পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, মৃত্যুর চেয়ে আতঙ্কেই মানুষ বেশি কাহিল হয়ে পড়ছে। আক্রান্তের হার চীনে যা ছিল যুক্তরাষ্ট্র তা পার হয়ে গিয়েছে। ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও আমেরিকা এখন গ্রাফ ওঠানামার চক্রে পড়ে গেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করছেন, তার পোশাক দেখে মনে হয়, তিনি কোনো নভোচারি বা ডুবুরি।
পিপিই বা পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট তার এতো জবরজঙ্গ যে, দেখে মনে হয় ভাইরাস তাকে ধরতে পারবে না। ধরলে তার মন্ত্রীদের কিংবা দুনিয়ার অন্যসব লোকদের ধরবে। যারা তার মতো এমন সতর্ক বেশ ধারণ করেননি। কিন্তু কোরআন এমন বলে না।
কোরআন বলে, ‘বলো, আমাদের কখনোই এমন কোনো বিপদ স্পর্শ করবে না, যা আল্লাহ আমার ভাগ্যে লিখে না রেখেছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক। অতএব, ঈমানদাররা যেন শুধু তার ওপরই ভরসা করে।’ (আল-কোরআন-৫১) হযরত নূহ (আ.)-এর অবাধ্য পুত্রকে তিনি যখন কাফেরদের দল ছেড়ে তার সাথে কিশতিতে চড়তে ডেকেছিলেন, তখন সে বলেছিল, আমি এই বন্যা থেকে আত্মরক্ষা করতে ওই উঁচু পাহাড়ে আশ্রয় নিব। তখনই একটি পর্বতসমান ঢেউ এসে পিতা-পুত্রের মাঝখানে বাধা হয়ে যায় এবং এই সংলাপটি এখানেই শেষ হয়।
তখন হযরত নূহ (আ.) বলেছিলেন, আজকে আল্লাহর হাত থেকে কেউই রক্ষা পাবে না কেবল তারা ছাড়া যাদের তিনি রহম করবেন। (আল-কোরআন-৪৩) এখানে কর্তব্য হলো, সতর্কতার আগে আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করা। সতর্কতার পাশাপাশি তার ওপরই পূর্ণ ভরসা করা। পৃথিবীতে যে কয়জন ব্যক্তি সর্বোচ্চ সতর্কতায় ছিলেন তাদের মধ্যে প্রথমে একটি ধাক্কা খান ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রাথমিকভাবে কাটিয়ে উঠেছেন বোধহয়। এখন আক্রান্ত আছেন ব্রিটেনের রাণী, প্রিন্স চার্লস, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক, ফ্রান্সের এক রাজকুমারী মারিয়াসহ উন্নত দেশের কিছু উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি।
এছাড়া বিশ্বের প্রায় সকল রাজা-বাদশাহ, চ্যান্সেলর, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণসহ সকল শ্রেণির ভিভিআইপিরা স্পেশাল আইসোলেশন বা কোয়ারান্টাইনে নিজেদের রেখেছেন। আসলে বিশ্বের প্রায় আটশ’ কোটি মানুষের কত পার্সেন্ট এমন আছে যারা সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দীর্ঘসময় ঘরে আটকে থাকতে পারবে। আল্লাহ সবার জন্য নিরাপত্তা বিস্তৃত করে দেন। এই আযাব থেকে তিনি যেন মানবজাতিকে সহজেই নিষ্কৃতি দান করেন।
একটি খবরে মানুষ আরো বেশি হয়রান, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এই ভাইরাস এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বার তার চরিত্র বদল করেছে। সম্ভাবনা আছে, মানুষের মাধ্যমে নিজেকে না ছড়িয়ে বাতাসের মাধ্যমে ছড়াবার চেষ্টা করার। তখন আর শারীরিক দূরত্ব কিংবা বার বার হাত ধুয়েও এর হাত থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না।
বাতাসে যদি ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়, তাহলে হোম কোয়ারেন্টাইন কিংবা ডেড আইসোলেশনেও খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না। বর্তমান চরিত্রেও কিন্তু নিরাপত্তার সব ব্যুহ ভেদ করে এ ভাইরাস এমন কিছু মানুষকে ধরেছে যাদের নিরাপত্তার কথা আমরা কেবল কল্পনা করতে পারি। মিডিয়ায় জানতে পারি, কিন্তু নিজেদের জীবনে তৈরি করতে পারি না।
মিসরের একজন আল্লাহওয়ালা জ্ঞানী ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, এই ভাইরাস যদি আল্লাহ মানবজাতিকে ধ্বংসের জন্য দিতেন তাহলে শতকরা ১০০ জনকেই এর দ্বারা তিনি মৃত্যু দিতে পারতেন। যেহেতু মৃত্যুর চেয়ে আরোগ্যের হার বেশি, অতএব আমরা মনে করতে পারি, তিনি এটি আমাদেরকে সতর্ক করার জন্য দিয়েছেন। আমরা যেন তওবা করি।
এর আলোকে আমরা দুনিয়ার সকল মানুষকে তা নিজের কৃতকর্মের একটি আত্মবিশ্লেষণ করে নেয়ার আহবান জানাই। সবাই আসুন, নিজেকে সংশোধন করি। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করি। মানুষের প্রতি কৃত অন্যায়-অত্যাচার থেকে ফিরে আসি। সৎকাজ ও মানবতার কল্যাণে বাকিটা জীবন ব্যয় করি। এই মহামারীতে মারা গেলেও এমন ঈমান ও আমলের ওপর থাকি, যেন শহীদী মৃত্যু পাই।
পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘তাদের ওপর ততক্ষণ আজাব আসবে না যতক্ষণ তাদের মাঝে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। আর আমি ততক্ষণ তাদের ওপর আজাব দিব না যতক্ষণ তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকবে।’ (আল-কোরআন-৩৩) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুসলিম মনিষীগণ বলেন, আল্লাহর রাসূল তো বর্তমানে উম্মতের মাঝে নেই। আছে কেবল ক্ষমাপ্রার্থনার সুযোগ।
অতএব, তাওবা-ইস্তেগফার করতে থাকা এবং বেশি বেশি আল্লাহর রাসূলের সুন্নাতের ওপর আমল, তার শিক্ষা ও আদর্শের চর্চা, বিশেষ করে তার ওপর অধিক দরুদ ও সালাম পেশ করার মাধ্যমে উম্মত যে কোনো আজাব থেকে রক্ষা পেতে পারে। অতীতে অনেক সময় দেখা গেছে, মদিনা শরিফে বৃষ্টির জন্য সাহাবায়ে কেরাম যখন দোয়া করতেন তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা.)-এর পরামর্শে নবী করিম (স.)-এর কবর মোবারকের ওপর থেকে আকাশ দেখা যায়, এমনভাবে জানালা খুলে দেয়া হয়েছিল। তখন অঝোরধারায় বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং অতিবৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য শেষ পর্যন্ত হযরত ওমর (রা.) এই জানালা বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধ জানান।
আরেকবার কোনো এক বিপদের সময় হযরত ওমর (রা.) নবী করিম (স.)-এর পবিত্র রওজা মোবারকের ওপর থেকে খেজুর গাছের পাতা সরিয়ে আকাশ দেখা যাওয়ার মতো পথ তৈরি করে বিশেষভাবে দোয়া করেন এবং সে বিপদ কেটে যায়। যে জন্য ওসমানী খলিফারা রওজা শরিফের ওপর সবুজ গম্বুজ নির্মাণের সময় এতে একটি জানালা রেখে দেন। উম্মতের বিপদের সময় যেন এ জানালা খুলে দেয়া যায়। বর্তমানে সবুজ গম্বুজের ওপর এই জানালা দৃশ্যমান।
মুসলমানরা আজাব থেকে রক্ষার জন্য অধিক দুরুদ-সালাম ও ব্যাপক তওবা-ইস্তেগফারের চর্চা করবে এটাই স্বাভাবিক। ইনশাআল্লাহ, এতে তারা যে কোনো আজাব-গজব থেকে রক্ষা পাবে। তবে, অমুসলিমদের জন্য এই আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হলো, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা, ক্ষমতাবান, মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহকে চেনা ও বিশ্বাস করা। এছাড়া, যারাই এ আজাবে পাকড়াও হবে তারা অনন্তকাল আজাবেই নিপতিত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।