পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719402293](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের বস্তিগুলোর নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। ছোট আয়তনের টিন ও বাঁশের তৈরি ঘরে তিন থেকে পাঁচজন বাস করেন এই বস্তিবাসীরা। করোনা ঠেকাতে হোম কোয়ারেন্টাইনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এর অনেক কিছুই তাদের মেনে চলা সম্ভব নয়। পরিবহন, বাসাবাড়ি বা দিনমজুরের কাজ করা সীমিত আয়ের এসব মানুষকে জীবন-জীবিকার কারণেই বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে। এ কারণে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন তারাই। বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বস্তিবাসীর সংখ্যা বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ১৯৯৭ সালের পর বস্তিশুমারি হয়েছে ২০১৪ সালে। সরকারি হিসাবেই এই সময়ের মধ্যে বস্তির সংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশে কোনো পরিকল্পনা যখন করা হয় তখন এই বিশাল জনসংখ্যার কথা খুব একটা মাথায় রাখা হয় না।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের বস্তিগুলোর নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় রয়েছে কিন্তু তাদের কাজে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। বস্তির মানুষের মৌলিক চাহিদা প‚রণে দায়িত্ব কার, কাজগুলো কিভাবে হবে? উন্নয়ন পরিকল্পনায় এদের ধরা হয় না। তাদের সেবা নিশ্চিত করবে কে? তিনি বলছেন, বস্তিতে বিভিন্ন সেবা পেতে তারাও কিন্তু অর্থ খরচ করে। কিন্তু সেটি সরকারের খাতায় হিসাব হয় না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ বস্তিশুমারি ও ভাসমান লোক গণনা তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বস্তির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৩৫। বস্তিবাসী ও ভাসমান খানা রয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬১টি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৫৬টি। পৌরসভা এলাকায় আছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৪৫টি। ৩২ হাজার ৯৬০টি রয়েছে অন্যান্য শহর এলাকায়।
বিবিএসের পরিসংখ্যানে বলা হয়, বস্তিবাসী ও ভাসমান খানাগুলোর গড় সদস্যসংখ্যা ৩ দশমিক ৭৫ জন করে। এসব বস্তির বাসিন্দা ও ভাসমান মানুষগুলোর অনেকেরই করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে যথেষ্ট আতঙ্ক রয়েছে। কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে তারা সেটাও জানেন না। এছাড়া উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে হাতুড়ে ও প্রতারকদের ধোঁকায় পড়ার ঝুঁকিও তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
যেখানে ছোট আয়তনের ঘিঞ্জি ঘরগুলোয় গাদাগাদি করে বসবাস করছে কয়েকজন মানুষ, সেখানে হোম কোয়ারেন্টাইনের কথা অর্থহীন। ফলে এসব বস্তি এলাকায় কেউ আক্রান্ত হলে নিঃসন্দেহেই অত্যন্ত দ্রæতগতিতে ছড়িয়ে পড়বে করোনা। আর করোনার প্রভাবে অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের মাত্রা বাড়লে এর প্রথম শিকারও হবে তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, সাধারণ মানুষের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষেরা। যদিও এটার জন্য তারা কোনোভাবেই দায়ী নয়। এ অবস্থায় আগে থেকেই তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো আরো শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন ছিল। সুরক্ষা উপকরণগুলো আরো দ্রæত তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আবার বিদেশফেরতরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। দরিদ্র মানুষগুলোকে তাদের সংস্পর্শে আসাটা রোধ করতে হবে। বিদেশফেরতরা হোম কোয়ারেন্টাইন ঠিকমতো না মানায় এখন উদ্বেগের অনেক কারণ। এটা যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে সাধারণ মানুষও ভালো থাকতে পারবে। শুধু ছিন্নমূল নয়, দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে নজরদারি আরো বাড়াতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষদের এসব ঝুঁকি সিটি করপোরেশনগুলোর চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে। কারণ দেশের বস্তি ও ভাসমান স্থাপনাগুলোর মধ্যে ৯ হাজার ১১৩টি বা প্রায় ৬৫ দশমিক ৪০ শতাংশ রয়েছে সিটি করপোরেশন এলাকায়। এসব বস্তিবাসীর করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করা এ মুহূর্তে বেশ মুশকিল। এছাড়া দেশে করোনা শনাক্তকরণ কিটের সংখ্যাও অপ্রতুল। সব মিলিয়ে বস্তিবাসীদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি বেশ বিপজ্জনক। বস্তি ও ভাসমান এলাকায় বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে করোনা সচেতনতা বাড়াতে আলাদাভাবেই পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ স্বল্প আয় ও এক ব্যক্তির আয়ের ওপর পরিবারের নির্ভরশীলতা বেশি হওয়ায় এমন কেউ আক্রান্ত হলেও সেটা সহজে স্বীকার করতে চাইবে না। এক্ষেত্রে যেকোনো উপায়ে কোয়ারেন্টাইন করা সম্ভব হলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবিকা বন্ধের উপক্রম হবে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ ইনকিলাবকে বলেন, একদিকে আর্থিক অসঙ্গতি, অন্যদিকে বসতবাড়িতে আবাসন সঙ্কট এ দুটোর প্রভাবে বস্তিবাসীরা উচ্চ ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। তবে শুধু সতর্কতামূলক কার্যক্রমে কতটুকু কাজ হবে, সে বিষয়ে আমি বেশ সন্দিহান। তাই এ শ্রেণির মানুষকে সচেতন করতে হলে সবার আগে কমিউনিটিভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, একটা নির্দিষ্ট সীমার পর বল প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্র্যাক এরই মধ্যে রাজধানীর ৩০০টি বস্তিতে কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের যেমন সচেতন করছে, তেমনি আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, হোম কোয়ারেন্টাইন ছাড়াও হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে এ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এসেছেন ২০৩ জন। তাদের মধ্যে ১৪৪ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বর্তমানে আছেন ১৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এসেছেন ২৩ জন। একই সময়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনের জন্য ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ১৮ হাজার ৯২৩ জনকে তাৎক্ষণিক সেবা প্রদান করা যাবে। এসব প্রতিষ্ঠানের সেবাদান করার জন্য ১ হাজার ১২৩ জন চিকিৎসক, ১ হাজার ৫৭৫ জন নার্স এবং অন্যান্য ১ হাজার ২৮৪ জনসহ মোট ৩ হাজার ৯৮২ জন সেবাদানকারী প্রস্তুত রয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টাইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ছাড়াও করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৩৩১ জনকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। ইতোমধ্যে ২৮৪ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ৪৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনের আওতায় এসেছেন ১০ জন এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নি¤œ আয়ের কারণে নানা ধরনের অসুখ ও পুষ্টিহীনতার নানা চিত্র রয়েছে বস্তিবাসীদের মধ্যে। আবার শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতিও বেশ খারাপ। ফলে করোনার প্রভাব নতুন করে তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।