Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চায়ের দোকানে আড্ডা

সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টিতে বড় বাধা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কালুপীর বাজার। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন অনেক মানুষ। এসময় হঠাৎ সেখানে উপস্থিত উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। স্থানীয় ইউপি মেম্বারের নেতৃত্বেই সেখানেই চলছিল আড্ডা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, এরা কোন কাজ করে না। সারাদিন লোকজন নিয়ে বাজারে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
শুধু পীরগঞ্জ নয়, সারাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে আড্ডা ও অবসর কাটানোর অন্যতম জনপ্রিয় স্থান চায়ের দোকান। কাজের ফাঁকে অথবা কাজ শেষে শত শত মানুষ একত্রিত হয় চায়ের দোকানে। সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা না মেনে বসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় চায়ের আড্ডায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের ভিড় হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণ। বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এড়াতে দেশের সর্বত্র সামাজিক দূরত্ব তৈরির নির্দেশনা থাকলেও এর লঙ্ঘন হচ্ছে চায়ের দোকানগুলোতে। এখনো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকছে দেশের কমপক্ষে পাঁচ লাখ চায়ের দোকানে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানগুলোয় এ ভিড়ের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে চায়ের দোকান ছিল প্রায় ৪ লাখ ৯১ হাজার ২৭৯টি। ২০১৩ সালেও এর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১১ হাজার ৩৩০। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে চায়ের দোকান বেড়েছে ৭৯ হাজার ৯৪৯টি বা প্রায় ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ। এসব চায়ের দোকানে কাজ করছেন প্রায় ১০ লাখ ৭৮ হাজার ব্যক্তি। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৮২ হাজার।
অন্যদিকে ২০০১ সালে সারাদেশে মাথাপিছু চা ভোগের পরিমাণ ছিল ২৯৩ গ্রাম। ২০১৩ সালে তা উন্নীত হয়েছে ৩৭৯ গ্রামে। ২০১৭ সালেই তা ৫০০ গ্রাম ছাড়িয়ে যায়। মাথাপিছু চায়ের এ ভোগ বৃদ্ধির পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে পাড়া-মহল্লা ও মোড়ের চায়ের দোকানগুলো। পাঁচ বছরে দেশে চায়ের দোকানের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে চায়ের দোকান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাগুরায়, ৭৬ শতাংশ। হারের দিক থেকে পরের অবস্থানে রয়েছে রংপুর। বিভাগীয় শহরটিতে পাঁচ বছরের ব্যবধানে চায়ের দোকান বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বান্দরবানে ২৫ শতাংশ, জামালপুরে ৫০, কুড়িগ্রামে ২৯, শেরপুরে ৪৮, নেত্রকোনায় ৫০ ও কিশোরগঞ্জে ৩০ শতাংশ হারে চায়ের দোকান বেড়েছে। এর বাইরেও পঞ্চগড়ে ২৬ শতাংশ, বগুড়ায় ৩৯, ঝিনাইদহে ৪১, মানিকগঞ্জে ৩০, মেহেরপুরে ২৬, নীলফামারীতে ৫১, সিরাজগঞ্জে ২৫ ও কিশোরগঞ্জে প্রায় ৩০ শতাংশ হারে চায়ের দোকান বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সময় দেশের মার্কেট, শপিংমল, বিপণিবিতান ও গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব ধরনের বিনোদনকেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখার পাশাপাশি এ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টির তাগিদেই এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এরপরও প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে চায়ের দোকানে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ে সচেতনতাও বেশ কম।

দেশের কয়েকটি প্রত্যন্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের বাজার বা গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। থানা পুলিশ দিনে অথবা রাতে একবার উপস্থিত হয়ে দোকানগুলো থেকে মানুষজনকে সরিয়ে দিলেও পরক্ষণেই আবার সেগুলো জমে উঠছে। একই সাথে গ্রামাঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন বিদেশফেরত প্রবাসীরা। প্রতিনিয়তই তারা আড্ডা জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে।
এরই মধ্যে গণজমায়েত এড়ানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সংস্থাটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইতোমধ্যে বহুবার বলেছেন, এ সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি। এখন সব ধরনের জমায়েত এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। তা না হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে।

 



 

Show all comments
  • *হতদরিদ্র দীনমজুর কহে* ২৯ মার্চ, ২০২০, ১০:০৯ এএম says : 0
    হায়রে মানুষ হারায়ে হুশ হইলি বেহুশ হুশ হবে তোর কবে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ