Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাজে লাগানো হচ্ছে না বেসরকারি হাসপাতালকে

করোনার চিকিৎসা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের সঙ্গে চিকিৎসা যুদ্ধে গোটা বিশ্ব ব্যস্ত। পৃথিবীর অনেকে দেশের চিকিৎসক অবসর ভেঙে ফিরেছেন চিকিৎসাসেবায়। দেশ এবং দেশের মানুষের সেবার মহানব্রত নিয়ে তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্য কর্মীদের উপস্থিতি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। উপস্থিতির গড় হার ১৫ শতাংশের মতো। এমতাবস্থায় চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের মতোই সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের উপস্থিতি কমেছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
যদিও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কাজে না লাগানোর অভিযোগ করেছেন ল্যাব এইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম। বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি’র হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা কেমন? এ রকম এক আলোচনায় তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরুণ একজন হার্টফেইলুরের রোগী আসলেন। তার জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট থাকবে। তাকে কেউ নিবেনা। আমাদের করোনা টেস্টের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে তাকে কিভাবে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বলেন।
নতুন নতুন হাসপাতাল হচ্ছে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ডা. এ এম শামীম বলেন, আমাদের রোগী আছে মাত্র ৩০ শতাংশ। বাকীটা শূণ্য। তিনি জানান, ল্যাব এইডে বেড আছে ৩০০ টি, রোগী আছেন মাত্র ৭৫ জন। আমি খবর নিয়েছি, একই অবস্থা আমি ইমপালস হাসপাতালের। একই সঙ্গে আজিমপুর ম্যাটারনিটি হাসপাতালে খবর নিয়েছি, তারা জানিয়েছে, তাদের বেড আছে ৩৮০ টি। রোগী আছেন মাত্র ৮২ জন।
ডা. এ এম শামীম বলেন, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বেড আছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ২ লাখই বর্তমানে ফাঁকা। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি স্টেডিয়ামে হাসপাতাল করছেন, ৫ হাজার বেড, ১ হাজার বেড করতেছেন। চায়না থেকে লোক নিয়ে আসছেন। আমাদেরকে কেন ব্যবহার করছেন না। আমাদেরকে পিপিই দেন, টেস্ট করার ব্যবস্থা দেন। আমাদের সঙ্গে সরকারি চিকিৎসক এসে কাজ করুক। আমাদের আউটডোর আপানারা দেখেন। প্রতি সপ্তাহের রিপোর্ট দেখেন।
ল্যাব এইড ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা গতবার ডেঙ্গু কিভাবে মোকাবেলা করেছি। চারমাসে ল্যাবএইড প্রায় দেড় লাখ লোককে চিকিৎসা দিয়েছে। কোন বেড ছিল না। এখন কিন্তু ডেঙ্গুর মতোই করোনা। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের বেসরকারি হাসপাতালকে পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেন এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে জানেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি। ডা. এ এম শামীম বলেন, আমি এ নিয়ে স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে কথা বলেছি। স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাকে বলেছি, আমাদের টেস্ট করতে দেন। তিনি বলেছেন, আমাদের নীতি নির্ধারণ হয়নি। পিপিই দেন ডিজি বলেছেন, ব্যবস্থা করছি।
ডা. এ এম শামীম বলেন, দেশের চিকিৎসা সেবার তিন ভাগের দুই ভাগই বেসরকারি হাসপাতাল দিয়ে থাকে। তাই বেসরকারি হাসপাতালের জন্য একটা সেল করে দেন। ল্যাব এইড হাসপাতালের ৩০০ টি বেড আছে। সারাদেশে ৩০টি সেন্টার আছে। প্রতিদিন বর্হিবিভাগে ১০ হাজার রোগী দেখা হয়। তিনি বলেন, আমি যদি টেলিফোন নিয়ে একজন সহকারি পরিচালককে বলি ভাই, আমার ময়মনসিংহ সেন্টারে চিকিৎসা দিতে ১০০ টা পিপিই দরকার। আমি একজন করোনা রোগীকে পেয়েছি, একটু চেক কের দেন। আমি ওনাকে পাচ্ছি না, টেলিফোন ধরেনা। আমাকেতো কোন এপ্রোচ দেয় না। এখন সরকার যদি বেসরকারি হাসপাতালকে সরিয়ে রাখে তাহলে আমরা কিভাবে সেবা দেব উল্লেখ করেন ল্যাব এইড ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা চাচ্ছি সারা দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী দেখুক। পাশাপাশি কেউ যদি স্বেচ্ছায় হাসপাতালকে শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করতে চায় তাহলেতো আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।
এদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের উপস্থিতি এবং রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন কিনা, তা তদারকি করতে অভিযানে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকাল দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখেন সংস্থার কর্মকর্তারা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল।
আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, আমরা স্কয়ার হাসপাতাল, ল্যাবএইড, শমরিতা, বিআরবি হাসপাতাল, গ্রিন লাইফ, কমফোর্ট, আনোয়ার খান মডার্ন হসপিটালে যাই। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের যথাযথভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে কিনা, এটি তদারকি করা হয়। সর্দি-জ্বর-কাশির লক্ষণসহ রোগীদের ভর্তি করানো হচ্ছে কিনা, বা এসব রোগীকে যথাযথভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হয়। এছাড়া চিকিৎসকরা নিয়মিতভাবে হাসপাতাল-ক্লিনিকে আসছেন কিনা, সেই খোঁজও নেওয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে যেসব চিকিৎসক নিয়মিতভাবে আসছেন না, তাদের তালিকা চাওয়া হয়।
অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা অনেক মাধ্যম থেকে অভিযোগ পেয়েছি, চিকিৎসক না থাকার কারণে সাধারণ রোগীরা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই অবস্থা। কমফোর্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখি, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চিকিৎসক উপস্থিতি অনেক কম। তিনি বলেন, অধিদফতরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে আমরা হাসপাতালগুলোর এই পরিস্থিতির কথা জানাবো।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ