পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে দীর্ঘ দেড়শো বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি আর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশের বাঁশির রাজ্যে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলাসহ সিঙ্গাপুর, ব্রিটেন, জাপান, কানাডা, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ফ্র্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে দীর্ঘদিন সুখ্যাতির জায়গাটি ধরে রাখলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে করুণ সুর বেজে ওঠেছে কুমিল্লার শ্রীমদ্দির বাঁশিতে।
হোমনা উপজেলা সদর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণে সবুজ গাছ-গাছালিতে ঘেরা ছোট্ট সুন্দর একটি গ্রাম শ্রীমদ্দি। বাঁশিতে জীবিকা নির্বাহ ঘিরে ছোট্ট এই গ্রামে সনাতন ও মুসলিম শত পরিবারের সহাবস্থান অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে যুগ যুগ ধরে সুরের মায়াজালে আবদ্ধ রেখেছে।
পূর্বপুরুষের পেশা বুকে ধারণ করে গ্রামের শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষের হাতে তৈরি বাঁশিতে সুর তুলছে দেশ-বিদেশের বংশীবাদকরা। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বাঁশি সমৃদ্ধ গ্রামটিতে। রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা করোনার কারণে শ্রীমদ্দিতে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। এছাড়া হোমনা উপজেলায় সম্প্রতি তিন শতাধিক লোক করোনা আক্রান্ত কয়েকটি দেশ থেকে গ্রামের বাড়িতে আসায় ব্যবসায়ীরা সংক্রমণের ভয়ে আসছে পহেলা বৈশাখের মেলার বাজার ধরার জন্যও শ্রীমদ্দি গ্রামে পা রাখছেন না। ফলে বাঁশি তৈরিতে জীবিকা নির্বাহ করা শতাধিক পরিবার এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।
নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররাও সারা বছরই বাঁশি তৈরিতে মগ্ন থাকেন। বাঙলা নববর্ষের বৈশাখ ঘিরে ব্যস্ততাও বাড়ে শ্রীমদ্দির বাঁশি কারিগরদের। কিন্তু এবার আগের সেই চিরচেনা দৃশ্যে করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে। পহেলা বৈশাখে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মেলায় বাঁশির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় ঠিকই। কিন্তু করোনার কারণে এসব জেলার ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই শ্রীমদ্দিতে বাঁশির আগাম বুকিং দেননি।
করোনায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীদের অনেকেই বাঁশি নিতে আগ্রাহ দেখাচ্ছেন না। আবার যারা মাস দুয়েক আগে বুকিং দিয়েছেন তারাও বুকিং ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত কয়েকটি দেশ থেকে হোমনায় বসবাসকারি অন্তত তিন শতাধিক প্রবাসী ফেরার খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় বাঁশি ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা বর্তমান পরিস্থিতিতে চুপচাপ রয়েছেন।
করোনায় থেমে গেছে বাঁশির সুর। আর সে কথাই উল্লেখ করে শ্রীমদ্দি গ্রামের কারিগর ও বিক্রেতা লিটন পাল, যতীন্দ্র, রীনা রানী, ইব্রাহিম, কামাল হোসেন, শওকত, আবদুল খালেক, ফিরোজা বেগম, শফিকুল ইসলাম, নাসরিন বেগম, রেনু আক্তার, শাহিনুর আক্তার, মাহমুদ, সুস্মিতা রানীসহ আরো অনেকে জানান, বিভিন্ন স্থানের বৈশাখী মেলা, হোমনার মিরাশের মেলা, শ্রীমদ্দির কালীবাড়ীর মেলা, কচুয়ার সাচারের রথমেলা, ধামরাইয়ের রথমেলা, মতলবের বেলতুলীর লেংটার মেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খরমপুরের মেলা, চট্টগ্রামের জব্বারের বলী খেলা, নাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান, সাতক্ষীরার পূজার মেলা, কুষ্টিয়ার লালন মেলা ও গাজীপুরে মৌসুমী মেলায় শ্রীমদ্দির বাঁশি স্থান পেয়ে থাকে। এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকাসহ ২৫টি দেশে তাঁদের হাতে তৈরি বাঁশি রফতানি হয়ে থাকে।
কিন্তু এবার বৈশাখি মেলা ঘিরে আশানুরূপ অর্ডার মেলেনি। আর রাজধানী ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী যারা এখান থেকে বাঁশি অর্ডার করে বিদেশে রফতানি করেন তারাও করোনা পরিস্থিতিতে বুকিং বন্ধ রেখেছেন। বাঁশি রফতানি করা ব্যবসায়ীরা বলেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা বিদেশে চালান পাঠাবেন না।
শ্রীমদ্দির ওইসব কারিগর ও বিক্রেতারা আরো বলেন, মাস দুয়েক আগ থেকেই তারা বাঁশি তৈরির উপকরণ কিনে দেশ-বিদেশের জন্য হাজার হাজার বাঁশি তৈরির পেছনে অর্থলগ্নি করেছেন। সামনেই বৈশাখ, কিন্তু ব্যবসায়িদের সাড়াশব্দ নেই। রফতানিকারকরাও চুপচাপ।
এমন পরিস্থিতে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা শ্রীমদ্দির বাঁশি ব্যবসায়ীরা। তারপরও প্রতিদিন অল্প পরিমানে হলেও বাঁশি তৈরি হচ্ছে গ্রামটিতে। বাঁশিনির্ভর পরিবারগুলোর আশা, পহেলা বৈশাখের আগে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্রেতারা ফিরে আসবেন তাদের দুয়ারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।