরপর দ্বিতীয় দিন হ্রাস পায়।
তবে ইতালিয়ান অর্থনীতিতে আঘাত পড়বে বিশাল। দেশের বড় ব্যবসায়ের লবি কনফিন্ডাস্ট্রিয়া অনুমান করেছে যে, মে মাসের শেষ অবধি লকডাউন অব্যাহত থাকলে এই বছরের উৎপাদন ছয় শতাংশ হ্রাস পাবে।
কনফিন্ডাস্ট্রিয়া বিশ্বাস করে, এর পরের কোনও অতিরিক্ত দুর্বলতা ইতালির মোট আউটপুট থেকে আরও ০.৭৫ শতাংশ কেটে যাবে - গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের যা তৃতীয় বৃহত্তম।
মহামারীটির বিরুদ্ধে ইতালির লড়াইয়ের দ্বিতীয় পর্বটি এমন এক স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতিনিধিত্ব করে যে, ফেব্রুয়ারিতে চীন থেকে ইউরোপে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কোনও পশ্চিমা দেশ চেষ্টা করেনি। ইতালির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অত্যন্ত সতর্ক, তারা জানেন যে, মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে, কারণ প্রত্যেকে ঘরে বসে প্রায় সমস্ত সময় পার করছেন। নাগরিক সুরক্ষা পরিষেবা প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেলি রোববারের মৃত্যু হ্রাসের ঘটনাকে ‘একটি সুসংবাদ; বলে অভিহিত করেছেন।
‘তবে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিচে নামানো উচিত নয়’, -তিনি সতর্ক করে বলেন।
পাঁচ দফা পরিকল্পনা
রোববার ইতালির গণমাধ্যম জানিয়েছে, কন্টির সরকার একটি পাঁচ দফা পরিকল্পনা তৈরি করছে যা ব্যবসায়ে পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত হবে এবং বেশিরভাগ সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থা কিছু সময়ের জন্য রাখবে।
ক্যারিয়ার ডেলা সেরা দৈনিক বলেছে যে, ইতালীয়দের ফেসমাস্কের সাথে কাজ করতে যেতে বলা হবে এবং সর্বসাধারণের মাঝে দুই মিটার (ছয় ফুট) দূরত্ব থাকতে হবে। কারো সামান্যতম কোভিড-১৯ উপসর্গ থাকলে তাকে অবশ্যই অবিলম্বে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং দু’সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ইতালি সারা দেশে আরও করোনভাইরাস বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
কন্টের সরকার কত হাজার মানুষ এই রোগের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে তা দেখার জন্য কয়েক হাজার প্রমাণিত রক্ত পরীক্ষার কিটগুলি সুরক্ষিত করতে চায়। অ্যান্টিবডিগুলির সাথে তাদের অনাক্রম্যতা থাকতে পারে এবং তাদের কাজ করার অনুমতি দেয়া হতে পারে। তবে ইতালির কাছে এই মুহূর্তে কোনও অনুমোদিত কিট নেই এবং কখন এগুলো পাওয়া যাবে তা অজানা। অ্যান্টিবডিযুক্ত লোকেরা এখনও এই রোগ ছড়াতে পারে কিনা তাও স্পষ্ট নয়।
সরকারের চ‚ড়ান্ত প্রস্তাবের মধ্যে ‘অ্যাপ্লিকেশন চুক্তি জোরদার করতে’ ফোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করাও রয়েছে। এটি একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ যা দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইসরাইলের মতো দেশে চেষ্টা করা হয়েছে। সূত্র : এএফপি
সিঙ্গাপুর ২০ হাজার অভিবাসী শ্রমিক কোয়ারেন্টাইন
এদিকে রয়টার্স জানায়, করোনাভাইরাস আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে সিঙ্গাপুরে ২০ হাজার অভিবাসী শ্রমিককে কোয়ারেন্টিন করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এজন্য শ্রমিকরা থাকেন এমন দুইটি ডর্মিটরি অর্থাৎ আবাসস্থলকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। রোববার দেশটিতে নতুন করে রেকর্ড ১২০ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। ডর্মিটরি থেকেই তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের পাঙ্গল এলাকায় এস-১১ ডর্মিটরিতে ১৩ হাজার শ্রমিক থাকেন, যেখানে ইতিমধ্যে ৬৩জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। ওয়েস্টাইল টোহ গুয়ান ডর্মিটরিতে ৬৮০০ শ্রমিক থাকেন যাদের মধ্যে ২৮জন আক্রান্ত হয়েছেন। এসব ডর্মিটরিতে মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নির্মাণ শ্রমিকেরা বাস করেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এই দুইটি আবাসিক ভবনে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের নিজেদের কামরা থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের রুম বা ফ্লোরে থাকে না, এমন মানুষদের সঙ্গেও মিশতে নিষেধ করা হয়েছে। ডর্মে থাকা শ্রমিকদের রোজ তিনবেলা করে খাবার দেয়া হচ্ছে, কিন্তু সেখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। একেক কামরায় বসবাসরত মানুষের সংখ্যা একেক ডর্মে একেক রকম। কিন্তু ২০১৫ সালে বিবিসির এক অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছিল কোন কোন কামরায় এমনকি ১২ জন পর্যন্ত অবস্থান করেন।
এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ যদিও আগাম সতর্কতামূলক অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু দেশটিতে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। আজ থেকে দেশটিতে লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে।



 

Show all comments
  • Faruk hossain ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    আল্লাহ সবাইকে সুস্ত রাখুন আমীন এবং আমরা সবাই বাড়িতে নামাজ আদায় করি বেশি বেশি দোয়া করি আল্লাহ কাছে জেন বালা মছিবত থেকে রক্ষা করে আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Maan Barua ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    করোনার প্রভাব পশ্চিমে বাড়বে পুর্বে কমতে পারে তাপমাত্রার কারনে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Zohor Ali ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    যাদের অন্তরে রয়েছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভয় তারা দুনিয়ার কোন পরিস্থিতি কে ভয় করে না কারন মৃত্য হবেই যে কোন উপায়ে বরং মৃত্যর পরের জিবন নিয়েই তাদের চিন্তা!
    Total Reply(0) Reply
  • Jahidul Islam Jahid ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    করোনা বিস্ফোরণ যে কোন সময় হতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • কাযী ইউসুফ ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    আজ করোনা মোকাবেলায় পরমানু অস্ত্র কোন কাজে আসছে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Dostogir ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    সরকারের কাছে অনুরোধ এখনই দেশকে পুরোপুরি লকডাউন করে দিন তা না হলে আমেরিকার স্পেনের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হবে বাংলাদেশের।
    Total Reply(0) Reply
  • Jakir hossain ৭ এপ্রিল, ২০২০, ৮:৫৮ এএম says : 0
    পুরো দেশ এখনই লকডাউন করে দেওয়া হোক না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmud Hassan ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৫ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমার রহমত নাজিল করুন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmud Hassan ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৫ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমার রহমত নাজিল করুন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • MD:Shakhauwat Hossain ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:০৬ পিএম says : 0
    আল্লাহ,আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।বেবেদেখুন বিশ্বের প্রবাব সালি দেশ গুলো(পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে দাদা গিরি দেখায়)তারাই আজ সবচে বেশি অসহায় ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ