দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : ইদানিং সময়ে অভিযোগ উঠেছে একশ্রেণির মেয়ে আছে যারা বিয়ের দেন মোহরকে ব্যাবসায় পরিণত করেছে। বিয়ের কয়েকদিন পর পরকিয়া কিংবা তুচ্ছ অজুহাতে বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে করে দেন মোহরের পুরো টাকা বরকে বহন করতে হয়। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে ব্যানারে “মেয়ে যদি তালাক দেয় ছেলে কেন দেন মোহন দিতে হবে”। যত বিপদ ছেলে পক্ষের।
অনেক ক্ষেত্রে সামাজপতিদের চাপের মুখে ছেলেপক্ষ অতি উচ্চমূল্যে দেনমোহর নির্ধারণ করলেও তার পরিণতি ভোগ করতে হয় নতুন বউকে। কারণ এই দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করতে দুই পরিবারের মধ্যে যে কলহের সৃষ্টি হয়, তার প্রভাব স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের উপরে পড়ে থাকে। তাহলে সমাজে এ ধরনের ধারণা সৃষ্টি হয় যে- ছেলেপক্ষ কন্যাপক্ষ কে বা তাদের কন্যাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করছেন না । এ কারণে দেনমোহরের পরিমান বেশি দেওয়া হয় যাতে সমাজে এইরূপ ধারণার জন্ম হয় যে ছেলেপক্ষ তাদের মেয়েকে বা তাদের স্ত্রীকে মূল্যায়ন করছেন ।মনে রাখা উচিৎ, নবীজী স. তাঁর স্ত্রী, কণ্যাদের ক্ষেত্রে কত অল্প অঙ্ক নির্ধারণ করেছিলেন। কাজেই কম মোহরানা নির্ধারণ কোনো সম্মানহানীর বিষয় নয়। আবার মোটা অঙ্ক নির্ধারণও কোনো গর্বের বিষয় নয়।
এ কথা বলেও পাত্রপক্ষকে প্রবোধ দেয়া হয় যে এই সমস্ত দেনমোহর তো শুধু কাগজে-কলমে বাস্তবে কি আর এসব দেওয়া লাগে ?কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি বৈবাহিক সম্পর্ক অক্ষুন্ন থাকে তবে পাত্রপক্ষ আর দেনমোহর পরিশোধ করেন না। যদিও ইসলামিক আইন অনুসারে দেনমোহর সাথে সাথে পরিশোধ করে দেওয়া উচিত।
পাত্রপক্ষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মনে করেন আমাকে যেহেতু দেনমোহরের টাকা দিতে হবে না সেহেতু নিকাহনামায় কি লেখা আছে বা কি পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণ হলো তাতে আমার কী এসে যায়? কিন্তু এই চিন্তাটি গলার কাঁটা হতে পারে যদি বিবাহটি তালাকের দিকে গড়ায় কিংবা মেয়ের পক্ষের কোন কুটিলতা থাকে।
অনেক সময় দেখা যায় যখন কোন স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হয় তখন তার গয়নাগাটি এবং স্বর্ণালংকার আটকে রেখে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয। যেহেতু নিকাহনামায় লেখা থাকে যে উসুল হিসেবে গয়না দিয়ে দেনমোহর পরিশোধ করা হলো, সেহেতু পরবর্তীতে এটি প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে যে স্বর্ণালঙ্কার তার কাছে নেই এবং সেই পুরো স্বর্ণালংকার পাত্রপক্ষ আত্মসাৎ করেন যা কিনা ইসলামিক আইন অনুসারে চরমভাবে অমার্জনীয় একটি পাপের কাজ। কারণ স্ত্রীকে প্রদত্ত স্বর্ণালংকার এর মালিক স্ত্রী নিজেই, যতই তাকে তালাক প্রদান করা হোক না কেন। তবে পাত্রপক্ষ এধরনের কাজে বাধ্য হয় শুধুমাত্র এই কারণে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেনমোহরের টাকা পরিশোধের ক্ষমতা তাদের থাকে না। তাছাড়া একটি তালাকের পরে যখন আরেকটি বিয়ের প্রসঙ্গ উঠে তখন সেখানেও পাত্রপক্ষকে বিশাল আকারের দেনমোহর দিয়ে তবে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাই ক্ষতির পরিমাণটা কমানোর জন্য এই ধরনের অসৎ উপায় অবলম্বন ছেলেপক্ষ করে থাকে অনেকে।
ইসলামি বিধানমতে কনের পক্ষ থেকে বরকে বিয়ের সময় বা তার আগে-পরে শর্ত করে বা দাবি করে অথবা প্রথা হিসেবে কোনো দ্রব্যসামগ্রী বা অর্থ-সম্পদ ও টাকাপয়সা নেওয়া বা দেওয়াকে যৌতুক বলে। শরিয়তের বিধানে যৌতুক সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ এবং কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ। বাংলা অভিধানমতে, যৌতুক হলো ‘বিবাহের পর বর বা কনেকে যে মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত উপহার।’ (বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)। এই অর্থে যৌতুক ও মহরের মধ্যে বিভ্রাট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ইসলামে মহর হলো ফরজ ইবাদাত আর যৌতুক হলো বিলকুল হারাম ও সম্পূর্ণ নাজায়েজ। তাই যৌতুক ও মহর এই উভয়ের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করা জরুরি।
‘ছেলেপক্ষ যে অর্থ দেয় তা হলো মহর, মেয়েপক্ষ যা দেয় তা হলো যৌতুক।’ মেয়ের বাড়িতে শর্ত করে আপ্যায়ন গ্রহণ করাও হারাম যৌতুকের অন্তর্ভুক্ত। যৌতুক চাওয়া ভিক্ষাবৃত্তি অপেক্ষা নিন্দনীয় ও জঘন্য ঘৃণ্য অপরাধ। আমাদের দেশের আইনেও যৌতুক শাস্তিযোগ্য ও দন্ডনীয় অপরাধ। যৌতুকের শর্তে বিয়ে সম্পাদিত হলে, বিয়ে কার্যকর হয়ে যাবে; কিন্তু যৌতুকের শর্ত অকার্যকর বলে বিবেচিত হবে। ইসলামি শরিয়তের বিধানমতে অবৈধ শর্ত পালনীয় নয়, বরং বাধ্যতামূলকভাবেই তা বর্জনীয়।
অনেক উচ্চশিক্ষিত আধুনিকা কর্মজীবী নারীরা দেনমোহর গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তারা মনে করছেন দেনমোহর গ্রহণ করা মানে নিজেদেরকে পুরুষের তুলনায় নিচুতে নামিয়ে আনা। এটি পুরুষদের থেকে নেওয়া একধরনের যৌতুক। যেহেতু বিয়েতে পুরুষদের যৌতুক প্রথার বিলোপ ঘটেছে, সেহেতু একইরকমভাবে তারা দেনমোহর প্রথার বিলোপ চান।
ইসলামী আইনে দেনমহর নির্ধারন করেছিল নারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য, প্রচলিত ও সামাজিক আইনের মারপ্যাচ ও সামজিক চাপে তাই এখন পুরুষ নির্যাতনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এই দেন মোহর।
আমরা আলোচনা থেকে যা পাই কোন কিছু স্বেচ্ছায় না দিয়ে জোর করে আদায় করার নাম হলো যৌতুক। ইসলামে আল্লাহ তাওয়ালা সকল নিয়মকানুন পবিত্র আল কোরআনে বলে দিয়েছেন। মানুষ আল্লাহ দেওয়া নির্দেশিত নিয়ম উপেক্ষা করে নিজের তৈরী করা প্রচলিত সামাজিক রীতি নীতি মেনে মুখ রক্ষা নামে অযৌতিক ইসলামী নিয়ম বিরোধী বিয়ের দেন মোহরকে চাপিয়ে দিয়ে যৌতুক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এইভাবে চাপিয়ে দিয়ে দেন মোহর আদায় হলো যৌতুক! যা ইসলামে গ্রহন যোগ্য নয়।
একারণে দেনমহর নির্ধারনে ইসলামী আইন এর সাথে সংগতি রেখে রাষ্ট্রীয় ভাবে নতুন করে নীতিমালা জাতীয় সংসদে বিল পাশ করা খুব জরুরী।
উত্তর দিচ্ছেন : আনোয়ারুল হক নিজামী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।