পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ঠেকাতে দেশজুড়ে নানা ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ এবং ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণার পর রাজধানীজুড়ে তৎপরতা বেড়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রায় প্রতিটি প্রধান সড়ক পেরিয়ে, পাড়া-মহল্লার গলিতেও সেনা সদস্যদের বাড়তি তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকেই সেনা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের ঘোষণাতেই সড়কে জনসাধারণের চলাচল অনেকটা সীমিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যেও বিভিন্ন প্রয়োজনে যারাই বাইরে বের হয়েছেন তাদের প্রায় সবাইকে সেনাবাহিনীসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে সড়কে আশঙ্কাজনকভাবে যান চলাচল বেড়ে গেলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা আবার কমে এসেছে। যেসব ব্যক্তিগত যানবাহনগুলো বের হয়েছে, তাদের প্রায় সবকটিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তল্লাশিচৌকির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছিল চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গাড়ি থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছে। উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে যানবাহনগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাড়া-মহল্লায় প্রয়োজনীয় দোকানের বাইরে যেসব দোকান-পাট খোলা ছিল, সেসব দোকানে সেনা সদস্যরা গিয়ে বন্ধ করে দিতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনীকে কঠোর হতে হয়, এমন কোনো কর্মকাÐ না করতে সবার প্রতি আহŸান জানানো হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও আশেপাশের এলাকায় মেজর বেলালের নেতৃত্বে দায়িত্ব পালন করছিলেন সেনাবাহিনীর একটি টিম। দায়িত্বরত অবস্থায় তাদের হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা প্রদান করতে দেখা গেছে। এছাড়া, মানুষকে বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের না হতে বার বার আহŸান জানানো হয়। মেজর বেলাল জানান, সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে গত ২ দিনের তুলনায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি কমেছে। সাধারণত কারণ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। অন্যদিকে, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া, পাটেরবাগ, জুরাইন, মীরহাজিরবাগ, পুরান ঢাকার সুত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ধোলাইখাল, ইংলিশ রোড, গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর, গোপীবাগ এলাকাতেও সেনাবাহিনীর তৎপরতায় মানুষজন খুব বেশি ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পায়নি। তবে কিছু কিছু এলাকার অলি-গলিতে উঠতি বয়সীদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে। চায়ের দোকানগুলোতে কিশোর বয়সীরা ভিড় করেছে সন্ধ্যার পর। এছাড়া, রাজধানীর ভাষানটেক, লালবাগ, বাড্ডা ও ভাটারা ও সবুজবাগ এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পৃথক টিম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
করোনা সংকটে মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সরকারি ছুটির প্রথম দিকে রাস্তায় আতঙ্কিত মানুষজনের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মানুষের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ যেন আতঙ্ক কাটিয়ে জনসাধারণের বাইরে বের হওয়া, যার ফলে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থানে যাবে এমন খবরে সাধারণত বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া জনসাধারণের উপস্থিতি কমেছে। সরকার নির্দেশিত বিভিন্ন বিধি-বিধান অমান্য করে বাইরে বের হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, স্বাভাবিক নিয়মেই সড়কে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের দায়িত্বপালন করতে দেখা গেছে। তারাও বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট স্থাপন করে যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম : ঘোষণা দিয়েই কঠোর অবস্থান নিয়ে মাঠে নামার পর পাল্টে গেছে চট্টগ্রামের দৃশ্যপট। সকালেই মাঠে নামে সেনাবাহিনীর চৌকষ একাধিক টিম। লোকজনকে বাসাবাড়িতে অবস্থান করার আহŸান জানিয়ে মাইকিং করার পাশাপাশি বিনাকারণে যারা রাস্তায় তাদের ঠেলে বাড়িতেও পাঠিয়েছেন সেনা সদস্যরা। সেনাবাহিনীর অ্যাকশনের খবরে বাসাবাড়ি থেকে বের হননি অনেকে। যারা রাস্তায় ছিলেন তারাও নীরবে ঘরে ঢুকে গেছেন।
নগরীর ১৬টি থানা এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে অভিযানে নামে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। একই সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায়ও সেনা-প্রশাসনের অভিযান শুরু হয়। নগরীর ষোলশহর ২নং গেইট, জিইসি মোড়, এ কে খান, দামপাড়া, কাজির দেউড়ি, স্টেডিয়াম পাড়া, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, ইপিজেড, পতেঙ্গা, বড়পোল, হালিশহর, অলঙ্কার, সিটি গেইট, অক্সিজেন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, কর্ণফুলী সেতু এলাকাসহ যেখানে মানুষের জটলা সেখানেই চলে অভিযান।
রাজশাহী : করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে আগামী এক সপ্তাহ সামাজিক দূরত্ব মানা অপরিহার্য। কিন্তু রাজশাহীতে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে সাধারণ মানুষ। বার বার সতর্ক করা হলেও তা মানছেন না অনেকেই। ফলে প্রতিদিনই বেলা বাড়ার সাথে সাথে নগরীজুড়ে বাড়ছে মানুষের উপস্থিতি। তবে মানুষকে ঘরমুখী করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের করোনা চিকিৎসা কমিটির আহŸায়ক অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আজাদ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহŸান জানান। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলছেন, নানা অজুহাতে ঘর হতে বেরুতে শুরু করেছে মানুষ। নগরীতে অটোর সংখ্যাও বেড়েছে। তাই এ বিষয়ে আমরা কঠোর হচ্ছি। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও জানিয়েছেন, অহেতুক মানুষের ভীড় আর সহ্য করা হবে না।
বরিশাল: দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গতকাল থেকে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল নগরীর বিভিন্ন সড়কে টহল দেয়। বরিশাল বিভাগে জনসমাগম রোধে সেনাবাহিনীর ১৭টি দল জোরদার টহল দিচ্ছে বলে জানান বরিশাল শেখ হাসিনা সেনানিবাসের মেজর সিদ্দিক মোবিন।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান সাংবাদিকদের জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার সবাইকে নিজ নিজ ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ মেনে সবাইকে নিজ ঘরে থাকারও আহŸান জানান তিনি।
কক্সবাজার : কোয়ারেন্টাইন এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য কঠোর অবস্থানে সেনাবাহিনী। সকাল থেকে পূর্ণ ফাঁকা দেখা যায় কক্সবাজার শহর। গতদিনের মতো মানুষজনও নেই বললে চলে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সমাজিক দূরত্ব ও মানুষকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর ৫টি টিম ৫ উপজেলায় কাজ শুরু করেছে। গোপালগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াছুর রহমান বলেন, কেউ সমাজিক দূরত্ব ও ঘরে থকার নিয়ম লংঘন করে বাইরে অযথা ঘুরাঘুরি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজধানীতে নৌবাহিনীর সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত
দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় রাজধানীর খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড, গুলশান ও আমেরিকান দূতাবাস সংলগ্ন কূটনৈতিক এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক, ফুটপাত ও আশেপাশের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখতে জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটানোসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে নৌবাহিনী। গতকাল নৌবাহিনীর সদস্যরা দিনব্যাপী এসকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরে খিলক্ষেত এলাকার স্থানীয় গরীব, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে জীবাণুনাশক সাবান ও মাস্ক, চাল, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এছাড়া ঢাকার বাইরে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, বরগুনা, আমতলী, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাঁটা, তালতলীসহ সমুদ্র ও উপকূলীয় প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে নৌবাহিনী সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নৌবাহিনীর সদস্যরা জনসমাগম বন্ধসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং মানুষকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে মাইকিং করার পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝে সচেতনতা তৈরী করতে বিভিন্ন লিফলেট বিতরণসহ ঈমামদের নানা পরামর্শ প্রদান করছে। -আইএসপিআর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।