Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ঘরে না খেয়ে মরতাছি সাহায্য দেয় খালি টিভিতে’

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ও সাংবাদিক মামা, ঘরে না খেয়ে মরতাছি আমাগো কেউ এক কেজি চাউলতো দিলো না। খালি দেহি টিভিতে আর পেপারে মানুষগো সাহায্য করতাছে নেতারা। আমাগো বস্তিতে তো কাউরে দেখলাম না এক কেজি চাউলও দিতে।
আমরা কি চাউল ডাউল কিছু পামু না? তিন ধরে ঘরের বাইরে যাইতে পারি না, পুলিশ ধইরা মারে। তাইলে খামু কি। আমাগো বস্তিতে তো হাজার হাজার গরিব মানুষ আছে নেতারা তাগো কবে দেব চাউল ডাউল। নাকি শুধু টিভিতে সাহায্য দিবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে এভাবে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন ফেরীওয়ালা মো. মেহেদী হাসান। তিনি থাকেন খুলনা মহানগরের বাস্তহারা এলাকার ৮ নম্বর রোডে।
মেহেদী হাসানের বয়স মাত্র ২০ বছর। এই বয়সেই এলাকায় এলাকায় ঘুরে ফেরি করে দৈনিক ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা আয় করে সংসার চালাতে হয় তার। মা বোনসহ ৫জনের সংসারে হাসানই উপার্জনের একমাত্র ভরসা। কিন্তু করোনার কারণে কয়েকদিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। ঘরে চাল ডাল শেষ। আবার মাসের শেষ ঘর ভাড়া কোথায় পাবে এমন হতাশায় বসে আছে ফেরী করা সেই ভ্যানের ওপর।
এসময় বাস্তহারা কলোনীর ১০ নং রোডের বাসিন্দা অটো চালক হায়াদার আলী বলেন, ‘মার্কেট বন্ধ। মুদির দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতাশূন্য। কোনো গাড়ি চলছে না। মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ। কোনো ভাড়া পাই না। অথচ চাল-ডাল-শাক-সবজি-মাছ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। সংসার চালাতে পারছি না। কেউ কোনো সাহায্যও করছে না।’
তিনি বলেন, ‘চাল-ডাল দেওয়ার কোনো খোঁজ নেই। শুধু সচেতন হইতে বলে। এ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। আমরা যারা না খেয়ে আছি। কেউ এসে দু’বেলা খোঁজ নিলো না। কি খেলাম না খেলাম। শুধু মুখ বাঁধতে কয়।’
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, খুলনা নগরের ৩১টি ওয়ার্ডে ছোট-বড় মিলিয়ে বস্তির সংখ্যা ৭২৬টি। তাতে বসবাস করছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। এর মধ্যে লক্ষাধিক রয়েছেন রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকচালক।
হতদরিদ্র মানুষরা জানান, পেটের জালায় তাদের বাইরে বের হতে হয়। অনেক সময় পুলিশ তাদের অযথা হয়রানি করে। নিরাপদ পোশাক, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাবস পড়তে বলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির খুলনা বিভাগীয় মহাসচিব মো: আজগর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ‘আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ লোক যারা দিন আনে দিন খায়। তাদের শুধু ঘরে পাঠিয়ে দিলেই হবে না। তাদের খাদ্যের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষুধার জালায় চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাবে। করোনা সংক্রমণের এ সময়ে রিকশাচালকসহ দিনমজুর দরিদ্র মানুষেরা সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন। অতি দ্রুত এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু করা উচিত। দেশে সরকারি ও বেসরকারি গুদামগুলোয় পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিভি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ