Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলে মধ্যবিত্তের চাপাকান্না

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যখন সারাদেশ স্তব্ধ তখন অনিশ্চিত আগামীর চিন্তায় দিন কাটছে খুলনাঞ্চলের নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধ থাকায় উপার্জনের রাস্তা বন্ধ মাসের বাড়ি ভাড়া, বাজার খরচ, চিকিৎসা খরচ, বাচ্চাদের স্কুল ফি দিয়ে বাড়তি কোন টাকা থাকে না তাদের হাতে। তাদের কোন সঞ্চয় নেই। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা ঘরবন্দি হয়ে পড়াতে হাতে যে কটা টাকা আছে তাই ভেঙ্গে চলছে সংসার।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অঘোষিত লকডাউনে বাংলাদেশ। খুলনাঞ্চলে ২৫ মার্চ থেকে বন্ধ করা হয়েছে সকল বিপণী বিতান ও শপিং মল। নিত্যপন্যের দোকান ছাড়া বন্ধ সকল দোকান। এদিকে গণপরিবহনও বন্ধ ২৬ মার্চ থেকে। সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত। ফলে ঘরবন্দি হয়ে আছেন কয়েক লাখ মানুষ।
এই সঙ্কটকালীন সময়ে খুলনাঞ্চলে হতদরিদ্র নিম্নবিত্তের মানুষরা সরকারি-বেসরকারি নানা রকম সহায়তা পাচ্ছেন। সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে তাদের বাসায় বাসায়। কিন্তু বিপদে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। তারা না পারছেন কারো কাছে সহায়তা চাইতে, না পারছেন ঘরে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে দিনযাপন করতে। কারণ তাদের বেশির ভাগেরই হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই, কাজ বন্ধ থাকায় আয় করার পথও নেই।
নিম্নমধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তের পরিবারের আয়ের মাস শেষে টাকার অবশিষ্ট কিছুই থাকে না হাতে। নানা কৌশলে মাস পার করেন তারা। কিন্তু বর্তমানে করোনায় উদ্ভূত সঙ্কটে দিশেহারা পরিবারের মানুষজন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রার্থনার বাইরে কোন পথ দেখছেন না তারা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায় দিন কাটছে মানুষগুলোর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ব্যক্তি জানান, তাঁর ঘরে চাল ফুরিয়ে আসছে। ডালও শেষ প্রায়। তেল-লবণের বোতল ও বয়ামের তলাও দেখা যাবে আর দু-এক দিনের মধ্যে। তিনি বললেন, নিম্নবিত্তের লোকজন তো সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে, বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তের কী হবে?
বাস্তহারা এলাকার এক বাসি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাস্তহারা এলাকার এক বাসিন্দা জানান, আর্থিকভাবে পরিবার নিয়ে ভালোই ছিলেন তিনি। মা-বাবা ,দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ভাড়া বাসায়। মাসিক যে বেতন পেতেন তাতেই সংসারটা ভালোভাবে চলে যেত। কিন্তু তার কোনো সঞ্চয় নেই। গত কয়েক বছর ব্যবসা করলেও এমন সংকটে কখনোই পড়েননি তিনি। ১০ দিন ধরে দোকান বন্ধ। হাতে কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে কিছু বাজার করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়ে অন্ধকার দেখছেন চোখেমুখে। কীভাবে বাসা ভাড়া দেবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন, সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তার। স্ত্রী ও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে বিলাপ করা ছাড়া আর পথ দেখছেন না তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির মহাসচিব ইনকিলাবকে বলেন, খুলনায় লকডাউনে থাকা এলাকাগুলোর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর খোঁজ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে সরকারি উদ্যোগ না হলে এদের জীবনধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। অন্তত খেয়েদেয়ে প্রাণটা যাতে বাঁচিয়ে রাখতে পারে, এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি জরুরি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ