পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও বাড়ছে করোনার ভয়াবহতা। এর সঙ্গে নতুন করে ভয়াবহতা বাড়িয়ে দিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের রাজধানী-গ্রাম আবার গ্রাম-রাজধানীতে গাদাগাদি করে ফিরে আসা। দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছুটির মধ্যে শুরুর দিকে ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তবে হঠাৎ করে পরীক্ষার আওতা বাড়ার পর থেকে দেশে গত দুই-তিন দিন ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। গত তিন দিন ধারাবাহিকভাবে ৯, ১৮ এবং সর্বশেষ ৩৫ জন। একদিনে নতুন ৩৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১২৩ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা এখন ১২ জন। নতুন রোগীর এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৩০ জন, পাঁচজন নারী। এখন পর্যন্ত যারা শনাক্ত হয়েছেন তার মধ্যে ঢাকায় ৬৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৩ জন। এক মাস আগে গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো কারো দেহে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক দিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে কেউ বাড়ি ফেরেনি। দেশে বর্তমানে ৫টি জেলায় ১৫টি ক্লাস্টারে কোভিড-১৯ রোগী রয়েছে।
বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও জ্যামিতিক হারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা। ভয়াবহতা বাড়ার পরও এখনও বহু মানুষ এটি নিয়ে সচেতন নন। আর এজন্য বিশেষজ্ঞরা পুরো দেশ লকডাউন ও সরকারের শক্ত অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, আগামী ১০-১৫ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভির দাবির প্রেক্ষিতে গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা, সদর ও বন্দর উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে করোনার ভয়াবহতা যেভাবে বাড়ছে তাতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এলাকাই নয়; সারাদেশ লকডাউন করা প্রয়োজন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
লকডাউন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে করোনাভাইরাস অন্যের শরীরে ছড়িয়ে যায়। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি আরও তিনজনকে আক্রান্ত করতে পারেন। তাঁদের প্রত্যেকের থেকে আরও তিনজনের শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। লকডাউন পিরিয়ডে এটা আটকানো যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাস দেশে এখন আর কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নেই। এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এখন আর দেশের এক স্থানে সীমাবদ্ধ নেই। এটি বেড়েই চলেছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স (নিন্স) এর পরিচালক প্রফেসর ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সরকারকে এখনই ‘শক্ত অবস্থান’ নেয়ার অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আহমেদুল কবীর বলেছেন, দেশে সামনে কঠিন সময় আসছে। এখনই পুরো দেশে লকডাউন করা জরুরি। এখনই পুরো দেশ লকডাউন না করা হলে এই ভাইরাস আগামী ১০ দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
গতকাল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এ নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট শনাক্ত হয়েছেন ১২৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে কারো বাড়ি ফেরার খবর নেই। আক্রান্তদের ৬৪ জন ঢাকার, নারায়ণগঞ্জের ২৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১২ জন নারায়ণগঞ্জের। মৃত তিনজনের একজন এক সপ্তাহ আগে শনাক্ত হন। তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। বাকি দু’জন হাসপাতালে আসার পরপরই মারা গেছেন। তাঁরা দু’জন নারায়ণগঞ্জের। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আক্রান্তদের ৩৫ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছর, তাঁদের মধ্যে ৩০ জনই পুরুষ। এর বাইরে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২১ জন আক্রান্ত হন।
ব্রিফিংয়ে প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, সারাদেশ থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৬৮টি। আর এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৭৩৯ জনকে নতুন করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং ৩০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ১০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ২৩ জনকে। ২৪ ঘণ্টায় হটলাইনে মোট ফোন কল এসেছে ৬৭ হাজার ২১০টি।
করোনায় মারা যাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক জালাল সাইফুর রহমানের বয়স ৪৮ বছর। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩০ মার্চ থেকে রাজধানীর কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ছিলেন। আক্রান্ত হওয়ার পর তার স্ত্রী ও সন্তানকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। করোনা লক্ষণ ধরা পড়ার পরও তিনি অফিস করায় তার সংস্পর্শে আসা কয়েকজনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
শনাক্ত ১২৩ জনের কোন জেলায় কত জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, এই মুহূর্তে আইইডিসিআর-এর কাছে তথ্য আছে ১২১ জনের। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৪, নারায়ণগঞ্জে ২৩, মাদারীপুরে ১১, চট্টগ্রামে ২, কুমিল্লায় ১, গাইবান্ধায় ৫, চুয়াডাঙ্গায় ১, গাজীপুরে ১, জামালপুর ৩, শরীয়তপুরে ১, কক্সবাজারে ১, নরসিংদীতে ১, মৌলভীবাজারে ১, সিলেটে ১, রংপুরে ১ এবং ঢাকার মহানগরীর বাইরে চার উপজেলায় ৪ জন করোনায় আক্রান্ত। সবমিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১৫টি জেলায় করোন শনাক্ত করা হয়েছে। তবে যে জায়গায় একাধিক রোগী আছে সেটাকে ক্লাস্টার বলা হয়। ঢাকা মহানগীর, গাইবান্ধা, নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুর এই পাচটি এলাকাকে ক্লাস্টার বলা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের চক্র নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মানুষকে বার বার সতর্ক করছেন। অথচ বিপুল সংখ্যক গার্মেন্টস কর্মী গাদাগাদি করে ট্রাকে ঢাকায় এসে আবার গাদাগাদি করে গ্রামে ফিরে গেছেন। ডাক্তারদের পরামর্শ প্রতিটি মানুষ কমপক্ষ্যে এক মিটার দূরত্বে থাকা আবশ্যক। অথচ গার্মেন্টস কর্মীরা গাদাগাদি করে ভ্রমণের মাধ্যমে কতজন আক্রান্ত হন সে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভয়ের আগামী ১৫ দিন গার্মেন্টস কর্মীদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে।
জাতনে চাইলে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে সংক্রমণ বিস্ফোরণ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে মনে হচ্ছে। লকডাউনের জন্য ছুটি ঘোষণার পর সবাই যেভাবে গাদাগাদি করে বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে রাজধানী থেকে গ্রামে গ্রামে চলে গেল, তারপর গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাড়িতে যাওয়া এবং দল বেঁধে হেঁটে, ট্রাকে-পিকাপে করে ফিরে আসা, এসব কারণে দ্রুতগতিতে এ ভাইরাস সামাজিক সংক্রমণের পর্যায়ে চলে গেছে। এছাড়া নানান ধর্মীয় সমাবেশ, লকডাউন ঠিকমতো পালন না করা, এসবও কারণ। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই অনেক আশঙ্কাজনক মনে হচ্ছে।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ২৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। পরে ব্রিফিংয়ে মহাপরিচালককে আক্রান্ত ও মৃত্যুও সংখ্যা নিয়ে দুই ধরনের তথ্য প্রকাশ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে একটি বৈঠক চলার সময় তিনি ফোন করেছিলেন। আইইডিসিআর তাঁকে তথ্য দিয়েছিল। সেটা সেই সময়ের জন্য ঠিক ছিল। পরে অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে শেষ আপডেট তথ্য জানানো হয়েছে। মৃতের সংখ্যা কেন কমে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে একই নাম দুবার লেখা হয়েছিল, আলাদা নামে। সে কারণেই আগে মৃত্যু বেশি দেখা গেছে। পরে যেটা দেয়া হয়েছে সেটাই সঠিক।
ব্রিফিংয়ের আগে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ‘করোনাভাইরাস’ প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে এক জরুরি বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে করোনা রোগের বিস্তার বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরো ২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৪ জন মারা গেছেন। সুতরাং আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন আমাদের সবার জন্যই অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনোভাবেই আগামী ১৫ দিন আমরা যেন কেউই অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হই। আর একান্তই যদি জরুরি কাজে বের হতেই হয় তাহলে মুখে মাস্ক ব্যাবহার না করে কেউই ঘরের বাইরে বের না হই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাচিপ সভাপতি প্রফেসর এম ইকবাল আর্সলান, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এম এ আজিজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ ও অন্যন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।