Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকিতে ভূগর্ভস্থ পানি

চাপ কমাতে লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ কম হয়েছে

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

ভূপৃষ্ঠের পানি স্বল্পতায় ভ‚গর্ভস্থ পানি উত্তোলন বেড়েছে বহুগুণে

ভূপৃষ্ঠে পানি নেই। পূরণ হচ্ছে ভ‚গর্ভস্থ পানিতে। শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদী, খাল, বিল পানিশূন্য অবস্থা। এখন চলছে সেচনির্ভর বোরো আবাদের ভরা মৌসুম। মাঠে মাঠে দিনরাত সমানতালে সেচযন্ত্রে পানি উত্তোলন হচ্ছে। তাও অপরিকল্পিতভাবে। এত মাটিরতলার পানির রিজার্ভার পড়ছে হুমকির মুখে।
ইতোমধ্যে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর উদ্বেগজনক হারে নেমে গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় পড়ছে পানির জন্য হাহাকার। বিএডিসি (সেচ) ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, কোথাও কোথাও পানির স্তর নেমে গেছে ২৩ থেকে ২৪ ফুট। ২৮ থেকে ৩০ ফুট নেমে গেলে ‘ডেঞ্জার পজিশন’ হয়। সেচনির্ভর কৃষিজমি রক্ষা করার জন্য দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। মাটির রস দ্রæত শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি তুলে জমিতে দেওয়ার সাথে সাথে শুষে নিচ্ছে। ঘর-গৃহস্থালিতে খাবার ও গোসলের পানি তোলা কঠিন হচ্ছে। একসময় নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি দিয়ে দোনা ও সেউতি পদ্ধতিতে সেচে চাষাবাদ হতো। বেশ কয়েকবছর হলো সেই সুযোগ অবশিষ্ট নেই। মাঠ কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা বলেছেন, সেচনির্ভর কৃষি জমি রক্ষার্থে ভ‚পৃষ্ঠে পানির অভাবে পুরোপুরি ভ‚গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস উইং) কৃষিবিদ চন্ডিদাশ কুÐু গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশে সেচনির্ভর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮শ’ হেক্টর। ভ‚গর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমাতে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এই হিসাবে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে কম হয়েছে ধানের আবাদ। তিনি জানান, ওইসব জমিতে ধানের বদলে সবজি, মাল্টা ও ভুট্রায় ডাইভারসিটি হয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ। লক্ষাধিক হেক্টরে ধান উৎপাদন কম এটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। সরকারি হিসাবানুযায়ী প্রতি হেক্টরে গড়ে ৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই হিসাবে প্রায় ৭লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কম হবে। যদিও কৃষি অধিদপ্তরের দাবি, রোপা আমন ও আউশে তা পুষিয়ে নেওয়া হবে। এতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একবার যদি কৃষক অন্য আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে বা অভ্যস্ত হয় তাহলে ধান আবাদ করানো কঠিন হবে। কৃষকরা এমনিতেই ধান উৎপাদন করে বারবার আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক ধান আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি (সেচ) পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিসেফের তথ্য উদ্ধৃত করে সংশিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কৃষি সেচ ও ঘর-গৃহস্থালিসহ সকল ক্ষেত্রেই পানির যে ব্যবহার হচ্ছে তার প্রায় ৮৫ ভাগই ভ‚গর্ভস্থ পানি। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. আখতারুজ্জামান জানান, গবেষণার ফলাফলে জানা গেছে বোরো মৌসুমে মাত্র এক কেজি ধান উৎপাদন করতে গড়ে ভ‚গর্ভস্থ পানি লাগে ৩৫০০ লিটার। ফলে বোরো ধান চাষে ভ‚গর্ভস্থ পানির উপরে মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ছে। এই অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সেচ সাশ্রয়ী অলটারনেট ওয়েটিং এন্ড ড্রাইয়িং পদ্ধতি ব্যবহারে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তার কথা,সেচনির্ভর ধান আবাদ মাঠে মাঠে অনেক কমেছে।

সূত্র জানায়, ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার চলছে সম্পুর্ণ অপরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবেই। প্রতিটি শুষ্ক মৌসুমে এর মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণে। ভ‚পৃষ্ঠের পানির ঘাটতি পুরণে পাল্লা দিয়ে চলছে ভ‚গর্ভস্থ পানি উত্তোলন। যার প্রায় ৪০ ভাগ অপচয় হচ্ছে। ভ‚গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের নীতিমালা আছে কিন্তু মাঠে কেউ মানছে না। ‘সারফেস ওয়াটার’ বৃদ্ধি ও রাজশাহীর বরেন্দ্র প্রকল্পের আদলে সরকারিভাবে ‘সেচ কমান্ড এরিয়া’ গঠন করা যায় তাহলে সেচের পানির অপচয় তো হবেই না, উপরন্তু কৃষকরা বিরাট লাভবান হবে। সেচযন্ত্র থেকে পানি উত্তোলন করে বারিড পাইপ অর্থাৎ আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে পাইপের সাহায্যে আশেপাশের জমিতে সেচের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হলে প্রতিবিঘায় সেচ খরচও নেমে আসবে অর্ধেকের কমে।

বিএডিসি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রæত কমছে। ইতোমধ্যে যশোর অঞ্চলে প্রায় ২৪ ফুট নীচে নেমে গেছে। তিনি জানান, আগে সরকারী একটা নিয়মনীতি ছিল একটি ডিপ টিউবওয়েল থেকে আরেকটি ডিপ টিউবওয়েলের দূরত্ব কমপক্ষে ২ হাজার ৫শ’ ফুট এবং ডিপ টিউবওয়েল থেকে ১ হাজার ৭শ’ ফুট দূরত্বে শ্যালো টিউবওয়েল স্থাপনের। এখন সেচ স্থাপনে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী জমির আইলে ডিপ, শ্যালো কিংবা পাওয়ার পাম্প স্থাপন করে ভ‚গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এতে ভ‚গর্ভস্থ পানির রিজার্ভ পড়ছে মারাত্মক হুমকিতে।



 

Show all comments
  • মোঃ শেখ আবু সেলিম ১৯ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৪১ পিএম says : 0
    আমি জানতে চাই একটি ডিপ টিউবল থেকে আরেকটি ডিপ টিউবওয়েল এর দূরত্ব অরজিনাল কত ফিট বা কত মিটার থাকা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২৫ অক্টোবর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ