Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রকৃতিতে সৃষ্টিসুখ জাগরণের উৎসব

করোনার অন্যপিঠ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

‘পরিবেশ প্রকৃতির উপর মানুষের জুলুম কমেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে জর্জরিত মানুষ এখন পৃথিবীর প্রকৃতিরাজ্যে সব ক্ষেত্রে ধ্বংসের হাত বিরত রেখেছে। আর সেই সুবাদে স্বাভাবিক পরিবেশ পেয়েই প্রাকৃতিক জগৎ তার হারানো বৈশিষ্ট্য আচরণের দিকে ফিরছে। শূন্যতাগুলো করছে পূরণ। প্রকৃতি মনের সুখেই নিজেকে জাগিয়ে তুলছে। পৃথিবীর বুকে রূপ-নিসর্গ মেলে ধরছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিবেশ প্রকৃতিরাজ্যে চলছে সৃজনের পালা’।

কথাগুলো ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট পরিবেশ-প্রকৃতি ও বনবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি জানান, এ মুহূর্তে বিজ্ঞানীদের ধারণা পৃথিবীতে ক্ষতিকর কার্বন ও নাইট্রোজেন নিঃসরণের কারণে দূষণের হারা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর বিষাক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াটাও কমেছে। এ ধারা যতদিন চলবে আরও উন্নতির দিকেই যাবে। করোনায় পীড়িত ও ভীত-সতর্ক বিশ্বের তাবৎ জাতি-মানুষ। এহেন মহাদুর্যোগকালে সব নেতিবাচকতার মাঝেও বাংলাদেশসহ পৃথিবীজুড়ে পরিবেশ-প্রকৃতির রাজ্যে ইতিবাচকতার আয়োজন। সবই চলছে পরিবেশ-প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তার মহিমায়।

করোনায় দুর্যোগকাল। তবুও তো এখন বসন্ত ঋতু। বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রকৃতি রাজ্যে বইছে সৃষ্টির সুখ আর শোভা-সুন্দরতার ধারাপাত। নির্জন ও কোলাহলহীন দূষণমুক্ত পরিবেশে বলীয়ান হয়ে প্রতিদিনই জাগছে ও সাজছে প্রকৃতি। স্বাভাবিক নিয়মের নিয়মের ধারায়ই সবকিছু ঘটে চলেছে প্রায় মানুষের চোখের আড়ালে। করোনাতঙ্কের জেরে ধ্বংসের হাত-পা, অপকান্ড গুটিয়ে ঘরবন্দি হয়ে আছে অপরিণামদর্শী মানুষেরা। আবার সেই আঘাত না আসা অবধি অব্যাহত থাকবে প্রকৃতিজুুড়ে মেরামত, বুনন, সৃজন এবং সুন্দরতা।

সমুদ্র ও প্রকৃতিবিজ্ঞানীগণ কী বলেন-
পরিবেশ প্রকৃতিরাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়া প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে অভিমত দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মো. হোসেন জামাল, বন-পরিবেশ-প্রকৃতি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম ও প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মনজুরুল কীবরিয়া। তারা বলেন, মানুষের কোলাহল ও দূষণ না থাকার ফলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সাগরলতা, পাতা-ঘাষ, গুল্ম-রাজি নরম বালুমাটির তলা থেকে সতেজ হয়ে উঠছে দিন দিন। বাহারী ফুল ফুটছে। সুবাস ছড়াচ্ছে। এসব সাগরলতা, গুল্ম-ঘাষ ক্ষয় যেতে থাকা সৈকতের বালুমাটি এবং তার মূলের দিকে শক্ত বন্ধন তৈরি করছে। এরফলে ভূমিক্ষয় রোধ হবে। নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, ঢল-বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত সহ্য করার সক্ষমতা বাড়বে। এরই যেন সুষ্ঠু মেরামত প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে স্বাভাবিক পরিবেশে প্রকৃতিরই নিয়মের ছকে ছকে।

তারা জানান, শুধু তাই নয়- হিমছড়ি, ইনানী, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়াসহ সমগ্র কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এবং জনপদের মধ্যবর্তী ঢালস্বরূপ দীর্ঘ পাহাড় টিলাগুলোতে বৃক্ষরাজি ক্রমেই এভাবে বেড়ে উঠছে। কেননা বৃক্ষনিধন প্রায় বন্ধ। এরফলে পাহাড়গুলোর মাটি শক্ত হচ্ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাহাড়ি প্রকৃতিতে এভাবে আসছে ইতিবাচক পরিবর্তন।

কাজের প্রয়োজনে সেখানে গিয়ে দেখেছেন এ ধরনের স্থানীয় লোকজন জানান, গত বেশ কদিনে কক্সবাজার সৈকতের লাবনী, শৈবাল, সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সাগরলতা, ঘাষ-গুল্ম বেশ সতেজ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। হরেক জাতের ফুল সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও এখন পর্যটক তথা জনমানব-শূণ্য আদিগন্ত সমুদ্র সৈকত। শুধুই দূর থেকে ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জন।

অথচ মাত্র দু’সপ্তাহ আগেও তীব্র জনজট, যানজট, অসহ্য কোলাহলে জর্জরিত ছিল কক্সবাজার। তাই যেন ছিল ‘স্বাভাবিক’। পরিবেশ প্রকৃতির অস্তিত্বের জন্য তা অস্বাভাবিক শুধু নয়, ছিল অত্যাচার। ধ্বংসকরণ প্রক্রিয়া। তা বন্ধ থাকার সুবাদে দলে দলে ডলফিন গভীর সমুদ্র থেকে উঠে এসে সৈকতের কাছাকাছি পানির বুকে মনের আনন্দে লাফালাফি, ডিগবাজি খেলছে। যা আজ রোজকার দৃশ্য। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের পানিসীমায় প্রধানত বিচরণশীল ‘ইরাবতী’ ও ‘বটল নোজ’ জাতের শান্ত সুন্দর ডলফিনরা মানুষের অত্যাচারের মুখে ‘দ্য সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’-এ (সুন্দরবনের দক্ষিণে) কোণঠাসা হয়েছিল।

সমুদ্রে নির্বিচারে মাছ শিকার, বিদেশি ট্রলারবহরে লুটপাটও বন্ধ। ফলে বিশেষজ্ঞগণ আশাবাদী, এই স্বাভাবিক পরিবেশে সমুদ্রজগতে বড়-ছোট সবধরনের প্রাণিরাজি, উদ্ভিদজগৎ এবং তাদের খাদ্য-শৃঙ্খলের ক্রমেই প্রজনন ক্ষমতা ও উৎপাদন বাড়বে। নির্মম বাস্তবতায় এ যেন পরিবেশ-প্রকৃতির ভাঙাভিটায় গড়ার পালা। সৃজনে, সজীবতায় সুন্দরের মেলা। হঠাৎ জাগরণের উৎসব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ