বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম এখন করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের ভয়ে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন বাদ দিয়ে অবস্থান করছেন যার যার নিজ গৃহে। লক্ষ্য একটাই বেঁচে থাকা। মানুষ অনেকটাই এখন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী। রাজা-বাদশাহ, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে চাকর-বাকর, ফকির-মিসকিন, কুলিমজুর তথা কোন শ্রেনী-পেশার মানুষই এই করোনাভাইরাস আতঙ্কের বাইরে নয়। এই ভাইরাস পৃথিবীর সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে এক কাতারে এনে ফেলেছে। সারা পৃথিবী এখন কার্যত অবরুদ্ধ। করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে বাঁচতে পৃথিবীর সব দেশেই চলছে লকডাউন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ইচ্ছার বিরুদ্ধেও মানুষকে এখন করতে হচ্ছে সবকিছুই। পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে সকল মানুষ এক সঙ্গে কোনদিন এত ভয় পেয়েছে কিনা কেউ বলতে পারছে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা রোগী শনাক্ত এবং কয়েকজন রোগী মারা যাওয়ার পর থেকে মানুষ মৃত্যু আতঙ্কে ভয়ে অস্থির। ইতিমধ্যেই সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছুটি ঘোষণা করায় সারাদেশ এখন কার্যত অচল এবং স্থবির। মূলত বাংলাদেশেও চলছে অঘোষিত লকডাউন। যেহেতু করোনাভাইরাসের কোন প্রতিষেধক নেই, তাই বিশ্বব্যাপী একমাত্র লকডাউনকেই সংক্রমণ কমিয়ে আনার একমাত্র উপায় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। জীবন বাঁচাতে সরকারের নির্দেশে মানুষ কেউ আর এখন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যদিও প্রথম দিকে বাংলাদেশের মানুষ সরকারের এই নির্দেশ পুরোপুরি মেনে চলেনি। তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার সাথে সাথে মানুষজনের ঘরে ঢুকে যেতে আর সময় লাগেনি।
বাংলাদেশের প্রাণ কেন্দ্র হচ্ছে রাজধানী ঢাকা যেখানে কোটি কোটি মানুষের বসবাস। পৃথিবীর অন্যতম অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ, দূষণযুক্ত, ব্যস্ত আর নোংরা শহরের তালিকায় ঢাকা অনেকটাই শীর্ষস্থানে। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন প্রভাবশালী আর ধনী ব্যক্তিদের বসবাস এই ঢাকা শহরে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে ঢাকা শহরের সেই নিয়মিত দৃশ্যপট। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা কোটি কোটি মানুষের পদচারনায় মুখর, কোলাহল আর দূষণযুক্ত রাজধানী ঢাকা এখন একেবারেই ফাঁকা। রাস্তাঘাটে সুনসান নিরবতা, ধনী-গরিব সকলেই যে যার নিজগৃহে। যে সকল ব্যক্তি শতশত, হাজার-হাজার কোটি টাকার মালিক, যাদের জীবনে অর্থের আর কোন প্রয়োজন নাই; অথচ তারপরেও দিনের পর দিন পরিবারের সদস্যদের সময় না দিয়ে শুধু টাকার নেশায় টাকার পেছনে ছুটে বেড়িয়েছেন তারাও এখন মরনের ভয়ে সবকিছু বাদ দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন ঘরবন্দী হয়ে পবিরাবের সদস্যদের সাথে। এটা আমাদের সমাজে করেনাভাইরাসের একটা বিরাট ইতিবাচক দিক। করোনা আতঙ্ক রাজধানী ঢাকার মানুষের জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ধনী-গরিব সকলেই এখন বাসায় থেকে পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করছেন। দেখা যাচ্ছে স্বামী তার স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহায়তা করছেন, তেমনি ঘরের ছেলেমেয়েরাও বাসায় বিভিন্ন কাজ নিজেদের হাতে করছে। কেউ মাকে রান্নায় সাহায্য করছে, কেউ আবার ঘরের আসবাবপত্র পরিস্কার করছে। ঘরে থাকলেও কেউই হাত গুটিয়ে বসে নেই। করোনাআতঙ্ক ঢাকার মানুষকে দারুণভাবে স্বাস্থ্যসচেতন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে সাহায্য করছে।
করোনা সংক্রমণের ভয়ে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ বাসায় কর্মরত কাজের বুয়াদের ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। যে কারনে নিজেদের কাজ এখন বাধ্য হয়ে বাসার সবাই নিজেরাই করছেন। ফলে ঘরবাড়ি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন থাকছে। ঢাকার অভিজাত এলাকার যেসব ধনাঢ্য মানুষ কখনো বাসায় নিজে এক গ্লাস পানিও ঢেলে খাননি, তারাও এখন সব কাজ নিজের হাতে করছেন। ভয় একটাই কাজের মানুষের হাত দিয়েও ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস। এটাও করেনাভাইরাসের এক বিরাট ইতিবাচক দিক। ধর্মীয়ভাবেও এই ভাইরাস মানুষের মনে খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আমাদের সমাজে কিছুকিছু ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন, যারা কখনোই যথাযথভাবে ধর্ম পালন করেন না। এমন কিছু ব্যক্তিও রয়েছেন যারা জুম্মার নামাজ, জানাযার নামাজ, ঈদের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়-সেটাও জানেন না। অথচ সেইসব ব্যক্তিরাও এখন করোনাভাইরাসের ভয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে কথায় কথায় বারবার আল্লাহর নাম নিচ্ছেন, কেউ কেউ নামাজও আদায় করার চেষ্টা করছেন। আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থায় এটাও করোনভাইরাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের একজন নন্দিত ক্রীড়াতারকা যিনি ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু মানুষ যাকে দীর্ঘদিনের পরিচয়ে আমি কখনোই কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেখিনি। তিনিও গতকাল আমার সাথে কয়েকবার টেলিফোনে করোনাভাইরাস নিয়ে আলাপ করার সময় বারবার স্মরণ করছিলেন আল্লাহর নাম এবং আমাকে সরাসরি বললেন, ‘‘আল্লাহ ছাড়া এই করোনার বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার আমি আর কোন উপায় দেখি না।’’
শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীর মানুষ এই করোনার ভয়ে এখন তাদের যার যার ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছেন। পৃথিবীর সবশক্তিশালী দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরাও করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিরুপায় হয়ে শুধুই এখন মহান সৃষ্টিকর্তার রহমত প্রত্যাশা করছেন। কয়েকদিন আগে করোনার আক্রমণে বিপর্যস্ত ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে হতাশা ও ভেঙে পড়ার সুরে টুইট করেছিলেন, ‘‘আমরা সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে মারা গেছি। আর কী করতে হবে তা আমরা জানি না। পৃথিবীর সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে। এখন একমাত্র সমাধান মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে।’’
এভাবেই আমরা যারা মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে ভুলে যাচ্ছিলাম, তাদেরকে এই করোনাভাইরাস সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ^াস আর আনুগত্য স্থাপনে সহায়তা করছে। করোনাভাইরাস আতঙ্ক রাজধানী ঢাকার মানুষের পারিবারিক জীবনধারায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ঘরে পরিবারের সকলের সহঅবস্থান, পারিবারিক বন্ধন অনেক বেশি সুদৃঢ় করছে। ঢাকার অধিকাংশ পরিবারের মানুষ যখন বাসার সবাই মিলে একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া, একসাথে ড্রইং রুমে টিভি দেখা-প্রায় ভুলতে বসেছিল; এখন করোনার ভয়ে বাধ্যতামূলক বাসায় থেকে সেই কাজগুলোই সবাই মিলে করছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। সারাক্ষন একত্রে থেকে পরিবারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এর সবই করোনাভাইরাস আতঙ্কের ইতিবাচক ফল।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকার সমাজব্যবস্থায় আধুনিকতার নামে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেখানে নিয়মশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছিল, সভ্যতা বিবর্জিত হয়ে উৎশৃঙ্খলতা চরমে উঠেছিল, সেই সমাজে এখন প্রতিটি ঘরেই নিয়ম শৃঙ্খলা, পারিবারিক বন্ধন, ধর্মীয় মূল্যবোধ আর সর্বোচ্চ সচেতনতা বিদ্যমান। যেটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে এই করোনা আতঙ্কের কারনেই।
দূষণ আর নোংরা আবর্জণার দিক থেকেও করোনা আতঙ্ক ঢাকার দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। যানবাহন চলাচল, ইটের ভাটা আর কলকারখানা বন্ধ থাকায় রাজধানী ঢাকার বাতাস এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বিশুদ্ধ ও নির্মল। ঢাকায় এখন নেই আর আগের মতো শব্দ দূষণ। এমন পরিবেশে রাজধানী ঢাকাকে অতীতে কেউ দেখেনি। নিজে পরিস্কার থাকা আর নিজের ঘরবাড়ি ও বাড়ির আঙিনা পরিস্কার রাখার ক্ষেত্রেও গত কয়েকদিনে ঢাকার মানুষদের মধ্যে যে ব্যাপক পরিবর্তন ও সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে সেটা করোনার আক্রমণ না হলে কোনদিনই সম্ভব হতো না। ঢাকার মানুষ এখন খাওয়ার বাজেট কমিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার পেছনে সময় আর অর্থ বেশি ব্যয় করছে, যেটা অতীতে কখনও করেনি।
করোনার আতঙ্কে সারা পৃথিবীর মানুষ যখন দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে, তখন বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান ডা. টেড্রেস অ্যাডানহানম গেব্রেইয়েসুস বিশ^বাসীকে করোনা মোকাবেলায় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক একটি অসাধারন ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। বাংলাদেশের সকল মানুষের উচিত মিথ্যাচারের আধুনিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত মিথ্যাচার আর গুজবে কান না দিয়ে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের এই গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও বার্তাটি মনযোগ দিয়ে দেখে তার পরামর্শগুলো গুরুত্বের সাথে মেনে চলা। আর এটা মেনে চললে করোনার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে জয়ী হওয়া অনেকটাই সহজ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।