Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা ঝুঁকিতে মংলা

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে গোটা মংলা বন্দর নগরী। পাশাপাশি ইপিজেড নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশী জাহাজগুলোকে কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা করলেও, সেখানে শিপিং এজেন্ট, বার্থ অপারেটরসহ সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত থেমে নেই। ব্যবসার স্বার্থে ঝুঁকির মধ্যেও প্রতিদিন বিদেশীদের সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন নেতারা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বন্দরের মাধ্যমে যাতে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক আছেন তারা। চলছে নিয়মিত মনিটরিং।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশে যখন বিদেশী নাগরিক প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়েছে, সেখানে অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে মংলা বন্দর। মংলা বন্দরে চলাচল করা প্রতিটি বিদেশী জাহাজেরই একটি করে দেশীয় এজেন্ট রয়েছে। জাহাজ মালিকের পক্ষে ওই এজেন্ট প্রতিষ্ঠানকেই জাহাজের দেখভাল করতে হয়। তাই ব্যবসায়িক স্বার্থেই শিপিং এজেন্টের প্রতিনিধিদের জাহাজে যেতে হয় প্রতিনিয়ত। কিন্তু মাস্ক ছাড়া অন্য কোন প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট নেই তাদের কাছে।

সূত্রমতে, চীনা নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের যাতায়াত এ বন্দরে। জাহাজে আসা নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেই যথাযথ ব্যবস্থা। ফলে পণ্য খালাস-বোঝাই করতে গিয়ে নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে প্রাণঘাতি এ ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ ভাইরাস প্রতিরোধে জেটিতে নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। যদিও এ প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়, মনে করছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, বন্দরে জাহাজ আসার পণ্য খালাসের কাজে যেতে হচ্ছে এজেন্ট, কাস্টম, ইমিগ্রেশন পুলিশ, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় শ্রমিকদের। এছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশী নাবিকদের সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বন্দরে আসা বিদেশী নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে বিদেশী নাবিকদের মাধ্যমে দেশীয় শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। তিনি এ বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের আরও আধুনিকায়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন।

মংলা ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মাহবুব আহম্মেদ সিদ্দিক জানান, ইপিজেডের অভ্যন্তরে ৮ থেকে ১০টি চীনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে কাজ করছেন অন্তত ৪০ থকে ৪৫ জন চীনা নাগরিক। আর তাদের এ সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে সহস্রাধিক দেশীয় শ্রমিক।

তিনি জানান, এখানে অবস্থানকারী চীনা নাগরিকরা নিজেরাই নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। তবে নতুন করে তাদের নিজ দেশে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া চীনা প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত শ্রমিকরা সচেতনতার সঙ্গে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি। তবে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে সেটাও পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির খুলনা বিভাগীয় মহাসচিব মো. আজগর হোসেন।

মংলা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মাদ সেলিম শেখ জানান, ইপিজেডে অসংখ্য চীনা নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছে। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাগজপত্রের সার্বিক কাজ করে থাকেন দোভাষীরা। তাই কাস্টমসের সঙ্গে চীনা নাগরিকসহ বিদেশী নাবিকদের খুব বেশি সম্পৃক্ততা নেই।

ভবিষ্যতের রোগের জন্য সহায়তা করতে পারে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন
মেডিকেল এক্সপ্রেস
সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষায় ভ্যাকসিন আমাদের অন্যতম বৃহৎ একটি হাতিয়ার এবং বিশ্ব রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে করোনভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রতিষেধক একটি ভ্যাকসিনের জন্য। আমরা যদি ভ্যাকসিন তৈরির নতুন পদ্ধতি অর্জন করতে পারি তবে অপেক্ষাটি আরও কম হতে পারে।

যদিও বিশ্বের বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯-র জন্য জিনগত কোডটি মাত্র নয় সপ্তাহ হয় পেয়েছেন, ইতোমধ্যে একটি ভ্যাকসিনের (এমআরএনএ-১২৭৩) প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। জিনোমিক ক্রম থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই টাইমস্কেলটি ভ্যাকসিনের উন্নয়নে নজিরবিহীন।

ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকটিজ ডিজিজ (এনআইএআইডি) মডার্না এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপারেডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই) এর মধ্যে একটি সহযোগিতায় ভ্যাকসিনটির নির্ধারিত সুরক্ষা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা আগামী সপ্তাহগুলোতে একটি ছোট ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হবে যাতে ৪৫ জন জড়িত থাকবেন। এই ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে কি না তা বোঝার জন্য বিচারটি প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ঐতিহ্যবাহী ভ্যাকসিনগুলির বিপরীতে এই ভ্যাকসিনটি রিবোনুক্লিক এসিড (আরএনএ) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। যদি সফল হয় তবে অত্যাধুনিক পদ্ধতি ভবিষ্যতে রোগের প্রকোপগুলির জন্য ভ্যাকসিন বিকাশে বিপ্লব আনতে পারে।

আরএনএ সমস্ত জীবন্ত কোষে উপস্থিত থাকে এবং কোষের ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ। একটি আরএনএ ভ্যাকসিন আমাদের কোষের প্রোটিনগুলিকে হাইজ্যাক করে কোনও ভাইরাস প্রোটিনের একটি সংস্করণ প্রতিলিপি তৈরির কাজ করবে যা আমাদের দেহগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, উদাহরণস্বরূপ অ্যান্টিবডি বা সেলুলার প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। পরে আমাদের যদি সত্যিকারের ভাইরাসের মুখোমুখি হতে হয় তবে এটি আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে।

আরএনএ ভ্যাকসিনের বিকাশ একটি খুব আশাব্যঞ্জক ক্ষেত্র তবে এখনও কোনও অনুমোদিত পণ্য পাওয়া যায়নি। একটি বড় চ্যালেঞ্জ কীভাবে আরএনএ ভ্যাকসিনটি সেলে প্রেরণ করা যায় তা কীভাবে বেঁচে থাকে তা নির্ধারণ করে চলেছে আমাদের শরীরগুলি স্বাভাবিকভাবেই বিদেশী আরএনএ অণু ধ্বংস করতে চায়।
সুতরাং, যদিও আমরা এখনও এটি কাজ করে কিনা জানি না, যখন আমাদের অন্যান্য ভ্যাকসিনের পদ্ধতির সাথে বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তখন কেন আমরা নতুন প্রযুক্তিগুলিতে মনোনিবেশ করছি?

গত কয়েক দশক ধরে আমরা বর্ধিত নগরায়ন, আরও আন্তঃসংযুক্ত বিশ্ব এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতো কারণগুলোর দ্বারা সংক্রামক রোগের প্রসারে পরিবর্তন দেখেছি। এটি ঐতিহ্যবাহী ভ্যাকসিন বিকাশ এবং উৎপাদন নিয়ে তিনটি সমস্যা তুলে ধরেছে:

সময়, মহামারীজনিত রোগের জন্য ভ্যাকসিন বিকাশের একটি বড় বাধা হিসাবে রয়ে গেছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভ্যাকসিন অর্জন করতে সাধারণত ১০ বছর বা তার বেশি সময় লাগে, যা নতুন প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়।

ব্যয়, সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিবিড়ভাবে সময়ের সাথে যুক্ত। এটি একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে এবং লাইসেন্স দেয়ার জন্য সাধারণত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হয়। মহামারী রোগের জন্য ভ্যাকসিনগুলোর দীর্ঘমেয়াদী নিশ্চিত বাজার না থাকায় অতিরিক্ত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি, যেমন হাম, মাম্পস এবং রুবেলা (এমএমআর) এর ভ্যাকসিন। সুতরাং বিনিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ কঠিন।

কর্মপরিধি, যে কোনও ভ্যাকসিন তৈরি করা কেবলমাত্র তখনই কার্যকর যখন ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ প্রস্তুত করা যায়। কোভিড-১৯ এর জন্য একটি বিশাল সংখ্যার প্রয়োজন এবং গ্লোবাল ভ্যাকসিন উৎপাদন ক্ষমতা পর্যাপ্ত নাও হতে পারে।
আমার আশা এই যে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন বিকাশের জন্য অর্থায়ন এবং ফোকাস এই নতুন প্রযুক্তিগুলির অগ্রগতি অনুমোদন করবে। যদি আমরা উন্নয়নের নতুন পদ্ধতিগুলো অর্জন করতে পারি তবে আমরা ভবিষ্যতের যেকোন প্রাদুর্ভাবের জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত হয়ে উঠব এবং দ্রুত, ভ্যাকসিনগুলির সাহায্যে আরও বেশি জীবন বাঁচাতে সক্ষম হব।

বিগত দশকে আমরা ইনফ্লুয়েঞ্জা, সারস, জিকা, ইবোলা এবং এখন কোভিড-১৯ এর স্বাস্থ্য ও আর্থিক প্রভাব দেখেছি। সম্ভবত আরও প্রাদুর্ভাব আসার সম্ভাবনা রয়েছে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ