পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৃথিবী এখন বিশ্রামে। গ্রহবাসী শত কোটি মানবজাতির মাঝে আতঙ্ক, অস্থিরতা। করোনাভাইরাস। এই একটি চর্মচোখে অদেখা মহামারী জীবাণুর কাছেই মানবজাতি আজ অসহায়? দুইশ দেশ কাবু? মহামারী-মড়ক অতীতেও হানা দিয়েছে। দাপট কখনও দেখেনি দুনিয়াবাসী। তবে আল্লাহতায়ালা-খোদা-সৃষ্টিকর্তায় বিশ^াসী মানুষ বেশিরভাগই স্থির, শান্ত ও বিপদাপদে ধৈর্য্যশীল। আকাশপানে তাকিয়ে শান্তি পানাহর পথে ফয়সালা খুঁজছেন।
মানুষের নিষ্ঠুরতা বর্বরতা যুদ্ধ-অরাজকতা, অসভ্যতার বিষবাষ্প ও আবর্জনায় দাঁড়িয়ে অতিষ্ঠ এ পৃথিবী মানবজাতিকে বলছেÑ তুমিও নাও বিশ্রাম। বিরাম নাওÑ মানুষ হও। ‘সৃষ্টির সেরাজীব’ হওয়ার যোগ্যতা প্রমাণের পরীক্ষায় হও উত্তীর্ণ।
সমাজবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, অপরাধ বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদদের এ নিয়ে অভিমত জানতে চাইলে গতকাল ইনকিলাবকে তারা বলেন, বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাসের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও ফলাফলগুলো বেশ তাৎপর্য বহন করছে। মহাদুর্যোগ পরিস্থিতির মধ্যে চলমান সময়ের বাংলাদেশে দৃশ্যমান এর দুইটি রূপ।
এক. দেশের অনেক মানুষই এখন ইতিবাচক জীবন-সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি। যা কিছুদিন আগেও ছিল না। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন যে যার সাধ্যমতো বিপদ-মুসিবতে পরস্পরকে আগলে রাখছেন। পাড়া-প্রতিবেশীদের হক পালনের দিকেও সুনজর দিয়েছে। মানবিক আচরণ ও মূল্যবোধ চর্চায় আগ্রহ জেগে উঠছে সমাজ-পরিবারে। ধর্মমুখী তথা আসমানমুখী হচ্ছেন ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শিশু-বৃদ্ধ সর্বস্তরের মানুষ যাদের বলা হয় নিরীহ আমজনতা। তাদের মাঝে জাগছে খোদাভীতি এবং পরকালের মহা আজাবের ভয়-শঙ্কা। পৃথিবীজুড়ে মহাবিপদ সঙ্কেতের আবহ যেখানে চলমান এবং তার শেষ কোথায় তা কেউ বলতে পারে না- এ অবস্থায়ও ওইসব ক্ষেত্রে একটা শান্তির বাতাবরণ সহজেই চোখে পড়ে।
দুই. বিশ^মহামারী দুযোগের মতো চরমতম ঘোর বিপদের দিন-রাতগুলোতে ওই চিত্রের বিপরতীও রয়েছে ঢের। হুজুগের আড্ডাবাজি, ঘোরাঘুরি, গুজব-গীবত ছাড়ানো, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করেই বিষবাষ্প ছড়ানো, পাড়ায় পাড়ায় অলিগলিতে ঘোঁট পাকিয়ে মাস্তানি ও রঙবাজির দৃশ্যগুলো শান্তিপ্রিয় মানুষের চোখে পড়ছে। তাছাড়া মাহে রমজান ও পবিত্র শবে বরাত সামনে রেখে অতিলোভি মজুদদারি ওমুনাফাখোরিদের হরিলুটের নেশা বন্ধ হয়নি। আবার অস্থির হুজুগে একশ্রেণির ক্রেতা অতঙ্কের বশে বাজার থেকে কয়েকগুণ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র, ভোগ্যপণ্য, এমনকি পচনশীল আলুর মতো খাবার কিনে নিয়ে বাড়িঘরগুলো পরিণত করেছেন
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল প্রশাসন থেকে শুরু করে সমগ্র দেশবাসীর কাছে এখন সবচেয়ে বড় বিপত্তি ও মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি বিদেশফেরত অগণিত প্রবাসী যারা ১৪ দিনে ঝুঁকিমুক্ত হওয়া প্রশ্নে হোম কোয়ারেন্টাইন নির্দেশের বাইরে রয়ে গেলেন।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ (পিএইচডি- মেডিসিন ও নিউরো মেডিসিন) গতকাল ইনকিলাবকে স্পষ্টতই বলেছেন, ‘বিদেশফেরতদের ১৪ দিন অন্তত হোম কোয়ারেন্টাইন অর্থাৎ সঙ্ঘনিরোধ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। কাজেই কোথাও কারও অবহেলায় অপরজনের ভাইরাস সংক্রমণে আছে ঝুঁকি। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ঘরে ঘরে বসবাস নিশ্চিত থাকা চাই। রমজানের সময়ের এতেকাফের মতো জীবনযাপনেই আছে সমাধান। তবে কারও সঙ্গে নয়, তা একাকী এতেকাফ। যা বিশ^নবী মুহাম্মদ (সা,) ১৪ শ’ বছর পূর্বেই বাস্তব জীবনে দেখিয়ে গেছেন। তাছাড়া মহামারী প্লেগ থেকে জীবন বাঁচানো তাগিদে নবীজী (সা.) হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনাও দিয়েছেন’।
করোনা বৈশি^ক মহামারীতে শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্য সচেতন থাকার তাগিদ দিয়ে অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, মনোবল অটুট রাখতে হবে। এ বিপর্যয়কর সময়ে জীবনযাপন, আচার-আচরণগত সামগ্রিক কর্মকাÐে পরিবর্তন আনতে হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (সরকারের সচিব) মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, জনগণের মাঝে আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পরিবারের জন্য কী কী সমস্য তা নিবিড়ভাবে দেখছে। তিনি জানান, এহেন চরম পরিস্থিতির মধ্যেও মাদক ব্যবসায়ীরা থেমে নেই। দুষ্টচক্রে কখনই পরিবর্তন আসেনা। মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড, গাজী সালেহ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আমি গত ১৫ মার্চ ভারত থেকে ফিরেই স্বেচ্ছায় নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি এবং তা পুলিশকেও জানিয়ে রেখেছি। কিন্তু চারদিকের যা খবর আসছে তাতে বিদেশফেরত কজন হোমে গেছেন? সামাজিক বিচ্ছিন্নতার জন্য সরকারি প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। সবার উচিৎ যুগোপযোগী বিজ্ঞানময় ধর্ম অনুসরণ ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।