Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

উভয় সঙ্কটে শ্রমিকরা

১৪ এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

উভয় সঙ্কটে পড়েছে পোশাক খাতের শ্রমিকরা। ছুটি পেয়ে বেশিরভাগ শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত ও খাদ্য সংকটের ভয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আবার চাকরি হারানোর ভয়ে দূর দূরান্ত থেকে সেই একই ঝুুঁকি নিয়ে ঢাকায় এসেছেন তারা। পোশাক খাতের মালিকদের সিদ্ধান্তের দোলাচলে টালমাটাল পোশাক শ্রমিকরা। বিজিএমইএর ঘোষনার পরেও গতকাল সোমবারও অনেক কারখানা খোলা রাখার খবর পাওয়া গেছে। আবার বেশিরভাগ মালিকরা মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন ১৪ তারিখ পর্যন্ত। পুরোপুরি লকডাউনের কারণে তারা গ্রামে ফিরতে পারছেন না। আবার অনেক বাড়িওয়ালারা এসব শ্রমিকদের বাসায় থাকতে দিচ্ছেন না করোনা আক্রান্তের ভয়ে। এতে খাদ্য এবং বাসস্থান সঙ্কটে পড়ছেন পোশাক শ্রমিকরা। পোশাক মালিকদের এমন আচরনকে খুবই অমানবিক বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ রুবানা হক বলেন, এ পর্যন্ত ৩০ টি কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণের ফলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এক হাজার ১১৫ টি গার্মেন্টসে ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়আদেশ বাতিল হয়েছে। তাই এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক মালিকদেরও কিছুটা সময় দিতে হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় যখন জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তখন পোশাক কারখানা চালু করা হলে তা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে বলে মনে করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, কোনভাবেই সরকারের নিষেধ অমান্য করে পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে এমন টালবাহানা করা ঠিক হয়নি। আবার তাদের মার্চ মাসের বেতনও এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এ ধরনের প্রহসন না করলেও হতো। নিষ্ঠুরতম মাস এপ্রিলে আরেকটি নিষ্ঠুরতম কাজ করল পোশাক মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পিপিই, মাস্ক তৈরি ছাড়া বাকি সব গার্মেন্টস আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ রাখতে আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ। গতকাল সোমবার সব কারখানার মালিকদের কাছে এ ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ রাখতে বিজিএমইএর অনুরোধ অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে বিজিএমই-এর সব সদস্য প্রতিষ্ঠানকে যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের মার্চের মজুরিও দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সদস্যদেরকে সহায়তার জন্য সংগঠনটির দপ্তরে একটি সেল খোলা হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধকল্পে আগামী ৬ থেকে ১৪ এপ্রিল দেশের সব ইপিজেড এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এ সময় ইপিজেডের সব কারখানায় সমস্ত উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এর ফলে, ইপিজেডসমূহের মধ্যে অবস্থিত তৈরি পোশাকসহ মোট ৪৭৪টি কারখানা বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে এরপরেও গতকাল সোমবার অনেক কারখানাই খোলা রাখতে দেখা গেছে। এছাড়া বেশিরভাগ পোশাক কারখানার মালিকরা মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেননি। এর মধ্যে যেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে সেসব কারখানার শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। গতকাল অনেক কারখানাতেই শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেছে।
করোনাভাইরাসের বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সাভার ও আশুলিয়া শিল্প এলাকার শতাধিক পোশাক কারখানা খোলা থাকতে দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সাভারের হেমায়েতপুর, উলাইল, তেতুলঝোড়া, রাজফুল বাড়ীয়া, উলাইল, কর্নপাড়া আশুলিয়ার চারাবাগ, খেজুর বাগান, জিরাবো, ঘোষবাগ, জামগড়াসহ বিভিন্ন স্থানের পোশাক কারখানাগুলো খোলা রয়েছে। শ্রমিকদের অনিচ্ছা সত্বেও মালিক পক্ষ জরুরি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছেন অভিযোগ করে অনেক শ্রমিক বলেন, পোশাক মালিকরা করোনাভাইরাস কি তা যেন ভুলেই গেছেন। তারা আরও বলেন, কাজ না করলে পেটের খোড়াক জোগার হবে না। তাই করোনাভাইরাসে তাদের কিছু যায় আসেনা। গাজীপুরে অনেক কারখানায় সকাল থেকেই কাজ চলছে। এদিকে, রাজধানীতে বেশিরভাগ কারখানাই বন্ধ রয়েছে।
সেন্টার ফ্যাশন নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক লিমা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৭ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। দীর্ঘ ছুটি আর রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিবহন থাকায় চলে যান গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পরই বাঁধে বিপত্তি। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের পরিবহন। তিনি বলেন, গত ৪ এপ্রিল কারখানার সুপারভাইজর তাকে ফোনে বলেন কাল (রোববার) কারখানা খুলবে। সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে হবে। চাকরি বাঁচাতে সন্তান নিয়ে কোথাও ইজিবাইক, কোথাও পিকআপ কখনও আবার হেঁটে ঢাকায় আসেন। সুযোগ বুঝে ছোট পরিবহনগুলো তিনগুণ বেশি ভাড়া দাবি করে। এভাবে ঢাকায় এসে টাকা শেষ হয়েছে তার। কারখানাও বন্ধ, এখনও বেতন হয়নি, কবে হবে তাও জানেন না লিমা। বিমর্ষ অবস্থায় নিজ বাসাতেই বসে বসে সময় কাটছে তার। একই কথা জানান ভাষানটেক বস্তিতে বসবাস করা টাঙ্গাইলের হাসিনা, মরিয়ম, কিশোরগঞ্জের সুমন ও জামালপুরের হালিমা। গণপরিবহন না থাকায় ঢাকায় আসতেই সব টাকা শেষ হয়েছে তাদের। তাদের বক্তব্য, কারখানা বন্ধ করলে আগেই বলতে পারতো, কেন ঢাকায় আনা হলো।
এদিকে, বন্ধ হওয়া কারখানা শ্রমিকদের বাসায় নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান। তিনি বলেন, কারখানা যতদিন বন্ধ থাকবে সময়টা আপনারা নিজ নিজ বাসায় নিরাপদে অবস্থান করুন, যথাসময়ে বেতন পাবেন। বাসায় অবস্থানরত শ্রমিকদের বাসায় জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি শ্রমিক নেতাদের। শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, মাঝপথে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়, বন্ধের চেয়ে চালু রাখা ভালো ছিল। শ্রমিকদের বাসায় একাধিক সদস্যের বসবাস। কার কাছ থেকে কে আক্রান্ত হবে বলা কঠিন। এখন সরকারের উচিত হবে শ্রমিকদের বাসায় জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো। আর আইনশৃংখলা বাহিনীর উচিত হবে সবাই যাতে বাসায় নিরাপদে অবস্থান করতে পারে এটার নিশ্চয়তা দেওয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ