বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
![img_img-1720117021](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678506381_AD-1.jpg)
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কোভিড-১৯ আতংকে টানা দশদিনের ছুটিতে দেশে যেন লকডাউন অবস্থা। লম্বা ছুটি পেয়ে আর করোনা আতংক নিয়ে নিজ নিজ ঘরে ফিরেছেন মানুষ। বড় বড় শহরগুলো ফাঁকা হলেও গ্রামীন জনপদ সরগরম। কিন্তু সেখানেও ঘরের বাইরে আসতে মানা। ঈদ কিংবা অন্য কোন ছুটিতে ঘরে ফিরলে যে আনন্দ পাওয়া যায়। এবারের চিত্র উল্টো। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কারো বাড়িতে কেউ যেতে পারছেনা। আবার অনেকে পছন্দ করছেন না কেউ আসুক। এ যেন চাচা আপন জান বাঁচার মত অবস্থা।
কি শহর কি গ্রাম সর্বত্র হাটবাজার বন্ধ। রাস্তাঘাটও ফাঁকা ফাকা ভাব। শহরের রাস্তায় কিছু রিক্সা অটোরিক্সা চলাচল করলেও উপজেলা পর্য্যায়ে একেবারে হাতে গোনা। বিকেলে গ্রামের মোড়ের চা সিগারেটের দোকানে কিছুটা ভীড় জমলেও মাঝে মধ্যে বেরসিক পুলিশ আর আনসার হানা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে চায়ের কাপে কিংবা সিগারেটের সুখটানের মধ্যে চলছে করোনা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা। ছুটির শুরুতে সবাই পরিবারের সাথে এক হতে পেরে বেশ খুশী ছিল। মুখে ছিল নানা কথার খৈ। যারা জীবন যুদ্ধের কারনে নিজ শহর কিংবা গ্রামের বাইরে থাকেন তারা বেশ খুশী। আবার স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী চাকুরীজীবী যারা সেই সকালে বের হয়ে ঘরে ফিরতেন রাতে। পরিবারের সাথে সময় দিতে পারতেন না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় তারাও এখন ঘরবন্দী। পরিবারের সাথে দেবার জন্য অফুরন্ত সময়। শুরুটা ভাল হলেও ধীরে ধীরে পানসে হয়ে যাচ্ছে বিরক্তিভাব আসছে। কত কথা বলা যায়। আর কত টিভির পর্দায় চোখ রাখা। ঘরে বসে সময় যেন কাটতে চাইছে না। মোবাইল নিয়ে একে ওকে ফোন করে আর কত কথা বলা যায়। এখনি এ অবস্থা সামনের দিনগুলো নিয়ে কিছুই ভাবতে পারছেনা। এরসাথে যোগ হয়েছে চৈত্রের সাইত্রিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের খরতাপ।
সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পড়–য়া ছেলে মেয়েরা। সবাই শহর থেকে গ্রামে ফিরেছে। ক্যাম্পাসের বাঁধন ছাড়া জীবনে ছন্দপতন ঘটেছে। তাদের ফাষ্টফুডের অভ্যেস বদলেছে। কি গ্রাম কি শহরের বন্ধু বান্ধবদের সেই আড্ডা আর নেই। প্রযুক্তির এ সময়ে মোবাইল ভরসা। আর কত টেপাটিপি করা যায়। সেখানে বিরক্তি ভর করেছে। পার করছে এক স্বাসরুদ্ধকর সময়। কিছুতেই যেন সময় পার হচ্ছেনা। একেকটা দিনকে অনেক বড় মনে হচ্ছে। কবে প্রিয় ক্যাম্পাস খুলবে তাও অনিশ্চিত। আর করোনাভাইরাসের অবস্থা কি দাঁড়াবে তা নিয়েও আতংকিত। এরমধ্যে ছুুটছে গুজবের ফোয়ারা। ফেসবুক থেকে চলে আসছে নানা কথা। ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে নানা ধরনের টোটকার কথা। কেউ বলছেন আদা আর গোলমরিচের চা খান। আবার কেউ মধু আর কালোজিরা ও বিভিন্ন ধরনের শরবত এমন সব অনেক প্রেসক্রিপশন।
এমন অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে মানুষ বেশকিছু বিষয় রপ্ত করে ফেলেছে। আগে যারা হাত ধোয়াকে গুরুত্ব দিতনা তারাই এখন বার বার হাত মুখ ধুচ্ছে। মুখে মাস্ক পড়ছে। আগে সেলুন ছাড়া দাড়ি সেভ চলতো না। এখন সে কাজটিও বাড়িতে করতে হচ্ছে। লন্ড্রিও বন্ধ। সচেতন যেন সর্দি কাশী না হয়। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য যে সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে তা মেনে চলার চেষ্টা করছেন। অনেকে ধর্মে কর্মেও মন দিচ্ছেন। আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছেন। বিব্রতকর অবস্থায় আছেন সর্দি কাশি হওয়া মানুষ। তারা কাশি বা হাচি দিলেই মানুষ তাদের দিকে তাকাচ্ছে অন্যরকম দৃষ্টিতে।
অনেক সামর্থবান মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাড়ছে সাহায্য প্রার্থীর সংখ্যা। কেউ সাহায্য চাচ্ছেন আবার কেউ ঋণ চাচ্ছেন। সাধারন কর্মজীবীদের পকেট গড়ের মাঠ হবার পথে। আর দিন খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা আরো কাহিল হচ্ছে। সরকারী সাহায্য সহায়তা শুরু হয়েছে গতানুগতিক ধারায়। চিরা চরিত দলবাজি স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। যারা প্রকৃত হকদার তাদের ভাগ্যে জুটছেনা। যারা দিচ্ছে তাদের কাছে যাবার সাধ্যও এসব হতদরিদ্র মানুষের নেই। দিন দিন শ্রমজীবী কর্মহীন মানুষের অনাহার অর্ধাহার বাড়ছে। পেটের টানে এসব মানুষ ঘরের বাইরে বের হয়ে আসছে। গত তিন চার দিনের চেয়ে রাস্তায় এসব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তালাইমারী মোড়ে শ্রম বিক্রির স্থানে কাজের আসায় বসে ছিলেন কজন শ্রমজীবী মানুষ। করোনাভাইরাসের আতংকের মধ্যে কেন বাইরে এসেছেন এমন কথা জিজ্ঞেস করতে বলে ওঠেন ভাই ঘরে অনাহারে মরে পড়ে থাকার চেয়ে ভাইরাসে মরাও ভাল। ঘরের বউ ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা। তাই পালিয়ে এসেছি। একজন বলেন বিশ ত্রিশ টাকা থাকলে দেন। মুড়ি টুড়ি কিনে খায়। হোটেল রেস্তরা বন্ধ। ডাষ্টবিনে উচ্ছিষ্টও নেই। অনাহারে রয়েছে রাস্তায় কুকুরগুলো। তাদের কান্নার আওয়াজ কানে বাজে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।