Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা ঠেকাতে এন্টিবডির খোঁজে ইতালি

শনাক্ত : ১২,৫২,৯৮২ মৃত : ৬৮,১৪৯ সুস্থ : ২,৫৭,১৩৯

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায় বর্তমানে ইতালিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ। এই অবস্থায় মৃত্যুহার ও অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে বিকল্প রাস্তা খুঁজছে দেশটি। তবে ‘মানুষ বনাম ভাইরাস’ যুদ্ধের কেন্দ্র এখন আমেরিকা। দেশটিতে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। ওয়ার্ল্ডমিটারস অনুসারে, গতকাল রাত পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ১২ লাখ ৫২ হাজার ৯৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৬৮ হাজার ১৪৯ জনের। আর সুস্থ হয়ে পরিবারে ফিরে গেছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৯ জন। এদিকে প্রতিদিনের মৃত্যুর তালিকায় রোববার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ৮০৫ জন। দ্বিতীয় স্পেনে ৬৭৪ জন এবং যুক্তরাজ্যে ৬২৪ জনে। ইতালিতে সংক্রমণ ও মৃত কমে এসেছে। গতকাল দেশটিতে ৪৭১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৩১৬ জন। এছাড়া বেলজিয়ামে ১৬৪, ইরানে ১৫১, হল্যান্ডে ১১৫ এবং জার্মানিতে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইতালি লকডাউন খুলে কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের দেহের অ্যান্টিবডি বা প্রতিরোধক কোষ সংক্রমিত ও অসংক্রমিতদের দেহে প্রতিস্থাপনের গবেষণার মধ্য দিয়ে মহামারি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, সংক্রমণের বিরুদ্ধে বিজয়ীদের রক্তে থাকা ভাইরাস প্রতিহত করার চিহ্নিত কার্যকর প্রতিরোধক কোষগুলি খুব শিগগিরই নির্ধারণ করে দেবে যে, কে কাজে যোগ দিতে সক্ষম হবে এবং কে হবে না, কে লকডাউনে এবং কে মুক্ত থাকবে এবং সেই আশা আরেক প্রস্থ ভয়ানক সংক্রমণের আশঙ্কাকে প্রতিহত করে কখন ও কীভাবে পুনরায় লকডাউন খুলতে হবে, সে বিষয়টিকে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জে পরিণত করেছে। তবে পুরো ধারণাটি বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞানের চেয়েও আরো আধুনিক।
গবেষকরা যদিও আশাবাদী, তবে অনিশ্চিত যে, অ্যান্টিবডি বাস্তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের ইমিউনিটি বা সুরক্ষা দেবে কি না। কিন্তু ইতালিয়ান রাজনীতিবিদরা দেশটির ক্রমবর্ধমান চরম অর্থনৈতিক মন্দার চাপ কাটাতে এই অনিশ্চয়তাকে লকডাউন খোলার সম্ভাব্য বাধা হিসেবে দেখতে নারাজ।
এ প্রেক্ষিতে, ইতালির উত্তর-পূর্ব ভেনেতো অঞ্চলের রক্ষণশীল দলের প্রেসিডেন্ট করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থ হয়ে ওঠা ইতালিয়ানদের জন্য একটি বিশেষ ‘লাইসেন্স’ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। দেশটির উদারপন্থী দলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেঞ্জিও অসংক্রমিতদের জন্য ‘কোভিড পাস’ চালুর বিষয়ে কথা বলেছেন। প্যারিস ডেকার্তেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক দর্শনের অধ্যাপক মিকেলা মারজানো বলেছেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে এটি মানবতাকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে, শক্তিশালী এবং দুর্বল। তবে এটাই প্রকৃত সত্য।’
ইতিমধ্যে ইতালির বিজ্ঞানীরা, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং এর বাইরেও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের অনুসরণ করে গবেষণা করে দেখছেন যে, অ্যান্টিবডিগুলি প্রকৃতই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা বা প্রতিরোধের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে কাজ করবে কিনা। বিদেশ থেকে আগত সংক্রমণের আরও একটি ধাক্কা প্রতিহত করার বিষয়কে গুরুত্বে রেখে চীন ধীরে ধীরে তার অর্থনৈতিক কার্যক্রম আবার চালু করেছে।
এদিকে, নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু এম কুওমো অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে একটি কৌশল কল্পনা করেছেন যেটির মধ্যমে অল্প বয়সীরা এবং যাদের রক্তে অ্যান্টিবডি রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে, তারা কাজে ফিরে যেতে পারবেন।
ব্রিটিশ সরকারও ‘ইমিউনিটি পাসপোর্টে’র ধারণাটির সাথে একমত হয়েছে, যদিও দেশটি সংক্রমণের মাত্রার সঠিক চিত্রটি পাওয়ার পরীক্ষাগুলি সম্পন্ন করতে এখনো হিমশিম খাচ্ছে। ইতালীয় জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের ইমিউনোলজিস্ট ড. লুইসা ব্র্যাচ্চি লউদিয়েরো বলেছেন, ‘অ্যান্টিবডিগুলি প্রতিরক্ষামূলক হওয়া উচিত, আমরা সবাই তা আশা করি। তবে আমাদের গাণিতিক নিশ্চিততা নেই।’
বর্তমান সঙ্কট মেকাবেলায় পৃথক নাগরিক অধিকার খর্ব করে শারীরিক যোগ্যতার মানদন্ড ব্যবহার করে সমাজের পক্ষে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেয়া সরকারগুলির জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে, এক পর্যায়ে প্রায় সকল সরকারকেই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশকে পুনরায় সচল করার মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে।
করোনা মহামারিতে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আমেরিকার। সেখানে প্রতি মুহূর্তে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষ স্থানে রয়েছে তারা। ইতিমধ্যেই আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষের। তার পরেই রয়েছে স্পেন। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার পরেই রয়েছে ইতালি (১ লাখ ২৪ হাজার ৬৩২ জন), জার্মানি (৯৬ হাজার ১০৮), ফ্রান্স (৯০ হাজার ৮৫৩) এবং চীন (৮২ হাজার ৬০২)। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইম্স, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • Muhammed Luman Ahmed ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সেরা ক্ষমতাশালী দেশ গুলো আজ সামান্য একটা ভাইরাসের নিকট আত্মসমর্পণ করছে। কোথায় সেই নাসার গবেষকেরা? কোথায় আজ পরমানু বোমার আবিষ্কারকরা? নেই কোনো অজুহাত, নির্বিঘ্নে স্বীকার করো হে মানব জাতি এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে আসুন মাফ চাই,তাহলেই মিলবে একমাত্র মুক্তির পথ। কারণ যে আল্লাহ এই মহামারি ভাইরাস সৃষ্টি করেছেন তিনিই দিতে পারেন একমাত্র মুক্তির পথ এবং এর মহৌষধ। আমিন।।
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Khan ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    আশ্চর্যজনক হলেও এটা-ই সত্য
    Total Reply(0) Reply
  • Zillur Rahaman ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    সুরা নং- ১০ ইউনুস, আয়াত-১২। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম "আর যখন মানুষকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকে। অতঃপর আমি যখন তার বিপদ দূর করে দেই, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে মনে হয় যেন তাকে কোন বিপদ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে ডাকেনি। এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য তারা যা আমল করত তা শোভিত করে দেয়া হয়েছে।"
    Total Reply(0) Reply
  • Md Selim Hossain ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    ৭২হাজার ৭৫০কোটি টাকার সরকারি প্রণোদনায় লকডাউনে কর্মহীন রেমিট্যান্স যোদ্ধা ও দূর্যোগে খাদ্যের যোগানদাতা কৃষক দুজনের জন্য কোন প্যাকেজ রাখা হয়নি
    Total Reply(0) Reply
  • Sakibul Hasan ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে করোনাকে হাড়িয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছেন তাদের শরীরে তো অবশ্যই এন্টিভাইরাস বা এন্টিবডি ক্রিয়েট হয়েছে, এরকম যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের শরীরের এন্টিবডি নিয়ে গবেষণা করে করোনা মোকাবেলার প্রতিষেধক বানানো সম্ভব নয়? যদিও আমি সাইন্স বা ডাক্তারি সম্পর্কে জ্ঞান নাই বললেই চলে তবুও নিজের চিন্তা থেকে প্রশ্নটি করা।
    Total Reply(0) Reply
  • Khan Ifteakhar ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
    দেশে করোনা ভাইরাসে যতটা মানুষ মরবে না.! কিন্তু করোনা গুজবে অতঙ্কে বিনা চিকিৎসায় অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে, দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধি পাবে, দেশ আর্থিকভাবে হুমকির মুখে পড়বে.!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ