Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ১৮, মৃত ১ জন

কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস পরীক্ষার আওতা বাড়ানোয় দেশে শনাক্তের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। একদিনে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৮ জন, যা এখন পর্যন্ত একদিনে আক্রান্ত হওয়া সংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি। মাত্র ৩৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই পরিমাণ রোগী শনাক্ত হলো। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগী সংখ্যা দাঁড়াল ৮৮ জনে। আক্রান্ত আঠারোজনের মধ্যে বারোজনই ঢাকার বাসিন্দা। এর আগে একদিনে সবচেয়ে বেশি ৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে পরীক্ষা সংখ্যা বাড়ানোর পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে কোভিড-১৯-এ বাংলাদেশে মোট মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়াল ৯ জনে। এদিকে করোনার কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তবে এখনো এলাকাভিত্তিক। ভাইরাসটি এখন রাজধানী ঢাকাতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ঢাকায় করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৪ এলাকা। এরমধ্যে রয়েছে- নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, টোলারাবাগ ও বাসাবো। গতকাল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। অধিদফতরের এমআইএস মিলনায়তনে আয়োজিত এ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান, পরিচালক এমআইএস ডা. হাবিবুর রহমান এবং আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। ব্রিফিংয়ে নিজ বাসা থেকে যোগদেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

ব্রিফিয়ে জানানো হয়, শেষ যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছের তিনি নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী। তার বয়স ৫৫ বছর এবং তিনি একজন পুরুষ। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এনিয়ে এ পর্যন্ত মধ্যে সুস্থ হলেন ৩৩ জন। বর্তমানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৬ জন। এই ৪৬ জনের মধ্যে ৩২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং বাকি ১৪ জন বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে দেশের ১৪টি কেন্দ্রে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে চলুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হলেও মাস্ক ব্যবহার করুন। মন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমরা রাস্তাঘাটে, বাজারে অনেক লোক সমাগম দেখছি। এটা যেন কোনো ভাবেই না। যারা দরিদ্র লোকদের ত্রাণ দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা ত্রাণ মানুষের বাসায় পৌঁছে দেবেন। তাহলে জনসমাগম এড়ানো সম্ভব হবে। জাহিদ মালেক বলেন, সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা চলছে। কুয়েত মৈত্রী, কুর্মিটোলা এবং গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ রয়েছে। এসবের কোনো সঙ্কট নেই। বেসরকারি পর্যয়ের চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা রোগীদের সেবা দিন, সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের বলুন। আমরা ব্যবস্থা করব। এই সময়ে রোগীদের ফেলে আপনারা দূরে থাকবেন না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সব হাসপাতালে দেয়া হচ্ছে। রোজই আমরা পিপিই গ্রহণ করছি। আমি মনে করে বর্তমানে পিপিইর তেমন সঙ্কট নেই। আমাদের টেস্টিং কার্যক্রম আমরা অনেক বৃদ্ধি করেছি। ইতোমধ্যে ১৪-১৫ জায়গায় টেস্টিং কার্যক্রম হচ্ছে। টেস্টিং কার্যক্রম জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা নিয়ে যেতে চাচ্ছি। আমাদের যারা টেস্টিং করে, তারা অনেক টেস্টিং করতে পেরেছে। আমাদের ডিজি অফিসের মাধ্যমে আইইডিসিআর তারা গতকাল প্রায় পাঁচশ’রও অধিক টেস্ট করেছে। আগামীতে আমরা এটাকে এক হাজারেরও উপরে, দেড় হাজারেরও উপরে প্রত্যেক দিন নিয়ে যেতে চাচ্ছি। চায়না, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখি। তারা কিন্তু এটাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে টেস্টিংয়ের মাধ্যমে, আইসোলেশনের মাধ্যমে এবং মুখে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। আমাদেরকে সেখান থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের এখনই সময়। আমরা চাই না এটা বেড়ে যাক, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাক উল্লেখ করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা ডাক্তাররা আছেন, যারা প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করেন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চেম্বারে, আমি আবারো অনুরোধ করবো, আপনারা এই দুঃসময়ে দূরে থাকবেন না। আপনারা মানুষকে সেবা দেন, মানুষের পাশে থাকেন। আপনাদের যদি কোনো সমস্যা থাকে, আমাদের অবশ্যই বলবেন। আমরা আপনাদের সাহায্য করব। কিন্তু, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব থেকে দূরে থাকবেন না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫০২টি পিপিই সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে ৪ লাখ ১১ হাজার ৩৩৯টি বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে এবং ৫৮ হাজার ১৬৩টি মজুদ আছে। পরীক্ষার কিট সরবরাহ করা হয়েছে ২১ হাজার এবং মজুদ আছে ৭১ হাজার। তিনি জানান, বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ১২ হাজার ৫৮০ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭৯ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছে ৮৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন হট নম্বরে মোট ফোন কল এসছে ৯৭ হাজার ৯৪৮টি। এছাড়া এ পর্যন্ত ৯১৫ জন চিকিৎসক এবং ৯৮ জন নার্স কোভিড-১৯ সংক্রান্ত চিকিৎসক ব্যবস্থাপনা ও হাসপাতাল সংক্রমণ এবং নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

ব্রিফিংয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে জানেন, সারা বাংলাদেশে ১৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ৩৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের মধ্যে আমরা সংক্রমণ পেয়েছি। ১৩ জনের সংক্রমণ পেয়েছি আইইডিআরের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে। আরও পাঁচজনের সংক্রমণ পেয়েছি অন্যান্য হাসপাতালের পরীক্ষা ফলাফল হিসেবে। তিনি জানান, আক্রান্তদের ১৮ জনের মধ্যে ১১ জন টোলারাবাগের এবং বাকি ৯ জন বাসাবোর। তবে মোট আক্রান্তদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও মিরপুরও রয়েছে। ফলে এই চার এই এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে এবং নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া শেষ বাকি ১৮ জন এলাকাভিত্তিক আক্রান্ত হয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ