পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস সংক্রমরোধে সারাদেশের গণপরিবহন বন্ধ। মানুষকে ঘরে রাখাসহ ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে সক্রিয় সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু সব বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে গত দুদিন ধরে ঢাকামুখি মানুষের ঢল ভয় জাগাচ্ছে মনে। ক্রমে করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ারে মধ্যে হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে করোনাভাইরাসের জীবানু বহন করে আনছে কি না তা নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনার বিস্তার রোধে যেখানে পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতে লক ডাউন চলছে। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে মসজিদ বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত আসছে সেখানে এই শ্রমিকদের এভাবে ডেকে আনা কি ধরণের দায়িত্বশীলতা? এদের দ্বারা লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হলে তার দায় কে নেবে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এভাবে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফেরা সাংঘাতিক ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে সবাইকে। আর পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা বলেছেন, কারখানা বন্ধের সময় তাদের নিজ নিজ বাসায় অবস্থানের কথা বলা হলেও তারা কেন গ্রামে গেছে জানা নেই। এখন বেতন নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের ঢাকায় ফেরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মানুষের ঢল ঠেকাতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কারণ ঢাকামুখি সব মানুষের একই কথা, রোববার কারখানা খুলবে। সময়ের আগে কর্মস্থলে না গেলে তাদের চাকরি থাকবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ট্রাক, পিকআপ, ভ্যানে কিংবা এক সঙ্গে গাদাগাদি করে আসা মানুষগুলো সাংঘাতিক বিপদ ডেকে আনতে পারে। আগতদের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ থাকলে তার মাধ্যমে কারখানায় ছড়াবে, বাসায় ছড়াবে। সে যেখানে অবস্থান করবে হয়তো সেখানেই সমস্যা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে ঢাকায় আগতদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ ইনকিলাবকে বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করে তবে সমস্যা হবে না। সংক্রমণ এড়াতে এদেরকে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এমনকি কেউ যদি সংক্রমিত থাকে তিনি যদি সঠিকভাবে সুরক্ষা নিয়ে কাজও করেন তাহলে ভাইরাস অন্যের মধ্যে ছড়াবে না। একইভাবে অন্যরাও যদি সুরক্ষা নিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করে তাহলেও করোনা ছড়াবে না।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকা শহরে প্রবেশ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেছেন, এতে শহরে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। তাই গার্মেন্টেস বন্ধের বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল বিকেলে ডিএসসিসির নগর ভবনে খাবার পৌঁছে দেওয়া কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে মেয়র এ আহ্বান জানান। মেয়র বলেন, যেভাবে পোশাক শ্রমিকরা শহরে প্রবেশ করছে। তাতে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে বহু নাগরিক ফোনে আমাদের অবহিত করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য আমি বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
করোনার সংক্রমণরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এই ছুটি ঘোষণার পর পরই বাস, ট্রেন ও লঞ্চে গাদাগাদি করে মানুষ ঢাকা ছাড়ে। সে সময়ই এটাকে ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ আখ্যা দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ঘরেফেরা এসব মানুষদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। বরং কদিন না যেতেই একই কান্ড আবার ঘটলো। অনেকেই প্রশ্ন রেখে বলেছেন, এভাবে হাজার হাজার মানুষকে মহাসড়কে দলবেঁধে চলার সুযোগ করে দিয়ে সরকার তাহলে আমাদেরকে কেন ঘরবন্দি করে রেখেছে? এতে করে রাজধানীর প্রায় দুই কোটি মানুষকে ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়া হলো। গত ১০ দিন ধরে মানুষের ঘরে থাকার প্রচেষ্টাও বিফলে গেল।
গত শুক্রবার এবং গতকাল শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পায়ে হেঁটে ঢাকামুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। অন্যদিকে, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও গতকাল সকাল থেকে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় লেগেই ছিল। চলমান অঘোষিত লক ডাউনের মাঝেই যে যেভাবে পারেন ফিরে আসছেন কর্মস্থলে। যারা কোন যানবাহন পাননি তারা ফিরছেন হেঁটে। গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে আমাদের সংবাদদাতারা যে তথ্য দিয়েছেন তাতে এক ভয়ঙ্কর চিত্র পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যে দলে দলে পোশাক শ্রমিকদের এই ফেরা শঙ্কিত করে তুলেছে ঢাকার ঘরবন্দি কোটি মানুষকে। ক্রমে করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়ার মধ্যে মহাসড়কের এমন চিত্র নিয়ে সমালোচনায় মুখর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। অনেকেই বলছেন, এই ঝুঁকির দায়তো নিয়োগদাতা তদারক প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে পড়ে। সরকারি সিদ্ধান্তে সব ধরণের গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা যে ঝুঁকি নিচ্ছেন এর দায়ভারই বা কে নেবে।
আমাদের গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক দলে দলে ফিরছেন গাজীপুরে। তারা ট্রাক- পিকআপ ভ্যান এমনকি কাভার্ড ভ্যানে চড়ে এক সঙ্গে এবং ছোট ছোট হালকা যানবাহনে আসছেন দলে দলে। আজ ৫ই এপ্রিল থেকে গাজীপুরের অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলার কথা রয়েছে। আর কর্মস্থলে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে করোনার ঝুঁকি মাথায় নেয়ার পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ পথে গাদাগাদি করে, দাঁড়িয়ে থেকে তারা ফিরছেন গাজীপুরে। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কর্মজীবী মানুষের স্রোত দেখা গেছে। একইভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উত্তরাঞ্চলের মানুষও এসেছেন দলে দলে। শ্রমিকরা জানান, স্বল্পসংখ্যক পোশাক কারখানা শনিবার থেকে খোলা হয়েছে। তবে অধিকাংশই খোলা রোববার থেকে। সেজন্যই তারা উপায়ান্তর না পেয়ে ফিরছেন কষ্ট করে, অতিরিক্ত ভাড়ায়। শ্রমিকরা বলেন, করোনাভাইরাস এর ঝুঁকি যেমন তাদের রয়েছে তেমনি তাদের রয়েছে চাকরি হারানোর ঝুঁকি। কেননা, যেদিন ছুটি দেয়া হয়েছে সেদিনই কারখানা কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছে যথাসময়ে কারখানায় হাজির হতে। নির্ধারিত সময়ে হাজির না হতে পারলে চাকরি থাকবে না।
আমাদের আরিচা (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, গতকাল পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে একটি করে ফেরি নোঙ্গর করছে আর তাতে মানুষ ছাড়া কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। শরীরের সাথে শরীর ঘেঁষে এক ধরনের গাদাগাদি করেই মানুষের ফেরিতে উঠা-নামার দৃশ্য দেখা গেছে সকাল থেকে। যেখানে করোনার মতো মহামারী ঠেকাতে সারা দুনিয়া কার্যত লক ডাউন হয়ে আছে সেখানে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের এমন দৃশ্য মানুষজনকে ভাবিয়ে তুলবে।
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কেও দেখা গেছে একই চিত্র। ঢাকা-মাওয়া চার লেন এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাক ও কার্ভার্ডভ্যানে করে শত শত মানুষ আসতে দেখা গেছে। অনেককে পরিবহন যান না পেয়ে হেঁটে, মালবাহী লরি ও পিকআপ ভ্যান চেপে ঢাকায় ফিরছেন দেখা গেছে। গাদাগাদি করে গ্রাম থেকে ঢাকামুখী এসব মানুষের ফেরা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, কয়েকটি পিকআপ ভ্যান যাত্রী বহন করে যেতে চেয়েছিল। সেগুলো আটকে দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই পায়ে হেঁটে রওয়ানা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, গত মাসের ২৫ তারিখে গণপরিবহন বন্ধ হয়েছে। আর আমরা কারখানা বন্ধ করেছি ২৬ তারিখে। আমাদের বেশিরভাগ শ্রমিক থাকেন কারাখানার আশপাশের এলাকায়। তিনি বলেন, যারা ঢাকায় আসছে তারা সবাই যে গার্মেন্টস শ্রমিক তা বলা যাবে না। গাদাগাদি করে ঢাকায় ফেরা প্রসঙ্গে রুবানা হক বলেন, প্রথম কথা হলো আমাদেরকে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে হবে। কোনো শ্রমিক যেন মনে না করেন যে উনি ছাঁটাই হবেন। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, আমরা কারখানা বন্ধের সময় সব শ্রমিককে নিজ বাসায় নিরাপদে অবস্থান করতে বলেছিলাম। তাদের বলা হয়েছিল তাদের বেতন নিদিষ্ট সময়ে তারা পেয়ে যাবেন। বর্তমানে গণপরিবহন বন্ধ। তাদের বলা হলো বাসায় অবস্থান করতে কিন্তু তারা চলে গেলেন গ্রামের বাড়িতে। তিনি বলেন, এখন তারা আবার ঢাকায় আসছেন বেতনের জন্য। যারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পান এক্ষেত্রে তাদের বেতন নিতে আসার প্রয়োজন নেই। যথাসময়ে তাদের বেতন অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।