পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১০ দিনের ছুটিতে শুরু হয়নি খাদ্য সহায়তা : কর্মসূচি ফাইলবন্দি
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১০ দিনের ছুটিতে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন হতদরিদ্র পরিবার, নিম্নআয়ের মানুষ, শ্রমজীবী ও দিনমজুররা। যারা রাজধানীর বস্তিতে থাকেন এবং প্রতিদিনের রোজগারে সংসার পরিচালনা করেন তাদের দুঃখের সীমা পরিসীমা নেই। তারা না পারছেন কাজ করতে না পারছেন খাদ্য সংগ্রহ করতে। রাজধানীর অলিগলিতে দেখা যায় রিকশাওয়ালারা অলস সময় পার করছেন, যাত্রী না পেয়ে রিকশায় বসে ঘুমাচ্ছেন।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ১০ দিনের ছুটিতে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী ও দিনমজুররা। এসব মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য সকল ডিসিকে বরাদ্দসহ বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা এখনো শুরু করে নাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে সরকার।
জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভাষণে নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তার নির্দেশনা রয়েছে। তাদের ৬ মাসের খাবার এবং অর্থ সহায়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই ভাষণে। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা কার্যত এখনো আমলাদের ‘ফাইলবন্দি’ থেকে মুক্তি পায়নি। জানা যায় সারাদেশে ২৪ হাজার ১২১ মে: টন চাল এবং নগদ সাড়ে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তিন দিন পেড়িয়ে গেলেও তা এখনো অনেক সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসক বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেনি। কয়েকজন জেলা প্রশাসসের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান জেলায় যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। তবে আমরা আজ (শনিবার) খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি শুরু করব।
এদিকে ৫০ হাজার হতদরিদ্র পরিবারের জন্য এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বাস্তবে সেই খাবার এখনো কেউ পায়নি। ঢাকা উত্তরে মেয়ার ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিন হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাবে সে প্রক্রিয়ার শুরু করেছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, টাঙ্গাইল ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে এখনো নিম্নআয়ের মানুষ, হতদরিদ্র, শ্রমজীবী ও দিনমজুরদের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া কার্যক্রম শুরু করেনি লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, পাবনা, পটুয়াখালী. সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, ল²ীপুর, সিলেটে. নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা জেলায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬১ নং ওয়ার্ডের কমিশনার মো: জুম্মান মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে কোনো চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ পাইনি। আমার কাছে কোনো তালিকা নেয়া হয়নি। কারা বিতরণ করছে তাও জানি না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে ২৪ হাজার ১২১ মে: টন চাল এবং নগদ সাড়ে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ঢাকা জেলা এবং দুই সিটিতে ২১ লাখ টাকা ও ৫০০ মে: টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল। জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়াও পর অনেক জেলায় এখনো খাদ্য এবং নগদ অর্থ বিতরণ শুরু করা হয়নি। তবে ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র এবং টাঙ্গাইল একটি জেলায় গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে।
টাঙ্গাইলের প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে আমরা এ জেলায় তালিকা তৈরি কাজ শুরু করি। সে তালিকা অনুযায়ী শুক্রবার ৬০০ মে: টন চাল বিতরণ শুরু করেছি। আর প্রতিটি উপজেলা ১ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদা সুলতানা ইনকিলাবে বলেন, আমরা বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ কাযক্রম শুরু করেছি। এখনো আমার সব উপজেলায় তালিকা করছে ইউএনরা।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, এ জেলায় ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ৩৪ মে: টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। আমি সকল উপজেলায় দিয়েছি। শনিবার বিতরণ শুরু হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিতরণের সময় থাকবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম স‚ত্রে জানা গেছে, হোম কোয়ারেন্টাইন ছাড়াও হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এসেছেন ২০৩ জন। তাদের মধ্যে ১৪৪ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বর্তমানে আছেন ১৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এসেছেন ২৩ জন। একই সময়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনের জন্য ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ১৮ হাজার ৯২৩ জনকে তাৎক্ষণিক সেবা প্রদান করা যাবে। এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা দান করার জন্য ১ হাজার ১২৩ জন চিকিৎসক, ১ হাজার ৫৭৫ জন নার্স এবং অন্যান্য ১হাজার ২৮৪ জনসহ মোট ৩ হাজার ৯৮২ জন সেবাদানকারী প্রস্তুত রয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টাইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ছাড়াও করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৩৩১ জনকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। ইতোমধ্যে ২৮৪ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ৪৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনের আওতায় এসেছেন ১০ জন এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭ জন।
উত্তর মেয়রে অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ হাজার হতদরিদ্রর কাছে খাবার পৌঁছে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাহায্য করছে ‘বিডি ক্লিন’ নামের সংগঠনটি। প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য তৈরি এই প্যাকেটে থাকছে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, ১ কেজি আলু এবং ১টি সাবান। খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে মেয়রের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান বিডি ক্লিন। মেয়র আতিক তার এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য সুহৃদ ও সামর্থ্যবানদের প্রতি আহŸান জানান। দুস্থদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া এই কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়বে। তবে এখনো সরকারি বরাদ্দ থেকে বিতরণ করা হয়নি বলে মেয়রের অফিস স‚ত্রে জানা গেছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিম্নআয়ের ৫০ হাজার হতদরিদ্র পরিবারের জন্য এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরীর গুলিস্তানে জীবাণুনাশক ছিটানোর গাড়ি পরিদর্শনে এসে এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি উপস্থিত শতাধিক হতদরিদ্র রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ করেন। এছাড়া আগামীকাল শনিবার থেকে খাবার সামগ্রী বিতরণ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
সাঈদ খোকন বলেন, অনেক আগ থেকে আমাদের দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমি আমার সম্মানিত নগরবাসীদের আহŸান জানাব তারা যেন বাড়ি থেকে বের না হন। পাশাপাশি দেশের বিত্তবান সবাইকে আহŸান জানাব তারা যেন এই দুর্দিনে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।