পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হে আল্লাহ! পাপের কারণে করোনাভাইরাস দিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দিও না। হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহ ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে হেফাজত করুন। হে আল্লাহ! পবিত্র বায়তুল্লাসহ বিশ্বের মসজিদগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা মুসলমানরা সইতে পারছে না। ’তুমি আমাদের প্রতি রহম করো। হে আল্লাহ! মহামারী করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নিন। আপনার রহমত থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না। আমাদেরকে মুসজিদমুখী জীন্দেগী কুরআনমুখী জীন্দেগী দান করুন।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারাদেশের মসজিদে মসজিদে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ মোনাজাতে ইমাম ও মুসল্লিরা এসব কথা বলেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আহ্বানে জুমার নামাজ সীমিত আকারে সম্পন্ন করা হয়। গতকাল বায়তুল মোকাররমে খুৎবাহ পূর্ব বয়ন করা হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দুপুর ১২টা থেকে কিছু মুসল্লি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য উত্তর ও পূর্ব গেইটে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। ইফা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মসজিদের চতুর দিকের গেইট তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়। অজুখানা বন্ধ রাখা হয়। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মসজিদের গেইট খুলে দেয়া হলে হুরহুর করে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করেন। ১২টা ৫৮ মিনিটে জুমার আযান দেয়া হয়। ঠিক সোয়া ১টায় আযান দেয়ার পর জুমার মূল খুৎবাহ কান্নাজড়িত কন্ঠে শুরু করেন মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেম।
নামাজ শেষে মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেম প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে হেফাজতের লক্ষ্যে মোনাজাতে বলেন, হে আল্লাহ! আমাদের পাপের কারণে আমাদের ধ্বংস করে দিয়েন না। আমাদের ক্ষমা করুন। দয়া করুন। হে আল্লাহ! বাংলাদেশসহ বিশ্বাবাসিকে করোনাভাইরাস থেকে হেফাজত করুন। হে আল্লাহ! পবিত্র বায়তুল্লাহ বন্ধ মসলমানরা মসজিদ বন্ধের পরিস্থিতি সইতে পারছেন না। হে আল্লাহ! বায়তুল্লাহর দরজা খুলেদিন। মসজিদ থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না। এসময়ে উপস্থিত মুসল্লিদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়।
দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলেমদের পরামর্শে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব চলাকালে শুক্রবার জুমার জামাত মুসল্লিদের উপস্থিতি সীমিত আকারে সম্পন্ন করার জন্য আহবান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। দেশে বিভিন্ন মসজিদেও সংক্ষিপ্ত সময়ে জুমার নামাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে মুসলিম মিশন ফাউন্ডেশন জনসচেতনাতায় মুসল্লিদের মাঝে মাক্স ও করোনাভাইরাস করণীয় লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে।
নগরীর লালবাগ শাহী জামে মসজিদ, চকবাজার শাহী জামে মসজিদ, কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা মসজিদ,রসুলবাগ জামে মসজিদ দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনীতে করোনাভাইরাস থেকে হেফাজতের লক্ষ্যে বিশেষ দোয়া করা হয়। রসুলবাগ জামে মসজিদ দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনীর খতীব আল্লামা আব্দুল গণি করোনাভাইরাস মহামারীতে রাসূল (সা.) এর দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন। খতীব আব্দুল গণি এই মহামারী থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বলেন, হে আল্লাহ! আমাদের জানা অজানা গুনার জন্য করোনাভাইরাস দিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দিও না। হে মহান আল্লাহ! আপনিতো দয়ার সাগর । বাংলাদেশসহ বিশ্বাবাসিকে এই মহামারী থেকে হেফাজত করুন।
দনিয়া বাইতুল আশেকীন জামে মসজিদে বাদ জুমা মসজিদের খতীব মাওলানা মো. ফজলুর রহমান করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে পানাহ চান। তিনি এ গজব থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসির হেফাজতের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন।
মালিবাগ চৌধুরীপাড়া মাটির জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজে বয়ানের সময় করোনাভাইরাস নিয়ে আল কুরআর ও হাদিসের ভিত্তিতে সচেতনতা মূলক কথা বলেন। এ সময় দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় এবং মাক্সসহ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সামগ্রী ব্যবহার করে বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন মুসিল্লাদের। তিনি বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য বিশেষ দোয়ার করেন এবং এ সময় সারা বিশ্বে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের এ ভাইরাস থেকে আল্লাহ যেন হেফাজত করেন সে দোয়াও করেন। একই সাথে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য দোয়া করেন তিনি করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়ার আবেদন করেন আল্লাহর কাছে।
বরিশাল ব্যুরো : মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দরবারে পানাহ চেয়ে দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী জুমুআহ নামাজ আদায় করেন। বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ছাহেবগন খুতবাপূর্ব বয়ানে করোনাভাাইরাসসহ সব ধরনের বিপদ মুক্তিতে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করেন। মসজিদে জুমুআহ নামাজান্তে বালা মুসিবত থেকে রক্ষায় বিশেষ মুনাজাত করা হয়। করোনাভাইরাস সতর্কতায় মসজিদসমুহ বিশেষভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।
সিলেট ব্যুরো : নগর ও শহরতলিসহ গ্রামের পাড়া মহল্লায় মসজিদগুলোতে শুক্রবার জুমুআহ নামাজে মুসল্লির সমাগম তুলনামুলক কমই ছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় হযরত শাহজালাল রহ. ও শাহপরান রহ. মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভীড় হয় মুসল্লীদের। কিন্তু শুক্রবার ছিল ব্যতিক্রম। ছোট সুরা দিয়ে ইমাম নামাজ আদায় করেন, মসজিদের ভেতর অংশ ছাড়া বাইরের অংশ ফাঁকাই ছিল। প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী অনেকেই জুমুআহর ফরজ নামাজের আগের ও পরের সুন্নত নামাজ ঘরেই আদায় করে নিয়েছেন। শুধু খুতবা ও ফরজ নামাজের সময়টুকুই মসজিদে ছিলেন। মুসল্লিরা অনেকেই ঘর থেকে অজু সেরে জায়নামাজ নিয়ে ও মাস্ক পরে মসজিদে গিয়েছেন। তবে গ্রামাঞ্চলের মসজিদগুলোতে মুসল্লি সমাগম স্বাভাবিক ছিলো, জানা গেছে। উল্লেখ্য, পবিত্র জুমুআহর নামাজ জামায়াতে আদায় করতে সিলেটে মুসল্লিদের মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সচেতনতার স্বার্থে একই মসজিদে সবাইকে না যেতে এবং সুন্নত নামাজ বাড়িতে পড়ার পরামর্শ দেয় প্রশাসন।
এদিকে, আজ জুমুআহর ফরজ নামাজ শেষে প্রতিটি মসজিদে মুনাজাতের মধ্য দিয়ে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসল্লিরা। মুনাজাতকালে করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী চরম সঙ্কটপূর্ণ মুহুর্তের উত্তরণ কামনায় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে আকুল প্রার্থনা করেন।
বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার : জুম্মাবার কক্সবাজারের মসজিদে জুমুআহ নামাজের পর বিশেষ মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ইমাম সাহেবরা নামাজ এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করলেও নামাজের পর কান্নাকাটি করে আল্লাহর দরবারে করোনা মহামারী থেকে মুক্তি কামনা করে মুনাজাত করা হয়।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা : ফেনীর বিভিন্ন মসজিদে গতকাল বাদ জুমুআহ বিশেষ দোয়া মুনাজাত করা হয়। ফেনীর কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ, জহিরিয়া মসজিদ, পাগলা মিয়ার তাকিয়া জামে মসজিদ, কোর্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়।
ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সাইফুল্লাহ জানান, বিশেষ দোয়ার কোন নির্দেশ সরকার বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে দেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারী দুর্যোগ থেকে রক্ষায় মহান আল্লাহর দরবারে বাদ জুমুআহ বিশেষ দোয়া করা হয়।
জহিরিয়া মসজিদের খতিব মুফতি ইলিয়াছ জুমুআহর পূর্বে বয়ানে বলেন- মহান আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করে দেন এবং বিশ্ব জাহানকে হেফাজত করেন এ জন্য বেশি বেশি তওবা করতে হবে। এ ছাড়াও কোনো গুজবে কান না দিয়ে সঠিকভাবে জেনেশুনে নেক আমল করার আহবান জানান। নামাজ পড়তে আসা মুসল্লী আনোয়ার হোসেন বলেন, মসজিদগুলোতে মুসল্লীর সংখ্যা বেড়েছে।
ধামরাই (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা : ধামরাই পৌরশহরসহ উপজেলার মসজিদে মসজিদে শুক্রবার পবিত্র জুমুআহর নামাজ আদায়ের পর মুসল্লিরা বিশেষ দোয়ায় শরিক হন।
রাউজান (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : রাউজানের ৫ শতাধিক মসজিদে জুমুআহর নামাজে দোয়া করা হয়। শুক্রবার জুমুআহর নামাজে বিশেষ দোয়া করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগন। ডাবুয়া আমির চৌধুরী জামে মসজিদে খতমে খাজেগান সহকারে মসল্লিগন আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করে অঝোরে কান্নাকাটি করেন। মুনাজাত পরিচালনা করেন মসজিদের খতিব সাংবাদিক মাওলানা এম বেলাল উদ্দিন। এ ছাড়া দক্ষিণ হিঙ্গলা তৈয়বিয়া জামে মসজিদসহ রাউজানের সকল মসজিদে দোয়া মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
শরণখোলা (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা : গতকাল শুক্রবার জুমুআহর দিনে মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় করোনাভাইরাস নিয়ে খতিব ও ইমমাগণ আলোচনা করেন। নামাজ শেষে এ মহামারী থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া মুনাজাত করা হয়।
এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য জুমার দিনের তুলনায় মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিলো খুবই কম। অনেকেই মাস্ক পরে মসজিদে প্রবেশ করেন, এমন দৃশ্য যা আগে কখনও দেখা যায়নি। রায়েন্দা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি হাফেজ মাওলানা মুনিরুজ্জামান বলেন, শুধু করোনা নয়, যে কোনো ধরণের মহামারী বা দুর্যোগ থেকে বাঁচতে মহান রবের কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে হবে। বিচলিত ও আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে ধৈর্য এবং সতর্কতা অবলম্বন করলে আল্লাহ সকল মুসিবত থেকে মুক্তি দিবেন ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।