পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছোট্ট দু’টি ঘটনা। এক. যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় মাস্ক না পড়ায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েমা হাসান। দুই. কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আক্তার পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে জনতাকে কান ধরানো-মারধরের দৃশ্য। দুটি ঘটনা নিয়ে ভার্চ্যুয়াল জগতে চলছে তোলপাড়। দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশনের খবর প্রচার হওয়ায় ছি, ছি রটে গেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েমা হাসানকে ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে সত্যিই কী ওই দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আইনবহির্ভূত কিছু করেছেন? ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণ করোনাভাইরাস কি ছেলে-বুড়ো দেখে আক্রমণ করে? নিজেকে নিরাপদ রাখতে হলেও বয়স্ক হোক আর তরুণ হোক করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আবশ্যক। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সিংগাপুর নতুন আইন করেছে এক মিটার (তিন ফুট) দূরত্ব বজায় না রাখলে ৬ মাসের কারাদন্ড। করোনা থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের রক্ষা করতে এমন কঠোর নিয়ম নাগরিকদের মানতে বাধ্য করছে বিশ্বের বহুদেশ। বাংলাদেশেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ কেউ তা মানছেন না। নিরাপত্তার প্রয়োজনে প্রশাসনের আদেশ-নির্দেশ না মানা কি কোনো সুনাগরিকের কাজ?
করোনভাইরাস থেকে রক্ষায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার দায়িত্ব নাগরিকদের। কোনো নাগরিক সে দায়িত্ব পালন না করে আত্মঘাতী আচরণ করলে সেটা দেখার দায়িত্ব প্রশাসন যন্ত্রের। রাজধানীতে দিনের বেলায় কিছু নিয়ম মানার দৃশ্য দেখা গেলেও সন্ধ্যা হলেই পাড়ায়-মহল্লায় মানুষের আড্ডা জমতে দেখা যায়। অধিকাংশের মুখে নিরাপত্তামূলক মাস্ক নেই। এমনকি কিছু চায়ের দোকানকে ঘিরেও সামাজিক দূরত্ব না মেনে আড্ডা দিতে দেয়া যায়। এমনকি ঢাকায় বসবাসরত বিদেশীর হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। গ্রামের অবস্থা আরো খারাপ।
মরণঘাতী করোনাভাইরাস দেখা যায় না, বোঝা যায় না, অনুভব করাও যায় না। অচেনা করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে পৃথিবীর যাপিত জীবন। বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার বলেছেন, ‘এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে গোটা পৃথিবীর সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধে সামিল হতে হবে। এককভাবে বিজয়ী হয়ে লাভ নেই; সামষ্টিকভাবে করোনা ঠেকাতে হবে।’ তৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন শচীন। করোনার বিরুদ্ধে বিশ্বের দেশে দেশে চলছে কারফিউ কোথাও লকডাউন। পরাক্রমশালী আমেরিকা থেকে শুরু করে অফ্রিকার গরিব দেশগুলোকে নিয়ে গেছে এক কাতারে। চারদিকে শুধু এক আওয়াজ, অচেনা ঘাতক করোনা থেকে বাঁচতে চাই, বাঁচাতে হবে। এখন শক্তির লড়াইয়ে নয় মানবতা বিপন্ন করোনাভাইরাসে। পৃথিবী এখন কাঁপছে অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাসের ভয়ে। প‚র্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব দিকেই একই চিত্র একই দৃশ্য। গবেষকরা কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও সরকার সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ওজন বাতাসের চেয়ে বেশি। তাই বাতাসে না উড়ালেও মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এক যায়গায় একই ভাইরাস ৯ ঘণ্টা জীবিত থাকে। একজনের থেকে হাজার জনের শরীরে ছড়িয়ে যায়। জাপান, ইতালি, কোরিয়ায় একজনের মাধ্যমে গোটা দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। অতএব সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে সরকার সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু সারাদেশের বাস্তব দৃশ্য কেমন?
নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিমান, ট্রেন, বাস ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও গ্রামেন্টস ছুটি ঘোষণা করায় বানের পানির মতো মানুষ ছুঁটে গেছে গ্রামে। কিন্তু ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরা কেউই হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। এমনকি বিদেশ থেকে যারা দেশে এসেছেন এমন লাখ লাখ মানুষ করোনাভাইরাস বহন করে পালিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় রয়েছেন। রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় প্রায় অর্ধশত উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ‘করোনাভাইরাস ছুটিতে’ ঢাকা থেকে যারা গ্রামে ফিরেছেন তাদের কেউ সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানছেন না। দল বেঁধে বাজারে যাচ্ছেন, বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন, গ্রামের চৌরাস্তায় আড্ডা দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও সচেতন মানুষ গ্রামের প্রবেশ মুখে নতুন আগতদের হাত ধোঁয়ার জন্য সাবান পানির ব্যবস্থা রেখেছেন স্থানীয় ক্লাব-পাঠাগার ও সচেতন নাগরিক। কিন্তু গ্রামে ফেরত লোকজন সেখানে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুঁচ্ছেন না। হাত ধোঁয়াকে তারা অপমানজনক মনে করছেন।
রাজধানী ঢাকায় যানবাহন ও লোকজনের চলাফেরা কম হলেও হাজার হাজার মানুষ সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানছেন না। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, ওয়ারি, আরামবাগ, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ঘুরে দেখা গেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন গাদাগাদি করে। কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও অধিকাংশের মুখে নিরাপত্তা মাস্ক নেই। এমনকি একে অন্যের সঙ্গে গা ঘেঁষে ঘণ্টার পর ঘন্টা বসে গল্পগুজব করছেন। গতকাল যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা গেল কয়েকজন রিকশাওয়ালা যাত্রী না থাকায় আইল্যান্ডে বসে বিড়ি টানছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই পাশেই চার-পাঁচ যুবক একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসে রয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে ঘরে থাকার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো ধরনের প্রটেকশন ছাড়াই বিদেশিরা যত্রতত্র ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাসের বিস্তার বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, উত্তরা, শাহজাদপুর, নিকুঞ্জ ও রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগ পাওয়া গেছে। উত্তর ধানমন্ডি কলাবাগান এলাকার এ কে এম আজাদ বলেন তেঁতুলতলা মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকজন সোমালিয়ান সারাক্ষণ খেলাধুলা করে। এসময় তারা বেশ চিৎকার চেচামেচি করে। তাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে আশপাশের লোকজন ভিড় করে’। রামপুরা এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, ‘এরআগে এই এলাকায় বিদেশিদের চলতে দেখিনি কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ওরা যেভাবে চলাফেরা করছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। সামাজিক দ‚রত্ব বজায় রাখতে সরকারি নির্দেশনা তো মানছেই না বরং এলাকাকে আরও বেশি ঝুঁকিপ‚র্ণ করছে’। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের স্থানীয় বাসিন্দা মিরাজ হোসেন বলেন, ‘নাইজেরিয়ানরা অনেকদিন ধরেই এখানে বসবাস করছে। তারা হোম কোয়ারেনটাইনের সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করছে। শুধু নাইজেরিয়ানরাই নয়, এখানে বসবাসরত চায়নাসহ অন্যান্য বিদেশিরাও একই কাজ করছে’। জানতে চাইলে ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এটা খুবই ভীতিকর খবর। করোনা সংক্রমন ভাইরাস। সামাজিক দূরত্ব বজার রাখা উচিত। বাইরে ঘোড়াঘুড়ি করা যাবে না বরং প্রয়োজনে বাইরে গেলেও ঘরে ফিরে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। তার পর অন্য কিছু ধরবেন। কারণ এই হাত দিয়ে যা কিছু ধরা হবে, সেখানেই ভাইরাস থেকে যেতে পারে। টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল, কিবোর্ডে ভাইরাস থেকে যেতে পারে। সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। যে কোনো ভাইরাস প্রতিরোধে যেস ব্যবস্থা নেয়া হয়, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ জন্য ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার, গণপরিবহন এড়িয়ে চলা, প্রচুর ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। আমাদের কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চললেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।