Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরকতময় রজনী শবে বরাতে করণীয়

ফিরোজ আহমাদ | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

শব অর্থ রাত, বরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। বান্দার ক্ষমা লাভ কিংবা গোনাহ মাফের ভাগ্যে রজনী। কুরআনুল কারীমের সূরা দুখানের শুরুতে ‘লাইলাতু মোবারাকাহ’ বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিস শরীফে ‘লাইলাতুন নিফসি মিন শাবান’ অর্থ ‘শাবান মাসের মধ্য রজনী’ তথা শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রজনীর বিষয়ে বলা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা বান্দার গোনাহ সমূহ মাফ করে দেয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুুত থাকেন। তাঁর সিফাত বা বৈশিষ্ট্য হলো ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। অর্থাৎ বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া, বান্দার উপর তাঁর দয়া রহমত বর্ষন করা। অন্যদিকে তাঁর করুণা লাভের জন্য বান্দার করণীয় হলো খালেস নিয়তে তওবা করা। আল্লাহতায়ালার নিকট অতীত জীবনের গোনাহের জন্য তওবা করলে, আল্লাহতায়ালা খুশি হয়ে বান্দার অতীতের সকল পাপ সমূহ মার্জনা করে দেন। বান্দার ফরিয়াদ তথা আর্জি কবুলের জন্য যে কয়’টি বিশেষ রজনীর কথা উল্লেখ রয়েছে। তারমধ্যে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত অন্যতম। পাঁচটি রাতের প্রথমটি হলো জুমার রাত, ২য় হলো ঈদুল ফিতরের রাত, ৩য় হলো ঈদুল আযহার রাত, ৪র্থ হলো রজব মাসের চাঁদ উদয়ের প্রথম রাত, ৫ম হলো মাহে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। (সুনানে বায়হাকী শরীফ: ৩/৩১৯)। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে বান্দার যখন কোন হাজত-মাকসুদ উপস্থিত হয়। আর এ সকল হাজত-মাকসুদ পূরণের উদ্দেশ্যে যখনই বান্দা আল্লাহকে ডাকেন। তখন আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রয়োজন পূরণের ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন। এরপরও দৈনন্দিন তাহাজ্জুত নামাজের সময়টি বান্দার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। দোয়া-দুরূদ কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে তাহাজ্জুতের সময়ের একটি আলাদা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
হযরত আলী (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখে তোমরা দিনের বেলায় রোজা রাখবে এবং রাতের বেলায় ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে কাটাবে। ঐ দিন আল্লাহ পাক কুদরতিভাবে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আছে কি? ক্ষমা চাইলে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। রোগাক্রান্ত কেউ আছে কি? আমি আরোগ্য দান করব, কেউ রিজিক চাওয়ার আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করব। এভাবে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সালাতুল ফজর পর্যন্ত বিশেষ ঘোষনা আসতে থাকে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)। সুবহানাল্লাহ!
শবে বরাতের রাতে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেসফার পাঠ করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চেয়ে কান্নাকাটি করা, অতীতের গোনাহ সমূহ মাফ চাওয়া, তাসবিহ-তাহলীল পাঠ করা, নফল নামাজ পড়া, সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়া, সালাতুত তাহাজ্জুত নামাজ পড়ার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করার চেষ্টা করতে হবে। রাত জেগে নফল সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে সকালের ফজরের সালাত আদায়ের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। কোন ভাবেই যেনো ফজরের সালাত ছুটে না যায়। বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যে, যদি কেউ শবে বরাতের নফল ইবাদত করা থেকে বিরত থাকে, তাহলে ঐ ব্যক্তিকে নিয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। কারণ নফল ইবাদত তথা মুস্তাহাব আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই উত্তম। কেউ নফল আমল ইবাদত করলে সাওয়াবের অংশীদার হবেন। নফল আমল ইবাদত না করলে গোনাহগার হবেন না। এছাড়া ইবাদত বন্দেগী ছেড়ে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করা, ফটকা ছিটানো, বিশেষ কেক পাউরুটি হই-হল্লোর করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শবে বরাতের সকল প্রকার বরকত, কল্যাণ ও ফজিলত লাভ করার তৌফিক দান করুক। আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বরকতময়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ